-আপু আমি খুবই সরি । আমি একদমই বুঝতে পারি নি আপু ! সরি !
মানসুভা কিছুটা সময় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো । একবার ইচ্ছে হল কঠিন কয়েকটা কথা বলে কিন্তু বলতে পারলো না । ছেলেটা যা করেছে সেটা হয়তো ইচ্ছে করে নি । কিংবা এতো ভেবে চিন্তে করে নি । মানসুভা বলল, আচ্ছে যাও ।
-আপনি ছবি গুলো ডিলিট করে দিচ্ছি আমি !
-আচ্ছা দরকার নেই । যেমন আছে থাকুক !
-জি আচ্ছা!
ঘটনা তেমন কিছুই না । গতদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে মানসুভার দুই হাতে অনেক জিনিস পত্র ছিল, সব ওর আর্টের জিনিসপত্র । দুই হাতে অনেক জিনিস পত্র নিয়ে হাটছিলো তখনই অনুভব করলো যে ওর পায়ের জুতার ফিতে খুজে গেছে । একটু হাটতে অসুবিধা। হাতের জিনিস পত্র গুলো রেখে জুতার ফিতা বাঁধবে হলে সব কিছু মাটিতে নামিয়ে রেখতে হবে । সে আরেক ঝামেলা । কি করবে ভাবতে তখনই রাফার আওয়াজ শুনতে পেল । রাফা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল, আমি বেঁধে দিচ্ছি ।
এটা মানসুভার কাছে একটু নতুন ব্যাপার । ক্লাসে রাফা নিশ্চুপ থাকে । রাফার সাথে ওর বন্ধুত্ব বেশ কিছু দিনের । তবে সব সময়ই রাফা কম কথা বলে । একটা দুরত্ব রেখে চলে । তাই মানসুভা একটু অবাক হল । রাফা ধীর পায়ে এগিয়ে এল ওর দিকে । তারপর ওর পায়ের জুতার ফিতাটা বেঁধে দিল । মানসুভার কাছে ব্যাপারটা চমৎকার লাগলো ।
এই দৃশ্যটাই একজন জুনিয়র তার ক্যামেরাতে তুলে ধরলো । যা সামসুভা কিংবা রাফা, দুইজনের কেউ ই জানতো না । ছবিটা তুলে সে ক্যাম্পাসের গ্রুপে পোস্ট করলো । সাথে সাথে সবাই যেন ঝাপিয়ে পড়লো ছবিটার উপর । কেউ বলতে লাগলো ছেলে হয়ে কিভাবে মেয়েদের জুতা বেঁধে দিল কেউ বলতে লাগলো কি চমৎকার কাপল । ছেলেটা কি চমৎকার ! কত কেয়ারিং ! আরও কত কি !
মানসুভা সেই ছেলের ইনবক্সে খানিকটা বকা ঝাকা করেছিলো গতদিন তার অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলার জন্য । তাই আজকে সে সরি বলতে এসেছিলো । তবে মানসুভার কেন জানি ছেলেটার উপর আর রাগ হল না । সত্যি বলতে ছবিটা আসলেই চমৎকার হয়েছিলো । সত্যিই মনে হচ্ছিলো যেন রাফা আর ও কাপল । যত্ন নিয়ে ওর পায়ের জুতার ফিতা বেঁধে দিচ্ছে ! ছবিটা মানসুভা নিজের মোবাইলে সেভ করে নিয়েছে । ওর স্কেচের হাত বেশ ভাল । নিজে সেই ছবি দেখে একটা ছবি দাড় করার চেষ্টা করছে বেশ কিছু সময় ধরে । তখনই রাফা ওর পাশে এসে বসলো ! মানসুভা নিজের আঁকা নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে খুব একটা লক্ষ্য করে নি । রাফা ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, সবাই আমাদের কাপল ভাবছে । দেখেছো ?
মানসুভা একটু চমকে গেল । ও নিজের স্কেচ টা লুকাতে চাইলো কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে । রাফা সেটা দেখে ফেলেছে । মানসুভা বলল হ্যা ছেলেটা আসলে বুঝতে পারে নি ।
রাফা বলল, আমার এক কাজিন আমাদের ক্যাম্পাসে পরে । বায়োলজিতে । ও গ্রুপে কাল ছবিটা দেখেছে । যদিও আমার চেহারা খুব একটা বোঝা যাওয়ার কথা না কিন্তু সে ঠিকই আমাকে চিনতে পেরেছে !
-তারপর ?
-তার আর কি পর ? বাসায় খবর চলে গেছে !
-সে কি !
রাফা হাসলো ! বলল, আরও ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে আমার মা তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে । আমি নাকি অসামাজিক এক জীব আমার যে গার্লফ্রেন্ড হতে পারে এটা নাকি অবিশ্বাস্য !
মানসুভা হাসলো । বলল, এটা তো ঠিকই । মিথ্যা তো বলে নি । সারা দিনে কটা কথা বল তুমি !
-এতো কথা বলে কি লাভ বল ! বেশি কথা বললে বেশি আয়ু নষ্ট হয় !
-এতো দিন বেঁচে থেকে কি করবে শুনি ?
রাফা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । মানসুভা বলল, সত্যিই কি যেতে বলেছে?
-হ্যা । আমার মনে হয় আমার গার্লফ্রেন্ডের ভুমিকাতে কদিন অভিনয় করেই ফেলো । দেখো কেমন লাগে । ট্রায়াল পিরিয়ড বলতে পারো ! যদি পছন্দ হয় তারপর না হয় পার্মানেন্ট ব্যাবস্থা করা যাবে !
মানসুভা কি বলবে খুজে পেল । দুনিয়াতে সম্ভবত এই প্রথম কেউ কাউকে এমন ভাবে প্রোপোজ করলো !
মানসুভা বলল, আমি ভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করতে বসেছি যে ট্রায়াল দিতে হবে ?
রাফা বলল, প্রেম ভালবাসা ভাইরাসের মত ভয়ংকর । যদি সঠিক ভাবে ভ্যাক্সিন না প্রয়োগ করা যায় তাহলে জীবন ছাড়খাড় হয়ে যায় । সো আগে ট্রায়াল প্রিয়ড চলুক ! যদি কার্যকর হবে তবেই এপ্রুভ হবে !
মানসুভা হেসে ফেলল । তবে ব্যাপারটা ওর কাছে খারাপও লাগলো না । বলল, ওকে চলুক ট্রায়াল পিরিয়ড !
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।