আজ এই বৃষ্টিতে

244 21 3
                                    

নীরার বৃষ্টি সব সময় ভাল লাগে । ছোট বেলায় বৃষ্টি হলেই বাবা মায়ের চোখ রাঙানী ঊপেক্ষা করেই বৃষ্টিতে ভিজতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই বৃষ্টিতে ভেজার পরিমানটা কমে এসেছে অনেক । এখন কালে ভাদ্রে বৃষ্টিতে ভেজা হয়।

আজ সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে । ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে কিছু সময় আগে। মফস্বল শহরের এই এক সমস্যা । একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ অফিসের লোক জন যেন অযুহাত পেয়ে বসে । বিদ্যুতের সরবারহ বন্ধ করে দেয় । নীরা হাতের কাজ গুলো শেষ করে বারান্দায় বসে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । সব কিছু আলোকিত করে দিচ্ছে । সেটা দেখতে বেশ ভাল লাগছে । এমনই এক বিদ্যুৎ চমকে দেখতে পেল মামুন রিক্সা থেকে নামছে। গেটটা খোলা ছিল না । সেটা খুলতে একটু দেরি হয়ে গেল । গেট থেকে বাসা পর্যন্ত আসতে আসতেই ভিজে গেল অনেকটা । গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে বেশ কিছুটা উঠোন । তারপর মূল বাড়িটা ।

নীর হাতে একটা তোয়ালে নিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেল । ভেবেছিল দরজাতে থাকতেই মামুন তোয়ালেটা হাতে নিবে । কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মামুন সেটা হাতে নিল না । বরং মানিব্যাগ আর মোবাইল টা নীরার হাতে দিল । জুতো জোড়া খুলে রাখলো এক পাশে । কোমর থেকে চামড়ার বেল্টাও খুলে নীরার হাতে দিলো। তারপর ওকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই আবারও বৃষ্টিতে নেমে গেল । নীরা কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মামুনের দিকে ।

মানুষ হিসাবে মামুন খুবই চুপচাপ স্বভাবের । বাড়তি কথা বলে না একটাও । নীরার সাথে ওর বিয়ের মাত্র মাস তিনেক হয়েছে । এতো দিনে নীরা মামুনকে রোবট টাইপের মানুষই মনে করতো যে কবিতা ভালবাসে না, গান ভালবাসে না, বৃষ্টি ভালবাসে না । কিন্তু এখন চোখের সামনে মামুনকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে নীরার খানিকটা দ্বিধা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ।

নীরা কাজের মেয়েকে ডাক দিয়ে হাতের জিনিস পত্র গুলো দিয়ে বাড়ির চৌকাঠের উপরেই দাঁড়িয়ে রইলো । মামুনের বৃষ্টিতে ভেজা দেখতে ওর ভাল লাগছে । তারপরেই সব থেকে অবাক করা ঘটনাটা হ্ল । হঠাৎ মামুন একেবারে চৌকাঠের কাছে চলে এল । নীরা ভেবেছিল হয়তো মামুনের ভেজা শেষ । কিন্তু মামুন ওর সামনে এসে দাড়ালো । তারপর ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে বৃষ্টির ভেতরে নিয়ে গেল । নীরা প্রথমে কিছু সময় বুঝতেই পারলো না কি হল । ঠান্ডা একটা পানির স্রোত ওর পুরো শরীর মনকে ভিজিয়ে দিল । কিছু সময়ের মাঝেই ও একেবারে ভিজে একাকার হয়ে গেল । মুখ দিয়ে কেবল বলল, এই কি করছো ?

মামুন কোন কথা বলল না । মামুন এখনও নীরার হাত ধরেই আছে । সে হাটতে শুরু করলো । সাথে নীরাও গেট দিয়ে ওরা বাইরে বের হয়ে এল । দুজনের পা খালি । খালি পায়ে পিচের উপরে দাড়াতেই নীরার সেই ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল । কিছু সময় সে সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । মামুন তখনও ওর হাত ধরেই রেখেছে । মামুন বলল, চল ঐ ব্রিজটা পর্যন্ত যাই ।

নীরা বলল, আরে এতো দূর মানুষ দেখলে কি বলবে?

-কি বলবে শুনি? আমার বউ আমি বউ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে কার কি?

মামুন আমার বউ কথাটা এমন ভাবে বলল যে নীরার হাসি চলে এল । সেই সাথে একটা মন ভাল করার অনুভূতিও হল খুব । নীরা বলল, তুমি যে বৃষ্টি পছন্দ কর, বল নি তো।

-আমি তোমাকেও অনেক পছন্দ করি । বলি নি তো কোন দিন । নিজের পছন্দের কথা গুলো আমি ঠিক বলতে পারি না ।

নীরা এক ভাবেই মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো । বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে সেই চোখে নীরা এক অদ্ভুত নেশা দেখতে পেল কেবল । এই নেশা সে আগে কোন দিন লক্ষ্য করে নি । কি আশ্চর্য্য ! এই বৃষ্টিতে এই ভাবে না ভিজলে হয়তো কোন দিন সেটা জানাও হত না !

নীরা হঠাৎ মামুনকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর ফিসফিস করে বলল, আজ থেকে আর কিছু বলতে হবে না । আমি সব বুঝে নেব । বুঝেছো?

আস্তে আস্তে ওরা এগিয়ে চললে ছোট ব্রিজটার দিকে । আজকে এই বৃষ্টিতে ওদের সম্পর্কটা যেন আরও নতুন কোন মাত্রা পেয়ে গেছে । নতুন কোন ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে । ভালবাসা গুলো হয়তো এইভাবেই সৃষ্টি হয় !

অনুগল্পঃ আজ এই বৃষ্টিতে 

পরমানু গল্প গুচ্ছWhere stories live. Discover now