কাল থেকে সারাদিন একটাও মেসেজ করেনি রুদ্র। প্রতিদিন রাত্রে আমাদের ঘন্টা দুয়েক কথা হয়, সারাদিন ব্যস্ততার কারনে কথা হয়ে ওঠে না। তাই শুধু রাত্রেই যেটুকু হয়, অথচ আজ তার কোনো মেসেজই পাইনি। বলা ভালো আমার মেসেজের রিপ্লাই পাইনি। সমস্ত সোস্যাল মিডিয়া একাউন্টে লাস্টসিন থাকছে মোটামুটি দশ মিনিটের এদিক ওদিক, অথচ কোনো রিপ্লাই নেই। ভেবেই কেমন চিন্তা হচ্ছে, অবিশ্বাসের চিন্তা নয়, যদি হুট করে ওর শরীর খারাপ হয় তখন? এত দূরে আছি, আমি তার সাথে দেখা করারও সু্যোগ পাবোনা। চিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে। একটু জল খেয়ে আবার একটা মেসেজ করলাম "শরীর ঠিক আছে তোর?" মেসেজ ডেলিভার্ড অথচ....
আমাদের তিন বছরের সম্পর্ক, ক্লাস টুয়েলভ থেকে এখন দুজনেই কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, একই স্কুলে পড়লেও এখন কলেজের সূত্রে দুজন আলাদা জায়গায়। সে পড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং আর আমি ইংলিশ লিটারেচার। দুজনেই যদিও সায়েন্স স্টুডেন্ট ছিলাম তারপর যে যার বিষয় নিয়ে এখন কলেজে পড়ি। সম্পর্ক আমাদের মধ্যে খুব ভালোই চলছে, দুজনেই দুজনের সাথে খুশি, শুধু মাঝেমধ্যে একটু রাগারাগি হয়, যেটা খুবই স্বাভাবিক। তাই হঠাৎ করে রুদ্র যে রাগ করে অনলাইন আসবে না, তেমনটা নয়। তাই জন্যই চিন্তাটা বেশি হচ্ছে। এই করতে করতে বেজে গেল রাত্রি এগারোটা। লাস্ট সিন দশটা ছাপান্ন, কোনো রিপ্লাই নেই। থাক আর অপেক্ষা করে লাভ নেই, ফোন রেখে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। কি অবস্থায় আছে জানিনা, যদি কিছু হয়? বারবার ফোন খুলে চেক করছি, অথচ সেই একই জিনিস।
ঘুম ভাঙল হঠাৎ সকালে, সকাল সাতটা বাজে এখন। কাল যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। তাড়াতাড়ি ফোন খুলে দেখি দুটো নোটিফিকেশন। রুদ্র মেসেজ করেছে। প্রথমটা, "সরি আমি একটু মামাবাড়ি এসেছিলাম হঠাৎ করে, তাই কাল আসতে পারিনি", দ্বিতীয়টা, " সরি ভাই"। আমার কুড়িটা মেসেজের রিপ্লাই ওর এই দুটো মেসেজ। আবার জিজ্ঞেস করলাম, "তোর শরীর ঠিক আছে? তুই যে আসতে পারবিনা সেটা আমায় জানাবি তো একবার।" সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটতে কাটতে রাত্রে যখন আমাদের কথা বলার সময়, তখন রুদ্র অনলাইন এসেছে। ও জানিয়েছে শরীর ঠিক আছে, কিন্তু বাকিটা জানাতে পারেনি কারন ওর কাছে ফোন ছিলনা। লাস্ট সিন এর কথা তোলায় বলল, "দেখ সবসময় সবকিছু জানানো যায়না। হ্যা আমার ভুল হয়েছে, কিন্তু এটা অতোটাও বড়ো কিছু নয়।" আমি বললাম শুধু, "আচ্ছা রুদ্র, এরকম কখনো হয়েছে যে আমি তোকে কিছু না জানিয়ে সারাদিন অফলাইন? আমায় জানানোর জন্য যে তোর কাছে এক মিনিটও সময় ছিল না, এটা কি সম্ভব? আমি টেনশনে ছিলাম রুদ্র। তুই সারাদিনে একবারো ভাবলি না আমার কথা?" সরি বলেই কনভার্সেসন শেষ হল, তবুও আমার মনে ওই একটাই প্রশ্ন, একটা মানুষ যে এতবার অনলাইন আসতে পারে, সে একটা রিপ্লাই দিতে পারেনা? আমি কি এরকম কিছু করেছি যার জন্য ও এই ব্যবহার করছে? কই আমি তো কখনো না জানিয়ে অফলাইন থাকিনা। তাহলে ও কেন এমনটা করল? আমার ওভার থিংকিং এর সমস্যা আছে, তাই নিজের ভাবনার হাল ধরে রোজকার কাজে মন বসালাম। অথচ ঠিক কিছু সময় পরপরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে জিনিসটা। রাত্রে কথা হওয়ার সময় ও আমায় বলল, "তোকে একটা কথা বলব আরাত্রিকা? আমার না তোর সাথে কথা বলতে লো ফিল হয়, মানে দেখ আমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, আমার বন্ধুরাও তাই, ওরা যখন আমায় জিজ্ঞেস করে তোর কথা, আমার বলতে খারাপ লাগে যে তুই জেনারেল লাইনের স্টুডেন্ট।" কথাটা শুনে একটা জোর ধাক্কা খেলাম, আমি কখনোই ভাবিনি যে ও আমায় নিয়ে এরকম ভাবনা রাখে। চোখের জল থামছে না, তাও কিছু না বুঝতে দিয়েই বললাম ওকে, "এসব কি বলছিস তুই? আমি জেনারেল লাইনে পড়ি বলে তুই আমায় নিয়ে ইনসিকিওর?" উত্তর এল, "আফটার অল অকাত থাকলে তো টেকনিক্যাল লাইনে আসবি! তোর সেই অকাতটাই নেই।" আমি আর কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম, "হুম! তুই তাহলে সম্পর্কটা শেষ করতে পারিস, এতই যখন লজ্জা আমায় নিয়ে।" না, সেটা রুদ্র করবে না, ও শুধু আমায় ওর একটা সাইড জানালো আর আমি ব্রেকাপের কথা বলছি? দোষ আমারই।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
