রাত্রি তখন ৯টা। টিউশন পড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরেছে মেহা। এখন প্রায়শই তাকে এই সময় করে বাড়ি ফিরতে হয়। সকালে কলেজ থাকায় সে আর তখন সময় করে উঠতে পারেনা টিউশন পড়ানোর। অথচ স্টুডেন্টরা তার কাছে টিউশন ছাড়তেও চায়না। তাই বাধ্য হয়েই রাত বেছে নিয়েছে সে। মেহার বয়স ২৮ বছর। এই বছরই সে নিজের ডক্টরেট শেষ করে একটা নামী সরকারি কলেজের এসিস্টেন্ট প্রফেশরের পদে যোগ দিয়েছে। মূলত সে সাইকোলজির টিচার। তাই খুব সহজেই তার ছাত্রছাত্রীদের মন বুঝে তাদের পড়ার বশবর্তী করে ফেলেছে। আর তারাও মেহার কাছে পড়ার জন্য আগ্রহী হয়ে টিউশন নিয়েছে। মেহা হেঁটে চলেছে তার বাড়ির দিকে। পায়ে হেটে গেলে মাত্র মিনিট পাঁচেক সময় লাগে তার। প্রতিদিনই এই রাস্তাটা বেশ জমজমাট থাকে, তবে আজ কেমন যেন সব সুনসান। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সে বাড়ির দিকে যায়, কিন্তু ঠিক এই সময়ই একটা খট করে আওয়াজ কানে আসে তার। কিছুক্ষন থেমেই আবার খট খট করে আওয়াজটা চলতে থাকে। মেহা বুঝতে পারে যে এটা খুব বেশি দূরের আওয়াজ নয়। সে একটু পিছিয়ে যায় পিছনের রাস্তাটার দিকে। চারিদিক অন্ধকার, তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই ডানদিকে চোখ পড়তে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। একটা লোক, তার মুখ দেখে চেনার উপায় নেই যে সেটা নারী নাকি পুরুষ। মাথায় অসংখ্য ছিদ্র। রক্ত বেয়ে রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। তার চোখ থেকে, নাক থেকে, মুখ থেকে কাঁচা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরনের পোশাক দেখলে বোঝা যাচ্ছে যে এটা কোনো পুরুষ। তার হাত পিছন দিকে বাধা। বলতে গেলে সমস্ত শরীর অক্ষত অথচ মাথায় আঘাতের শেষ নেই। এসব দেখে আর এক মিনিট ও দাঁড়ায় না মেহা। সে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তার মা জিজ্ঞেস করে, "কিরে তোকে এরকম লাগছে কেন? শরীর ঠিক আছে তো?" মেহা কিছুই জানায়না বাড়িতে। শুধু বলে "একটু মাথা ধরেছে তাই আরকি, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।" রাত্রে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে তার মনে শুধুই প্রশ্ন আসে এক গুচ্ছ। কে ছিল লোকটা? তাকে খুনই বা কে করল? আর কেনই বা করল? তারপর কোনোরকমে দুবার ভাত মুখে দিয়ে সে উঠে যায়। মা জিজ্ঞেস করে, "কিরে কিছু খেলিও না, মাথা ব্যাথা বাড়বে যে!" মেহা উত্তর দেয়, "কাল ঠিক হয়ে যাবে, তুমি চিন্তা কোরোনা মা।" তারপর নিজের ঘরে চলে যায় শুতে। মা বলে, "কি যে হয়েছে আজ ওর বুঝতেই পারছিনা। না খেলে তো শরীর আরও খারাপ করবে।" বাবা সব শুনে বলে, "মেয়ে বড়ো হয়েছে, সে নিজের ভালোটা বোঝে। তুমি এত চিন্তা না করে চল গিয়ে ঘুমোবে।" মা বাবা ঘুমোতে চলে গেলে মেহা নিজের ঘরের আলো জ্বালিয়ে খাতা পেন নিয়ে বসে। খুব কঠিন সময়ে মেহার সঙ্গী হচ্ছে এই খাতা আর পেন। সে তার মাথায় চলতে থাকা সমস্ত কিছু খাতায় লিখে সেই পাতাটা একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর সেটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে জানালার বাইরে গিয়ে ফেলে দিল। ফেলার পর সে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ সেখানেই। দেওয়ালের ঘড়িতে এখন বাজে রাত্রি বারোটা। জানলার বাইরের জগতটা জোড়ালো অন্ধকারে ঢাকা। দূরের গাছগুলোর মাথা ঝাপসা ভাবে দেখা যাচ্ছে এই অন্ধকারের মাঝেই। আকাশে কয়েকটা তারা জ্বলজ্বল করছে মাত্র। মেহা জানলার কাঁচ টেনে বন্ধ করে এসে বিছানায় বসে। তার আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না, সে জানে আসবে না। কয়েক ঘন্টা আগে ওরকম একটা ভয়ংকর দৃশ্য দেখার পর কোনো সাধারন মানুষ কি স্থির থাকতে পারে? মেহা চুপ করে শুয়ে পড়ল। সারারাত এভাবেই কাটে তার চিন্তায় চিন্তায়।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
