শরদিন্দুর ব্যোমকেশ

4 1 0
                                        


"বুঝলেন ব্যোমকেশ বাবু! জীবনটা শুধুমাত্র রহস্যই নয়, তার বাইরেও কিছু একটা।" এই কথা বলে আমি ব্যোমকেশ বাবুর দিকে তাকালাম। তিনি উত্তরে বললেন, "রহস্যের বাইরের সেই কিছু একটা! সেটা কি?" আমি বেশ থতমত খেয়ে বললাম, "সে হল...ইয়ে...মানে প্রেম, বিরহ, ভালোবাসা, আর ও অন্য কিছু।" তিনি এরপর বেশ ভারী গলায় বললেন, "হুম, সেই অন্য কিছুটাও রহস্যই বটে, কি তাইনা?" বলার শেষে হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। আমি হাসিতে সায় দিয়ে বললাম, "তা অবশ্য বটে। এদিকে মুখে বলি রহস্যের বাইরের জীবনের কথা, আর লেখনীতে আমার খুন খারাপী, রহস্য, রোমাঞ্চ ছাড়া কিছু আসেনা। তবে রহস্য ভেদ করা আর রহস্যের গল্পের মধ্যে বিস্তর ফারাক।" ব্যোমকেশ এতক্ষনে চায়ের কাপটা খালি করে উঠে এসে দাড়িয়েছেন জানলার কাছে। অনেক গভীর কিছু ভাবতে ভাবতে যেন হঠাৎ তার ভাবনায় তীর পড়ল, এমন একটা ভাব নিয়ে বললেন, "একটু এলাবোরেট করো ব্যাপারটা।"আমি বলতে লাগলাম, "গল্প লেখা হল মাথার ভিতর রহস্য তৈরী করা, আর শেষে গিয়ে নিজের সেই রহস্য নিজেই ভেদ করা। এতে থাকে না কোনো লুকোনো ষড়যন্ত্র, যা হয় সব নিজের মাথাতেই। তবে কেস স্টাডি করে অন্যের রহস্যের একটা একটা করে ক্লু বের করা খুবই কঠিন। এখানে প্রতি পদে পদে থাকে ষড়যন্ত্র।" উনি বললেন, "তা ঠিক বলেছো তুমি। এটাকে তোমাদের GenZ দের ভাষায় কি যেন বলে? ফর... ফর... কি একটা!" আমি বললাম, "ফর রিয়েল। বা এফ আর।" - "হুম ওই হল আরকি" বলে গিয়ে আবার চেয়ারে বসলেন। কিছুক্ষন ভেবে তারপর জিজ্ঞেস করলেন আমায়, "আচ্ছা কখনো কি এরকম কিছু সম্ভব তোমার মতে? যেখানে একজন ডিটেকটিভ স্টোরি রাইটার আর একজন গোয়েন্দা একসাথে মিলে রহস্য উদঘাটন করছে। যেহেতু দুজনের দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা, তাই কাজ করাটাও সুবিধারই হবে, তাই না?" আমার বেশ পছন্দ হল ওনার এই কথাটা। আমি উত্তরে বললাম, "রিয়েল লাইফের গোয়েন্দা যেমন নিজেকে ক্রিমিনালের জায়গায় বসিয়ে কেস স্টাডি করেন, একজন লেখক কিন্তু নিজেকে ক্রিমিনাল এবং গোয়েন্দা উভয় চরিত্রের উপর বসিয়েই গল্প লেখেন। সেক্ষেত্রে নিজের আসল স্বত্বাটাকে নিউট্রালে রেখে এগোতে হয়। নাহলে একটু এদিক ওদিক হলেই নিজের ষড়যন্ত্রে নিজেরই পা পড়বে।" ব্যোমকেস হেসে বলেন, "বয়স কম হলেও তোমার ভাবনার তীর খুব ধারাল। অবশ্য তোমার গল্প থেকেই তা বোঝা যায়। কিন্তু আমার একটা আর্জি আছে এসবের মধ্যে। তুমি বরং আমার শেষ কেস এর উপর একটা গল্প লেখো। আমি ডকুমেন্টস করে ডিটেইল পাঠিয়ে দেব, কি দেবে তো?"আমি বললাম, "আপনি আমার গুরুজন, আর্জি না রাখলে চলবে? লিখব অবশ্যই। তবে আজ উঠি, অনেক বেলা হল।" উনি হেসে বললেন, "হ্যা, তোমায় আর আটকাবো না। যাও সাবধানে বাড়ি যাও।" গোয়েন্দার বাড়ি থেকে নতুন রহস্য গল্পের প্লট নিয়ে যাচ্ছি, এ কি আর কম কিছু? বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মোটমাট চারদিন পর গেলাম আবার গেলাম ব্যোমকেস বাবুর বাড়িতে। ওনার কথা মতো গল্প লিখে নিয়ে গেছি, নাম দিয়েছি "শরদিন্দুর ব্যোমকেস"। কাগজটা হাতে পেয়ে তিনি প্রথমে গল্পের শিরোনাম দেখেই ভীষন খুশি হলেন, এবং বললেন, "তুমি যে নাম দিয়েই আমায় খুশি করে ফেললে! কথায় বলে ঠিকই যে নামে কিছু আসে যায় না, সেটা যে আংশিকভাবে বেঠিক, তা আজ জানলাম।" আমিও বেশ খুশি হলাম ওনার কথা শুনে। তিনি এরপর ডুব দিলেন গল্পের লাইনে। বেশ খানিকটা সময় গেল, আমিও অধীর আগ্রহে বসে রয়েছি ভ্যালিডেশনের। কি জানি ভালো লাগবে কিনা! গোয়েন্দা বলে কথা উনি, আমি তো কোথাকার ঠুনকো এক ডিটেকটিভ স্টোরি রাইটার! কিন্তু হঠাৎ করেই আমার ভাবনার সাগরে ঢিল ছুড়ে দিয়ে ব্যোমকেস বললেন, "কি লিখেছো শিল্পা! সাব্বাস! একেবারে রহস্যের উন্মোচন করে ফেলে যেন আমি দ্বিতীয়বারের মতো স্বস্তি পেলাম।" আমিও ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, "সবই আপনাদের আশীর্বাদ।" বদলে পেলাম দুটো সাবাসির পিঠ চাপড়া। আর কি চাই! রহস্য লিখে যদি রিয়েল লাইফ গোয়েন্দার মন জয় করতে পারি, সেই যেন অনেক বড়ো পাওয়া। গল্প শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবলাম এই শরদিন্দুর ব্যোমকেস ব্যাপারটা বেশ ভালোই। তা আমার গল্পেও ভালো আবার জলজ্যান্ত গোয়েন্দা হিসেবেও ভালো।
-শিল্পা প্রামানিক

~HAWAII~Where stories live. Discover now