"এই বছর শ্মশানে যাওয়ার প্ল্যানটা তাহলে সেট, কি বলিস বন্ধু?"
ওপার থেকে উত্তর আসে, "একদম, কালীপূজোর রাত্রে লাইট নিয়ে ক্যামেরা নিয়ে ডিরেক্ট শ্মশান।"
দুই বন্ধুর ফোনালাপ শুনে মা বলল, "এই GenZ দের নিয়ে আর পারা যায়না। যতসব উদ্ভট রকমের কাজকর্ম করার ধান্দা সারাদিন। আমি কিছু বলব না তো, যা না যা, ঘাড়টা মটকালে বুঝবি দুজন কত ধানে কত চাল। কি শখ! কালীপূজোয় যাবে শ্মশানে!"
তপন বলল, "উফফ মা চিল! আমাদের কিছু হবেনা, একটু মজা করতেই তো যাচ্ছি, আর আমি একা তো না, অরিন্দম ও যাচ্ছে সাথে।" মা জানে এদের দুজনকে দমিয়ে রাখার সাধ্যি তার নেই, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বললেন, "ঠিক আছে, তবে চোদ্দ শাক খেয়ে তবেই যাবি বুঝলি?"
সন্ধ্যে হতেই তপন আর অরিন্দম দুজন মিলে হাঁটা দিল শ্মশানের রাস্তায়। বাইরের দিকে অল্পস্বল্প আলো থাকলেও ভিতরের দিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। তপন লাইট অন করে শুরু করল ভিডিও করা, অরিন্দম ও তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা ভিতরে যাওয়ার পর ওরা দেখল সেখানে আর কোনো জনমানবের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে, আওয়াজ বলতে শুধুই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর তাদের চলার পথে শুকনো পাতার খরখর আওয়াজ। মজার ছলে সবটা শুরু করলেও এখন দুজনের মনেই বেশ ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। অরিন্দম বলল, "ভাই ক্যামেরাটা বন্ধ কর। আর ভিতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। তাছাড়া এত অন্ধকারে কোনো সাপ-খোপ থাকলেও তো বিপদ হবে।" তপন বলল, "ভয় করছে আমারো, তবে এটাই তো থ্রিল। আর ওসব সাপের ভয় না, সত্যি বল যে ভূতের ভয় লাগছে। যদিও ডার কে আগে জিত হ্যায়। চল না আর একটু যাই।" কথা শেষ হতে না হতেই তপনের পায়ের উপর দিয়ে হঠাৎ ঠান্ডা কিছু একটা চলে গেল। সে ভয় এ "ও-মা-গো" বলে লাফিয়ে উঠতেই অরিন্দম লাইট দেখাল নীচে। একটা গিরগিটি ছিল, সে এখনও শুকনো পাতায় হাতড়ে যাচ্ছে কিছু একটা। অরিন্দম বলল, "আর না ভাই, চল বাড়ির দিকে এগোই। নাহলে কাঁচা লাশ পড়বে এখানে আমাদেরই।" দুজনে বাড়ির পথ ধরলেও এই অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে কোনদিক দিয়ে তারা এসেছিল। তাও চলতে চলতে কিছুটা বাইরের দিকে এলেও অন্ধকারে রাস্তার এ মাথা ও মাথা কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তারা জিম্যাপ অন করল, কিন্তু নেটওয়ার্ক এর অভাবে তাতেও কাজ হল না। ফোন কল ও যাচ্ছে না। এখন এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা ভুতুড়ে জায়গায় আটকে গিয়ে তারা বুঝতেই পারছে না যে ভূত বেশি ভয়ানক নাকি বাড়ি গেলে মা বাবার পেটানি। অনেকটা রাত্রি হয়ে গেছে, সাথে ফোন থাকলেও নেটওয়ার্ক এর অভাবে কাউকে কলও করা যাচ্ছে না। তপন বলল, "হে মা কালী, বাঁচাও আমাদের। অ্যাটলিস্ট রাস্তাটা তো দেখিয়ে দাও। আফটার অল তোমার পুজো বলেই তো এখানে এসেছিলাম।" অরিন্দম হেসে বলল, "মা কালী খাড়া নিয়ে এসে মাথায় বাড়ি মারে না এই অনেক। ডাকার কী ছিরি!" তপন বলল, "আমি অতো ফর্মাল ওয়েতে ডাকতে পারিনা বাবা, তুই ডাক, যদি কাজ হয়।" অরিন্দম বলল, "জয় মা কালী, জয় মা শ্যামা, পথ দেখাও মা আমাদের।" তপন রেগে বলল, "ন্যাকামি যতসব। এই করতে থাকলে সারারাত শ্মশানেই কাটাতে হবে। চল ওদিকে একটু এগোই।" দুজন আবার সোজা হাঁটতে থাকে আর হঠাৎ করেই দেখে একটা মহিলা যেন এদিকেই আসছে। তপন চিৎকার করে বলে, "ও আন্টি! আপনি যদি ভূত না হয়ে থাকেন প্লিজ একটু শুনবেন?" অরিন্দম বলল, "এই চুপ কর। আন্টি! আমরা এখানে আটকে গেছি, হেল্প করবেন একটু?" মহিলাটা বেশ থমকে গিয়ে দাড়াল। তবে তপন আর অরিন্দম অনেকটা স্বস্তি পেল তাকে দেখে, দুজনেই তার দিকে এগিয়ে এল। সে বলল, "এই রাত্রে তোমরা এখানে কি করছ?" ওরা বলল, "ভ-ভ্লগ-ভ্লগিং। কিন্তু বাইরে যাওয়ার রাস্তা বুঝতে পারছিনা।" মহিলা বলল, "ওহ! এইতো আমি ওদিকেই যাবো, চলো আমার সাথে।" তপন আর অরিন্দম তার পিছন পিছন যেতে শুরু করল। মহিলাটার পরনে লাল শাড়ি, পায়ে শুধু নুপুর, যেটা ঝুমঝুম করছে হাঁটার তালে তালে। আর সারা গায়ে তেমন কোনো গয়না নেই। অন্ধকারে লাইট নিয়ে তার পিছনে যেতে যেতে তপন আর অরিন্দম জিজ্ঞেস করল, "ইয়ে মানে আন্টি! আপনি এত রাত্রে শ্মশানের ওখানে কেন যাচ্ছিলেন?" মহিলা স্থির হয়ে পিছনে না তাকিয়েই উত্তর দিল, "আমার বাড়ির শর্টকাট রাস্তা, ওখান দিয়েই যাই আমি।" তারপর একটা অস্বাভাবিক বিরতির পর ধীরে ধীরে লোকজনের আওয়াজ পাওয়া গেল। কিছুটা এগিয়ে সামনের প্যান্ডেল এর গান শোনা গেল, অল্পস্বল্প আলোও দেখা গেল। সেই মহিলা বলল, "এবার যেতে পারবে তো?" তপন আর অরিন্দম "হ্যা" বলে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজেদের পাড়ায় ফিরে এল। সারা রাস্তা তারা শুধু এটাই আলোচনা করে গেল যে ওই "আন্টি" না থাকলে তারা কিভাবে বাড়ি আসত।
সময় অনেকটা গড়িয়ে গেলে নিজেদের পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে আরতীর আওয়াজ পেয়ে ওরা সেখানে গেল। মা কালীর দর্শন করা মাত্রই তাদের মনের সমস্ত ভয়, চিন্তা যেন দূর হয়ে গেল নিমেষেই। শ্মশানের কথাটা প্রায় মাথা থেকে বেড়িয়েই যাচ্ছিল এমন সময় অরিন্দমের চোখ পড়ল প্রতিমার পায়ের দিকে, "এই নুপুরটাই তো সেই... সেই আন্টিটাও পড়েছিল যে তাদের রাস্তা দেখিয়ে দিল।" তপনকে খোঁচা মারতেই সে দেখল তপনও মায়ের পায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে, "মানে কি ওটা মা কালী...."। কথা সরছে না কারোর মুখেই। শুধু শুনল পাশে বসে থাকা কয়েকজন লোক বলছে, "মা দুর্গা গেলেন ঠিকই কিন্তু মা কালী হয়ে তিনি আবার এসেছেন! যে পথ দিয়ে গেল উমা, সে পথ দিয়েই এল শ্যামা। সবার মঙ্গল করো মা।" তপন আর অরিন্দম ভক্তিভরে মা কে প্রনাম করল।
-শিল্পা প্রামানিক
YOU ARE READING
~HAWAII~
Viễn tưởngStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
