দুটো খুনের ডকুমেন্ট খতিয়ে দেখে কাগজগুলো এক পাশে রেখে চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। সমস্ত কিছু উদ্ধার হয়ে গেলেও খুনির ফোনের সিমটা পাওয়া যাচ্ছে না, যার জন্য পুরো কেসটা আটকে আছে। ডকুমেন্টস পড়ে যা বোঝা গেল তাতে করে সিমটা ট্র্যাক করতে পারলেই সমস্ত প্রমান হাতে চলে আসবে। মূলত খুনির সাথে ভিক্টিম এর লাস্ট কলটাই সবকিছুর প্রমান। অথচ দুজনের মধ্যে কারোর সিমই হাতে পাওয়া যায়নি। গত পরশু থেকেই চলছে এই কাজ, আর হয়ত দু-একদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে এখনো প্রমান না পাওয়াই মাথায় জাঁকিয়ে বসেছে কেসটা। কেস সল্ভ হলে তারপরেই পুজোর জন্য বাড়ি যাওয়ার তোরজোড় শুরু হবে। জাপানের আকাশেও আমাদের শরতের একটু ছোঁয়া এসে লেগেছে এর মাঝেই। পরিস্কার নীল আকাশের গা ঘেঁষে ভাসছে কয়েকটা প্যাঁজা তুলোর মতো মেঘ। ফোন তুলে দেখি এখন বাজে সকাল দশটা। একটু স্ক্রিন টাইম নেওয়াই যায় এখন। অবশ্য প্রবাসি বাঙালিদের আর কি বা হতে পারে অবসর সময় কাটানোর জন্য? গোয়েন্দা না হলে হয়ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা যেতো, কিন্তু স্বপ্নের জীবন পেতে গেলে যে কিছু সুখ ত্যাগ করতেই হয়, এটা সত্যি। গোয়েন্দা হওয়ার সুবাদে আমার তেমন কোনো বন্ধু নেই জাপানে, সুবাদে বলছি কারন আমি অন্তর্মুখী, তবে মাঝে মাঝে যে ককটেল হাতে নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি আর ক্লাবিং করতে ইচ্ছে হয়না তেমনটা নয় একেবারেই। আফটার অল, মানুষ একটি সামাজিক জীব কিনা!
এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি মায়ের ফোন আসছে। ফোন তুলে কথা বললাম, "হ্যালো!"
মা- "কিরে ছুটি নিয়ে আসছিস তো এবার? আগের বছরের মতো দেরি করিস না মা, আজ তো মহালয়া, পুজো শুরু হল বলে। আমরা তো একসাথে পুজো দেখব!"
মা কে আশ্বাস দিলাম যে সপ্তমীর আগেই আমি ইন্ডিয়া যাবো, তাই ইন্সটাগ্রামে রিল স্ক্রোল বন্ধ করে টিকিট দেখা শুরু করলাম, আজ বাদ, কাল বাদ, পরশুর একটা টিকিট পাওয়া গেল। আর কোনো চিন্তা রইল না তাহলে। শুধু যাওয়ার আগে খুনের কেস দুটো সল্ভ করে যেতে হবে।
অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। মাথায় ঘুরছে ডকুমেন্ট এর ডিটেল গুলো। হঠাৎ দেখি রাস্তায় সেই ফেব্রিক, রঙ, তুলি, ক্যানভাস নিয়ে বিক্রি করা বসা লোকটা। বিগত কয়েকদিন থেকেই এই লোকটাকে দেখছি রঙ তুলি বিক্রি করতে নতুন শপ খুলে। কি মনে হল ওনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে উনি লুজ রঙ তুলি বিক্রি করেন কিনা। বললেন যে, এমনিতে প্যাকেজিংই দেন উনি তবে চাইলে লুজ রঙ বিক্রি করতে পারেন। দুদিন আগেই একটা লোক ছোটো কাপে নিয়ে গেছিল, ফিডব্যাক ও ভালো। এত গাঢ় রঙ যে ছোটো কার্ডবোর্ড ডুবে যাবে অথচ রঙ শুষবে না। হাতে যেন চাঁদ পেলাম আমি।
পুলিশ নিয়ে সিল করা ঘরে গেলাম, কাল যেমন ছিল সব তেমনই আছে, দূরের রঙ তুলির পাত্র গুলোও। সমস্ত রঙ ঢেলে ফেলার পর শেষের লাল রঙটার পাত্র ঢালতেই একটা ছোটো কাগজের মতো জিনিস বেড়োলো। একটা সিম। উনি ঠিকই বলেছেন, রঙ খুব গাঢ় যে শুষবেও না। সিমটা ইনপুট করে দেখা হল আমার ডিভাইসে। এটা খুনির সিম, সমস্ত প্রমান হাতে পেলাম এই সাথেই।
মন শান্ত হল, যেন মহালয়াটা আমারই মনের ভিতর চলছিল এতক্ষন, এতসময়, এতদিন ধরে। বাড়ি ফিরে ফোন করলাম মাকে, "মা! আমার পরশু টিকিট, খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি আসছি।" প্রথমবারের মতো যেন কেউ মহাভারতের রেফারেন্স টেনে বলতে পারল না আমায় যে "মহালয়া শুভ হয়না, শিল্পা!" আমার মহালয়া শুভ হল বইকি। প্রমানের সাথে সাথেই তো আনন্দের সম্ভার!
-শিল্পা প্রামানিক
YOU ARE READING
~HAWAII~
Viễn tưởngStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
