আজীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামী

294 10 0
                                    

দিবার নিজের চেহারা সম্পর্কে খুব পরিস্কার ধারণা আছে । সে জানে যে কোন ছেলে ওকে একবার দেখলে দ্বিতীয়বার ঘুরে তাকাবেই, সে যেই হোক না কেন । স্কুল-কলেজ জীবনে এই পর্যন্ত দিবা কত মানুষের কাছ থেকে প্রেম নিবেদন যে পেয়েছে সেটার কোন ঠিক নেই । আগে এক সময়ে সে হিসাব রাখতো । একটা ছোট ডায়েরি ছিল ওর । ওখানে সে নাম ঠিকানা ফোন নম্বর লিখে রাখতো কে কে ওকে ওর পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রেম পত্র দিচ্ছে । ইন্টার পাশ করে যখন অনার্সে ভর্তি হল তখন কেবল প্রেম পত্র নয়, বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হল । সরকারি বেসরকারি চাকুরীজীবী থেকে শুরু করে ওদের কলেজের কয়েকটা স্যার পর্যন্ত ওর প্রেমে দেওয়ানা । ওকে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু দিবা কাউকে পাত্তা দেয় নি । কাউকে ওর মনে ধরে নি । সেই দিবাই যে এমন ভাবে প্রেমে পড়বে সেটা কি ও ভেবেছিলো ?

ঘটনা কিছুই না । খুব স্বাভাবিক ভাবেই অপু নামের ছেলেটা ওর সামনে এসেছিলো । দিবার বাবার বাজারে বড় আড়ত । সেই আড়তে কি একটা কাজে অপুর নামের ছেলেটার বাবা আসতো নিয়মিত । ব্যবসার কাজে দুজনের ভাব হয়ে গেল বেশ । মাঝে মধ্যেই দিবাদের বাসাতে এসেছে । দিবা তাকে দেখেছে । আঙ্কেলকে সালাম দিয়েছে, সেও তাকে দোয়া করেছে ।

একদিন দুপুরে দিবার বাবা অপুর বাবাকে খাবারে নিয়ে এল । দুজন মিলে খাওয়া দাওয়া করছিলো । দিবা সামনে না গেলেও আশে পাশে ছিল । তখনই কানে গেল তাদের কথা ।

আঙ্কেল দুঃখ করে বলছে, তার দুইটা ছেলে, বড় ছেলেটা ঠিকই আছে বিয়ে শাদী করে ব্যবসার কাজে হাত দিচ্ছে কিন্তু ছোট টা যেন কেমন হয়ে গেছে । আগে ভাল ছিল । ঢাকায় পড়াশুনা করেছে । রেজাল্টও ভাল ছিল । পড়াশুনা করে চাকরিও করতো । তারপর কি হয়ে গেল সব কিছু ছেড়ে দিলো ।

দিবার বাবা বলল, কেন ?

-কোন এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিল । সেই মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে । তারপর থেকে তার আর কিছুই নাকি ভাল লাগে না । কারো সাথে ঠিকঠাক মত কথা বলে না । কি সব কাজ করে অনলাইনে । সে সব করে টাকা আয় করে আর সারাদিন বাসায় থাকে । মানুষের সাথে কথা বলতে নাকি তার মোটেই ভাল লাগে না ।

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Where stories live. Discover now