-মামা আর এক বাটি দিমু ?
আমি স্যুপ মামা দিকে একবার তাকালাম আর একবার তাকালাম আমার হাতের খালি বাটিটির দিকে ! ইতি মধ্যে দুই বাটি খেয়ে ফেলেছি । এটা নিয়ে তিন নাম্বার বাটি হবে !
আমি স্যুপ মামার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত হাসি দিলাম ! বললাম
-এক দিনে কি এতো গুলো সহ্য হবে ?
-আরে হইবো মামা ! আমার স্যুপে কুনো ভ্যাজাল নাই ! কোন সমস্যা হইবো না ।
এই বলে মামা আরেক বাটি ভরতে লাগলো ! আমি বললাম
-দাও ! তিন নাম্বার বাটি !
আমি আমার তিন নাম্বার স্যুপের বাটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আসলে ঠিক তিন নাম্বার বাটির জন্য না । আমি অপেক্ষা করছি তার জন্য । মেয়েটা আজকে আসছে না কেন ? আর যদি আধাঘন্টার মধ্যে না আসে তাহলে আমাকে চলে যেতে হবে । আর কত স্যুপ খাওয়া যায় এক দিকে । পেটের ভিতর এর মধ্যে কেমন একটা ডাকা ডাকি শুরু করে দিয়েছে ! অন্য দিন তো একটা বাটি খেতে না খেতেই মেয়েটি হাজির হয় । আজকে কেন বের হচ্ছে না ?
আসলেই মেয়েদের সময় জ্ঞানের খুব অভাব ।
স্যুপ মামা আমাকে স্যুপের বাটি হাতে হাতে দিতে বলল
-মামা এইডার ভিতর ঝাল কম দিছি ! মজা পাইবেন ।
-হুম বুঝলাম । তা তোমার রেগুলার কাষ্টমার কই গেল ?
মামা আমার কথা শুনে আবার হাসলো ।
-হ ! আমিও তো খুজতাছি । আজকা আহে না ক্যান ?
-বাসায় আসে তো ?
-কি জানি কইতে পারি না !
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে রাইসা বাসায় নেই । বাসায় থাকলে এতোক্ষনে নিশ্চই চলে আসতো ! অন্তত একটা বার জানলা দিয়ে উকি মারতো ! কিন্তু মেয়ের কোন খোজ নাই !
যে কেউ ভাবতে পারে যে মানুষ একবার বসেই পরপর তিন বাটি স্যুপ খেয়ে ফেলতে পারে তার নিশ্চই স্যুপ খুব পছন্দ ! কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না । স্যুপ মামার নাম মনে হয় রমিজ ! এলাকায় এই স্যুপের দোকান টা খুব বেশি নতুন না ! আর আমার অবশ্য অত জানার আগ্রহও নাই ! আমার চিকেন কর্ন স্যুপ খুব একটা পছন্দও না ! আমি ফুসকা খাই । মাস দুয়েক আগের কথা । বাসা থেকে বের হতে যাবো বড় আপু আমার হাতে একটা বাটি দিয়ে বলল
-আসার আমি যেন এক বাটি স্যুপ নিয়ে আসি । খানিকটা বিরক্ত হলেও কিছু বললাম না । বাটি হাতে নিয়ে বের হয়ে এলাম ।
মামার স্যুপের দোকানটা খুব বেশি বড় না ! একটা বাড়ির সিড়ি ঘরের সামনে একটা বড় নীম গাছ রয়েছে তার নিচে ছোট্ট একটা ঘর ! সাময়িক ! কেবল সন্ধ্যা বেলা বসে । কয়েক ঘন্টার জন্য ! সিড়ি ঘরের আসে পাশেই কয়েকটা বেঞ্চ পাতা । মানুষ জন ওখানে বসে স্যুপ খায় ! আমিও ওখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম স্যুপ নেওয়ার জন্য !
অপেক্ষা করছি ঠিক এমন সময় আমার বুকের মাঝে একটা ধাক্কা লগলো !
লাম্বায় আমার থেকে একটু ছোট হবে ! কালো জিন্স পর আর কালো টিশার্ট পরা এক মেয়ে ! একদম ঝড়ের মত এল !
এসেই সবাই কে উপেক্ষা করে মামার দিকে একটা বড় বাটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-জলদি একবাটি স্যুপ দেন ! একটুও দেরি করতে পারবো না !
এমনিতেই বেশ ভিড় ছিল ! আমার মত অনেকেই অপেক্ষা করছিল ! কিন্তু দেখলাম মামা সবার আগে মেয়েটাকেই স্যুপ দিয়ে দিল !
মেয়েটি যেমন ঝড়ের মত এসেছিল ঠিক তেমন করে চলে গেল !
মেয়েটি যাওয়ার পরে আমার একটু হুস ফিরলো ! এতোক্ষন আমি কি দেখলাম ! আর কি ভাবছিলাম !
রাতের বেলা কেন জানি মেয়েটার কথাই বার বার ঘুরে ফিরে মনে আসতে লাগলো ! ঠিক মত বুঝলাম না ।
পরদিন ফুচকা খাওয়া বাদ দিয়ে কেন জানি স্যুপ খেতে হাজির হয়ে গেলাম !
অপেক্ষা করতে লাগলাম মেয়েটার জন্য !
হাতের স্যুপের বাটিটাও প্রায় শেষ হয়ে আসছে । এখন কি করি ?
মামার দিকে তাকাতেই বলল
-মামা ! আর এককাপ হবে নাকি ?
-দাড়াও মামা ! আগে এইটা শেষ করে নেই !
-মামা ! আজকা মনে হয় আফামনি আর আইবো না !
-হুম !
আসলেই রাইসা আজকে মনে হয় আর আসবে না ! আমি যখন ধরেই নিলাম যে রাইসা আর আসবে না ঠিক তখনই রাইসা এসে হাজির ! বাইরেই গিয়েছিল । পোষাক দেখেতো তাই মনে হচ্ছে ! হাতেও দেখি বেশ কয়েকটা ব্যাগ !
আমার দেখেই কি যেন ভাবলো ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আমি যে বেঞ্চে বসে স্যুপ খাচ্ছিলাম সেখানে বসে পড়লো ! তারপর মামাকে বলল
-স্যুপ মামা ! একবাটি স্যুপ দিন ! ঝাল বেশি করে দিবেন ।
-আফা ! কই গেছিলেন ?
-এই একটু শপিংয়ে । কেন মামা ? কেউ কি খোজ করছিল আমার ?
এই কথা বলে রাইসা আমার দিকে তাকালো ! একটু যেন মিচকি হাসলো !
স্যুপের বাটি হাতে নিতে নিতে আমার দিকে তাকিয়ে রাইসা আসতে করে বলল
-ক বাটি খেয়েছেন ?
-আমি ?
-হুম !
-এই তো শুরু করলাম মাত্র !
-তাই ? আমি তো জানি তিন বাটি চলছে !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকাল রাইসার দিকে ! এই মেয়েটা কিভাবে সব কিছু জেনে যায় !
আমি যে রাইসার জন্য অপেক্ষা করি এটা তো ওর জানার কথা না । দোকান টা যেহেতু ওদের বাসার সামনে সেহেতু যে কেউ ই এখানে স্যুপ খেতে আসতে পারে সেই হিসাবে আমিও আসি ! কিন্তু কদিন থেকেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছে রাইসা ঠিকই টের পেয়েছে যে আমি কেবল ওর জন্যই এখানে আসি !
মামা আবার বলে নাই তো ? নাহ ! মামার তো বলার কথা না ! অবশ্য মামাও কদিনের ভিতর টের পেয়ে গেল আমার মনের কথা ! অন্তত আমার আচরন তো তাই বলছিল ! মামাকে মেয়েটার ব্যাপারে টুপটাক কথা বার্তা জিজ্ঞেস করতাম ! মামাও হেসে জবাব দিতো !
দুই সপ্তাহ আগের কথা ! আমি সন্ধ্যা বেলা বসে আছি । টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল এটা দেখে কাস্টমারও কম ছিল !
কয়েক মিনিট পরেই রাইসা এসে হাজির !
আজকে দেখলাম ওর হাতে কোন বাটি নাই । খালি হাতে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ।
-আজকে স্যুপ খাইবেন না আফা !
-নাহ ! আজকে খাবো না ! এমনি এলাম ।
এই বলেই রাইসা আমার পাশ দিয়ে আস্তে করে চলে গেল ! যওয়ার সময় আস্তে করে বলল
-এতো স্যুপ খাওয়া ভাল না !
আমি রাইসার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম । স্যুপ মামার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও মিটমিট হাসতেছে !
আমি মামার দিকে তাকাতেই মামা বলল
-কাম হইতাছে মামা !
-কি বল মামা ?
-মামা ! আপনি ঠিকই জানেন আমি কি বলতাছি ! লাইগ্যা থাকেন ! সিগনাল গ্রিন !
তার পর থেকেই রাইসা সাথে আমার চোখাচোখির খেলা চলতে শুরু করলো ! রাইসা আসতো ! আমি স্যুপ খেতাম । স্যুপ খেতে খেতে ওর দিকে তাকাতাম । ওর আমার দিকে তাকাতা ! ওর আমার দিকে তাকাতো !
আর আজকে এই ব্যাপার !
আমি একটু সংকুচিত হয়ে বসলাম !
রাইসা বলল
-সিরিয়াস লি ? এখানে বসে তিন বাটি স্যুপ কিভাবে খেলেন ? মানে আপনার মত রোগা পাতলা একজন মানুষ কিভাবে তিন বাটি স্যুপ খেয়ে ফেলল ! আসলেই সরুর পেটে গরু আটে !
আমি কেবল রইসার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! রাইসা এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমাকে অনেক দিন আগে থেকেই চিনে !
কিন্তু সমাস্য হচ্ছে এই মেয়েটা এতো খবর কিভাবে জানে ?
আর আমি যে তিন বাটি স্যুপ খেয়েছি এটাই বা মেয়েটা কিভাবে জানে ?
জানুক ! যে ভাবে জানে জানুক !
আমি বললাম
-আমি তিন বাটি স্যুপ খেয়েছি তোমাকে কে বলল
-কিভাবে জানি সেটা তো বড় কথা না ! ক্থাটা সত্য কিনা বলেন ?
-হুম !
-কেন ?
আমি কোন জবাব দিলাম না ! রাইসা আবার বলল
-আমার কি মনে হয় জানেন ? আপনি ইতিহাসে প্রথম একজন যে কিনা মেয়ে পটানোর জন্য বসে বসে স্যুপ খান ?
-মানে কি ?
-মানে কিছু না ! আমার খাওয়া শেষ ! আমি যাই !
এই বলে রাইসা উঠে গেল । মামার কাছে বাটি দিতে দিতে বলল
-আজকে আমার স্যুপের বিল তানভীর সাহেব দিবে !
তানভীর ?
এই মেয়ে আমার নাম জানে কিভাবে ?
আশ্চর্য !
রাইসা আমার দিকে আবার তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল !
আমি খনিক্ষন বসে রইলাম চুপ করে । কি হচ্ছে ?
কেমন করে হচ্ছে ?
মামার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি হল এটা মামা ?
-মামা ! আমি আগেই কইছিলাম ! সিগনাল গ্রিন !
আমি বিল দিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম !
আসলেই মনে হচ্ছে সিগনাল গ্রিন !! সিগনাল গ্রিন !
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।