-প্রোপোজ কি করে ফেলেছে নাকি আজকে করবে ?
-সরি ?
মেয়েটার চোখ টা চমকে উঠলো আমার কথা শুনে । ওয়াশরুমের কাঁচের দিকে পিঠ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু টা সময় !
আমি ট্যাপে হাত ধুতে ধুতে বললাম
-বললাম যে প্রপোজ কি করে ফেলেছে তোমাকে ?
-আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না !
পকেট থেকে টিস্যু বের হাত মুছতে মুছতে মেয়েটার দিকে তাকালাম ! মেয়েটাকে আসলে যতখানি পিচ্চি মনে করেছিলাম সামনা সামনি দেখে ততখানি পিচ্চি মনে হচ্ছে না ! এই মেয়েকে আপনি করে বলার কোন কারণ নেই ! আমি বললাম
-আমার ধারনা তুমি ঠিকই বুঝতে পারছো আমি কি মিন করেছি ! প্রপোজ কি করে ফেলেছে ?
মেয়েটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো চুপ করে । আমাকে বোঝার চেষ্টা করছে যেন । খানিকটা দ্বিধার ভেতরেই আছে মনে হচ্ছে । এভাবে চট করে ব্যাপার টা ধরে ফেলাতে আমাকে একেবারে ইগনোরও করতে পারছে না !
আমি মেয়েটাকে আরেকটু ভড়কে দেওয়ার জন্য বললাম
-আজকেই তো প্রথমেই দেখা ! তাই না ?
-জি !
-নেট এ পরিচয় ?
-হুম !
-কথা হয়েছে তো ফোনে ? নিশ্চই বলেছে তোমার সাথেই জীবনের প্রথম !
মেয়েটা এই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো ।
আমি বললাম
-দেখো একটা কথা কেবল তোমাকে বলি ! যদি আজকে প্রপোজ করে তাহলে রাজি হোও না !
-কেন ? আপনি নাভিন কে চেনেন ?
মেয়েটা কেন শব্দটা বেশ তীক্ষ কন্ঠে বলল । স্পষ্টই বুঝতে পালাম ছেলেটার প্রতি মনে হয় সে খানিকটা এগিয়ে গেছে । বেশ খানিকটাই বলতে হবে !
আমি বললাম
-না চিনি না !
-তাহলে ? কিভাবে বলছেন ? আর কেনই বা বলছেন ?
-আমি তো তোমাকেও চিনি না !
-সো ! হোয়াটস দ্য পয়েন্ট ?
-আছে ! পয়েন্ট আছে !
-কি !
আমি বললাম
-নিশ্চই তুমি লক্ষ্য করেছো তোমাকে আমি দেখছিলাম ?
-হুম !
-এবং তুমি নিজেও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে ? তাই না ?
-জি না !
-হাহাহাহাহহা !
মেয়েটা কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো ! আমি বললাম
-শুনো আমার বয়স তোমার থেকে বেশী কিন্তু । যাক সত্যি কথা বলি, তোমার চোখ আমার অনেক পছন্দ হয়েছে । অনেক বেশি ! নেশা ধরার মত ! বুঝেছো ?
মেয়েটা এবারও কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । আমার এরকম কথায় খানিকটা ভড়কে গেছে যেন ! আমি বললাম
-কত দিন এরকম মাতাল করা চোখ আমি দেখি নি আমি বলতে পারবো না !
-তো আপনি কি চান ? আর কেন বলছেন নাভিনের প্রপোজে না করতে ?
-কারন যে ছেলে এমন মাতাল করা চোখকে সামনে রেখে নারী অন্যান্য দেহের দিকে লুলুপ দৃষ্টি তাকাতে পারে সে আর যাই হোক ......
মেয়েটা একদম চুপ করে রইলো ! আমি আবার বললাম
-এবং আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজেও ব্যাপার টা লক্ষ্য করেছো ! নয়তো আমার সাথে তোমার চোখা চোখি হত না !
মেয়েটি বলল
-সবার চোখই এমন করে । এটা স্বাভাবিক !
-তাই ? সবাই মেয়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না ?
এই বলে আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম সরাসরি ।
-আচ্ছা দেখি তোমার মোবাইল টা ?
এইটা মনে হল একটু বেশিই হয়ে গেল । শত ভাগ সম্ভাবনা আছে মেয়েটা এখন আমার উপর বিরক্ত হয়ে চলে যাবে ! কিংবা এতোক্ষণ বানানো ইম্প্রেশন টা মুহুর্তেই ভেঙ্গে যাবে । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েটা তার মোবাইল টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলাম !
আমি ফোনটা নিয়ে আমার নাম্বার টা সেভ করে ওকে বললাম
-তোমার নাম আমি জানি না ! জানতে চাইবোও না ! এই আমার নাম্বার রইলো ! যদি আমার কথা গুলো সত্য না হয়ে তাহলে নাম্বার টা মুছে দিও ! আমিও কদিনের ভিতর তোমাকে ভুলে যাবো ! আমাদের মাঝে দেখা হওয়া সম্ভবনা নেই বললেই চলে ।
ব্যস আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলাম ।
মেয়েটাকে আমি ঠিক মত চিনি না । সজিবের ট্রিট বাকি ছিল । অন্যান্য ট্রিট গুলো আমরা বাংলা খাবার খেলেও আজকে কি মনে কিছু পশ্চিমা খাবার খাওয়া যাক । সেই প্লান করেই বুমার্সে আসা । এখানে আসার পর থেকেই মেয়েটাকে দেখছি । বলতে গেলে একেবারে চোখের সামনে থেকে সরছেই না ।
আমি যেখানে বসে আছি মেয়েটি ঠিক আমার সোজাসুজি বসে আছে । আমার সাথে যেমন আমার বন্ধুরা রয়েছে ঠিক তেমনি মেয়েটার সাথেও ওর বন্ধুরা রয়েছে । আচার আচরন দেখে যা মনে হল তাতে দুই গ্রুপ প্রথম বারের মত দেখা করতে এসেছে । এবং মেয়েটি হচ্ছে সবার মধ্য মনি । তার মানে মেয়েটাকে কেন্দ্র করেই এখানে আসা ! মেয়েটার চেহারা একটা লজ্জার ভাব পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো । মেয়েটিকে লক্ষ্য করার সাথে সাথে আমি তার কাছে বসা ছেলেটিকেও লক্ষ্য করলাম ! ছেলেটার চোখ এদিক ওদিক যাওয়াটাকেও আমার কেন জানি খুব বেশি সুবিধার মনে হল না !
ফোন এল না । আমি অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম যে মেয়েটা মনে হয় আমাকে নিশ্চিত ভাবেই ফোন দিবে । কিন্তু ফোন এল না । সপ্তাহ খানের মধ্যেই অবশ্য আমি সব কিছু ভুলে গেলাম । আমি ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন মেয়েটার সাথে যোগাযোগ হবেও না ! কিন্তু ঠিক দশ দিনের মাথায় মেয়েটার ফোন এসে হাজির !
আমি প্রথমে চিনতেই পারলাম না কে ফোন করেছে । তখন বিকেল হবে হবে করেও হয় নি । সন্ধ্যার দিকে টিউশনী আছে আমি সেটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি । তখনই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসে হাজির !
-কে বলছেন ?
আমি সাধারনত ফোন ধরে হ্যালো বলি না ! ওপাশ থেকে কোন কথা নেই ! আমি আবারও বললাম
-কে বলছেন ?
আবারও বলতে যাবো কে বলছেন তখনই ওপাশ থেকে ক্ষিণ কন্ঠে কেউ বলে উঠলো
-আমি !
-আমি কে ? নাম নেই ?
-নাম বললে চিনবেন না !
-তাহলে কিভাবে চিনবো ?
এই লাইন টুকু বলেই আমার মনে পড়ে গেল । আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-তুমি ?
-হু !
-আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমাকে আর ফোনই দেবে না ! যাক ফোন দিয়েছো তাহলে ?
-আসলে .......
আমার কেন জানি মনে মল মেয়েটা আমাকে কোন দরকারে ফোন দিয়েছে । এমনি এমনি ফোন দেয় নি ! আমি বললাম
-বল । সমস্যা নেই !
-আপনি কোথায় থাকেন ?
-কেন ?
-আপনি কি এখন একটু একাডেমিয়ার সামনে আসতে পারবেন ?
আমি আসলেই একটু অবাক হলাম । সরাসরি মেয়েটা আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে ঠিক বুঝলাম না !
আমি বললাম
-একাডেমিয়া মানে মোহাম্মাদপুরের ঐ টা ?
-হুম !
খনিকক্ষন বিরতি দিয়ে মেয়েটা আবার বলল
-পারবেন আসতে ?
-তা তো পারবো ! আমার বাড়ির কাছেই ! কিন্তু বুঝতেছি হঠাৎ আসতে বলতেছো কেন ?
আবারও কিছু টা সময় নিরব্তা ! তারপর মেয়েটা বলল
-আসলে আপনার কথাই ঠিক ! নাভিন ওরকমই ! আমি ভাবতেই পারছি না ! গত পরশু দিন ও আমার সাথে এক প্রকার জোর জবস্তিই শুরু করে ! আমি কোন রকমে চলে আসি ! আজকে আবার আমার স্কুলের সামনে এসে দাড়িয়েছে ! ভেবেছিলাম বাসায় ফোন দেব । কিন্তু বাসায় জানাতে ইচ্ছে করছে না !
আমি বললাম
-একা এসেছে নাকি কাউকে সাথে নিয়ে এসেছে ?
-দুজন বন্ধু আছে !
-আচ্ছা তুমি চিন্তা কর না ! আমি আসতেছি ! ১০ মিনিট লাগবে !
ফোন রেখেই আমি সুজন আর রাফি কে ফোন দিলাম । কি করতে হবে বললাম ! ওরাও বলল এসে যাচ্ছে !
যখন একাডেমিয়ার সামনে এসে হাজির হলাম তখন দেখি রাফিরা আমার আগেই চলে এসেছে । আমাকে দেখে এগিয়ে এল । দেখলাম ওদের সাথে আরও দু তিন জন ছেলে । ওদের মেসে থাকে শুনলাম ! যাক ভালই হল !
আমার চোখ নাভিন কে খুজতেছিল । যদিও কেবল একদিন দেখেছি তবুও ওকে চিনতে আমার খুব বেশি কষ্ট হল না । একাডেমিয়ার গেটের কাছের দাড়িয়ে আছে । সামনে দাড়ানো দুজনের সাথে কথা বলছে ।
আমি রাফিদের কে দাড়াতে বলে একাডেমিয়ার সামনে চলে গেলাম ! ফোন দিলাম মেয়েটাকে !
-আপনি চলে এসেছেন ?
-হুম ! বাইরে আসো !
-আপনি শিওর ?
-আরে ভয় পেও না ! বাইরে আসো তো ! আমি আছি !
আমার ফোন রাখার দু মিনিট পরেই মেয়েটা গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল ! আমার যেন সেদিনের মত আবারও একবার হার্ট বীট মিস হয়ে গেল । সেই মাতাল করা চোখ ! তবে ঐ দিনের থেকে মেয়েটাকে যেন আজকে একটু বড় মনে হচ্ছিল ।
আমি গেটের কাছে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার সামনা সামনি দাড়ালাম ! একটু হাসলাম ! মেয়েটাও চিন্তিত মুখে একটু হাসলো কিন্তু হাসি মিলিয়ে গেল আমার পেছনে কাউকে দেখে ! আমি নিশ্চিত জানি মেয়েটা কাকে দেখছে । আমি পেছনে ঘুরে তাকালাম । দেখি নাভিনও আমার দিকে তাকিয়ে বেশি খানিকটা অবাক হয়েছে । খানিকটা ভরকেও গেছে । অন্তত আমাকে সে এখানে আশা করে নি !
আমি আবারও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অভয় দেওয়ার চোখে তাকালাম ! তারপর এগিয়ে গেলাম নাভিনের দিকে !
-নাভিন, রাইট ?
নাভিন কিছু বলল না ! ওর পাশের দুজনও খানিক টা অবাক হয়েছে ! আমি নাভিনের কাঁঁধে হাত রাখলাম ! বললাম
-এসো আমার সাথে ?
-কোথায় ?
-আরে ভয় পেও না ! এই তো ঐ সিগারেটওয়ালার কাছে । সিগারেট খাও তো নাকি !
আমি জানি ও খায় !
-কোন ব্রান্ড ?
-লাইট !
আমি নিজের টাকায় কিনে দিলাম ওকে । ধরিয়েও দিলাম !
দুরে দাড়িয়ে মেয়েটা সাথে নাভিনের সাথে আসা দুজনই আমাদের দেখছে । তারপর আমি ঠান্ডা কন্ঠে নাভিন কে বললাম
-দেখ যা হয়েছে হয়েছে । এর পর থেকে ওর পেছনে লাগা বন্ধ কর !
তারপর নাভিনের মাথা ঘুরিয়ে রাফিদের দেখালাম ! আমি হাত নাড়াতে ওরাও হাত নাড়লো !
বললাম
-আমি এই খানেই থাকি ! ওদের দেখছো না, এরকম আরও চারটা গ্রুপ এই আসেপাশে আছে । আমি কেবল ডাক দিলেই চলে আসবে ! আর যদি কোন দিন এখানে তোমাকে দেখি কিংবা ও যদি কোন দিন আমাকে ফোন করে তোমার নামে কোন অভিযোগ করে তাহলে তোমাকে দুই হাত মাটির তলে পুতে ফেলবো বলে দিলাম ! বুঝেছো ?
একে তো আমি নাভিনের থেকে বয়সে বড় তার উপরে রাফিদের কে দেখে নাভিন এমনিতেই একটু ঘাবড়ে গেছে । তার উপর আমি ওকে হাসতে হাসতে এমন করে হুমকি দিলাম যে ওর অবস্থা সত্যিই খারাপ হয়ে গেল । আর কোন কথা না বলে ও সোজা হাটা দিল । সঙ্গে করে নিয়ে আসা ছেলে দুটোকে ডাকতেও যেন ভুলে গেল !
মেয়েটার কাছে আসতেই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি ওকে কি বললেন হাসি মুখে যে ও ওতোটা ঘাবড়ে গেল ?
-আমি কিছুই বলি নি তো । কেবল সিগারেট কিনে দিলাম দেখলে না ?
-তাই ?
-হুম !
মেয়েটা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-থ্যাঙ্কস !
-ইউ আর ওয়েলকাম ! ইয়ে মানে তোমার নাম টা আমি এখনও জানি না !
-আমিও আপনার নাম জানি না !
-তাই নাকি ? ঐ দিন আমি আমার নাম বলি নাই ?
-নাহ ! বলেন নি ! আর পরে হয়তো আমাদের আর দেখা নাও হতে পারে ! নাম জেনে কি হবে ?
এই বলে মেয়েটা হাসলো ! মেয়েটার চোখের ভাষা বলে দিল আমাদের পরে আবার দেখা হবে কি না !
কিন্তু সেটা !!
সেটা অন্য কোন গল্প !!
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।