ইশানার বয়ফ্রেন্ড

1K 32 0
                                    

  -এক্সকিউজ মি ?
নীলু অনেকক্ষন ভাবছিল কথাটা ছেলেটাকে বলবে কিন্তু ঠিক মত বলতে পারছিল না । একটু সংকোচ হচ্ছিল মনের ভিতর ! এভাবে একটা অপরিচিত মানুষের সাথে হঠাৎ করেই তো আর কথা বলা যায় না । তবুও নীলু কথাটা বলেই ফেলল ।   

সকাল বেলাতেও সব কিছু ঠিক ছিল ! ক্যাম্পাসে সব কিছু ঠান্ডা ! কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই নীলুদের ক্যাম্পাসটা যেন রন ক্ষেত্রে পরিনত হল ! দুই রাজনৈতিক দলের মারামারিতে চারিদিকে একটা যুদ্ধক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্র ভাব ! স্যারেরা একদিনের ভিতর হল খালি করার নির্দেশ দিয়ে দিল ! নীলুর ঢাকায় এমন কোন আত্মীয় নাই যে সেখানে রাতে থাকবে ! ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে সোজ স্টেশন !

টিকিট কেটে কম্পার্টমেন্ট উঠে পড়লো ! সেখানেই ছেলেটার সাথে দেখা !

নীলু মনে মনে গুছিয়েও নিয়েছে কি কি বলবে ! ছেলেটা নীলুর দিকে তাকালো তখনই !
-আমাকে কিছু বলছেন ?
ছেলেটা এবার নীলু দিকে সরাসরি তাকিয়ে ! নীলু কিছু বলতে যাবে তখন ওর চোখ লোকটার দিকে গেল ।
কি শান্ত আর বিষন্ন চোখ !
লীলুর কথা হারিয়ে গেল ! যা বলতে চেয়েছিল আর কিছুই মনে করতে পারলো না । কেবল মনের ভিতর একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো যে ছেলেটার মন বিষন্ন কেন ?
ছেলেটা আবার বলল
-কিছু বলবেন ?
-না মানে ? প্লিজ দয়া করে দরজাটা বন্ধ করবেন না !
ছেলেটা দরজার দিকে একবার তাকালো ! তারপর নীলুর দিকে ! এই ফার্ষ্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টে কেবল দুজন যাত্রী । নিলু আর ছেলেটা। নীলু যতদিন এই ট্রেনে করে বাসায় গেছে ততদিনই কম করে হলেও ছয়সাত জন করে গেছে এই কামড়াটায় ওর সাথে । অবশ্য প্রত্যেকবারই ওর সাথে কেউ না কেউ থাকে । এই ভাবে একা একা এ প্রথম ! আর কি কপাল ওর এই বারই ও একদম একা !
নীলু ছেলেটার দিকে আবার তাকালো ! কম বয়সই তো মনে হয় ! খুব বেশি হলে ২৫/২৬ বয়স হবে ! নীলুর থেকে চার-পাঁচ বছরের বড় হবে !
নীল রংয়ের একটা জিন্স পরে আছে সাথে কালো ফুলহাতা শার্ট !

লীলু যখন প্রথম এই কম্পার্টমেন্টে ঢোকে তখন কামড়াটা ফাঁকাই ছিল । একদম শেষ মুহুর্ত ট্রেনে উঠে ছেলেটা ! তারপর থেকে নীলুর অস্বস্থি শুরু !

ছেলেটা খানিকটা হেসে বলল
-আপনি ভয় পাবেন না ! দরজা বন্ধ হবে না । যদিও ফার্ষ্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টের দরজা বন্ধ রাখার নিয়ম । আপনি টেনশন নিয়েন না !
এই বলে ছেলেটা আবার হাসলো !
লোকটার হাসি সুন্দর । বাচ্চাদের মত । কিন্তু সেই হাসিতে এখনও সেই বিষন্নতা লেগে আছে !
একবার কি জানতে চাইবে ?
নাহ !
নীলু নিজেকে ধমক দিলো । কোথাকার কে না কে ! একটু হেসেছে বলে এমন প্রশ্ন করা যায় নাকি !


-একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
-আমাকে ?
-হুম ! আর কেউ নাই এখানে !
-করুন !
-ট্টেন ছাড়ার পর থেকেই দেখে আসছি আপনি একই ভাবে মানি ব্যাগটা খুলে সেটার দিকে তাকিয়ে আছেন !
ছেলেটা আবার নিজের খোলা মানিব্যাগের দিকে তাকালো !
নীলু বলল
-মানি ব্যাগে কি আছে ? আপনার ওয়াইফের ছবি ?
ছেলেটা হাসলো !
-নাহ ! ঠিক ওয়াইফ না ! সম্ভাব্য ওয়াইফ !
-তার মানে প্রেমিকা ?
-বলতে পারেন !
-ছেড়ে যাচ্ছেন কোথাও ! এই জন্য মন খারাপ ?
এই কথাটা শুনেই ছেলেটা নীলুর দিকে ফিরে তাকালো ! চোখ দিয়ে মনে হল একটু জল গড়িয়ে পড়লো !
নাকি নীলুর চোখের ভুল !
চোখের ভুল হবে হয়তো ! ছেলেটা নীলুর কথার জবাব দিলো না ! আবারও মুখ বুজে চেয়ে রইলো মানিব্যাগের দিকে !

বাহরে ! কি এমন প্রেমিকা ! ছেড়ে যাচ্ছে বলে সারাটা সময় তার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ? এটা কোন কথা হল !
ছেলেটার আচরন তো ম্যাচুরিটি নাই ! টিনএজ বাচ্চা দের মত কাজ করছে !
নীলু এবার একটু বিরক্ত হল ! এক জলজ্যান্ত মেয়ে তার সামনে বসে আছে সে দিকে কোন খেয়াল নাই ! সে তাকিয়ে আছে কাগজে ছাপা একটা চেহারা দিকে !
নীলু নিজের অবাক হয়ে গেল ওর ভাবনা দেখে !
আশ্চর্য ! সে বিরক্ত কেন হচ্ছে ?
ছেলেটা যদি তার দিকে খেয়াল না দেয় তাহলে তো তার জন্যই ভাল !

বেশ কিছুক্ষন পরে ছেলেটা আপনা থেকেই বলল
-আসলে আজকে ইশানার সাথে আমার পালিয়ে বিয়ে করার কথা ছিল !
নীলুর প্রথমে মনে হল একটু ভুল শুনলো ! তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
-ঠিক বুঝলাম না !
-আসলে আজকে এখানে আমার একলা আসার কথা ছিল না ! সাথে ইশানার থাকার কথা ছিল ! ও থাকলে হয়তো আপনি এতোটা অস্বস্থি বোধ করতেন না !

নীলু আসলেই একটু অস্বস্তি বোধ করছিল । যতই বলুক দরজা না বন্ধ করতে হাজার হলে সে হচ্ছে একটা ইয়াং ছেলে ! এই ভাবে একজন ছেলের সাথে পুরো রাত জার্নি করাটা একটা মেয়ের জন্যই অস্বস্থির কারনই বটে !
তবুও নীলু খানিকটা ফ্যাকাসে ভাবে হেসে বলল
-না ঠিক আছে ! আপনি বিয়ে নিয়ে কি যেন বললেন ?
ছেলেটা একটু থামলো ! একবার তাকালো মানিব্যাগটার দিকে ! তারপর বলল
-আসলে আজকে এই ট্রেনে করেই ইশানার মানে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান ছিল !
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? আমি একাই যাচ্ছি এখন ?
-আপনার গার্লফ্রেন্ড কই ?
-আসে নাই !
-আসে নাই ?
-নাহ !
-কেন ? বাসায় জেনে ফেলেছিল ?
-না । আসলে ঝোকের মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ! ইশানাও ঝোকেও মাথায় হ্যা বলেছিল ! তারপর ও যখন বুঝলো যে ভুল করতে যাচ্ছে তখন আর আসল না !

নীলু অবাক হয়ে কিছুক্ষন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আচ্ছা এই কারনেই মনে হয় মন খারাপ ! সামনের দিনের কিছু চমৎকার স্বপ্ন হয়তো দেখেছিল ছেলেটা । নিমিষেই তা নষ্ট হয়ে গেছে !

নীলু কি বলবে ঠিক বুঝ উঠতে পারলো না ! পুরো কামড়াটার ভিতর কেবল ট্রেনের কু ঝিক ঝিক ঝিক আওায়জ ছাড়া আর কিছু নেই । আজকে কি ট্রেনে কোন লোকজন উঠে নাই নাকি ?
নীলুর অস্বস্তিটা একটু কমে গেল ! কেন জানি মনে হয় এই ছেলে তার কোন ক্ষতি করবে না !

নীলু আবার জানতে চাইলো
-তাহলে আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
-জানি না !
-মানে কি ? জানেন না মানে কি ?
-সামনের কোন প্লান নাই ! দেখা যাক কোথায় যাওয়া যায় ! তা আপনি একা একা যাচ্ছেন কোথায় ? রাতের বেলা মেয়েদের একা একা এভাবে যাওয়া ঠিক না !
-আমি বাসায় যাচ্ছি ! হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসে গন্ডোগোল হয়েছে । স্যারেরা এক হল ভ্যাকেন্সীর নোটিস দিয়ে দিয়েছে ! তাই বাধ্য হয়েই ...

ছেলেটা আর কোন কথা বলল না ! আবার নিজের মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে রইলো !

নীলুও কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলো । তবুও মনটা ছেলেটার দিকেই পড়ে রইলো ! বারবার ছেলেটার জন্য একটু কষ্ট হতে লাগলো !
নীলুর মনে আছে একবার আসিফের সাথে ওর সোনার গায়ে যাওয়ার কথা ছিল । নীলু সকাল বেলা থেকে সেজে গুজে বসে ছিল আসিফের জন্য । কিন্তু আসিফের কোন দেখা নেই ! টিন ঘন্টা বসে থাকার পর জানা গেল সে আসবে না ! জরুরী কাজ আছে । সেদিন আসিফের উপর খুব রাগ হয়েছিল নীলুর । তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিল । সারা টা দিন আসিফের সাথে কাটানোর প্লান ছিল । কর কিছু ভেবে রেখেছিল নীলু । কিন্তু কিছুই হয় নাই !
ঐ ছেলেটাও নিশ্চই ইশানার সাথে ঘর বাঁধার নিয়ে কিছু ভেবে রেখেছিল ! কিন্তু কিছু হয় নি ! ধুপ করে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে !

গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল নীলু বলতে পারবে না । হঠাৎ করেই কার ডাকে যেন ঘুম ভাঙ্গল নীলু ! চোখ মেলে দেখে মাঝ বয়সী একটা মহিলা ওর সামনে দাড়িয়ে !
-এই মেয়ে !
একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নীলু বলল
-জি !
-এভাবে দরজা খুলে কেউ ঘুমায় নাকি ট্রেনে ভিতর !
-না মানে !!
-যদি কেউ ঢুকে পড়তো । তখন ?
আসলেই তো এভাবে ঘুমিয়ে পড়া ঠিক হয় নাই ! কিন্তু ঐ ছেলেটা কই !
নীলু বলল
-আমার সাথে এক জন যাত্রী ছিল তো !
-কই ? আমরা যখন আসি তখন তো কেউ ছিল না !
-ছিল না ?
নীলু এদিক ওদিক একটু দেখলো ! ট্রেনটা থেমে আছে । ছেলেটা কি নেমে গেছে ?
আর কোন কথা না বলে নীলু কামড়া থেকে বেরিয়ে পরলো । কয়েকটা কামড়ায় উকি দিয়েও দেখলো ।
নাহ ! কোথাও নাই ! আবার যখন নিজের কামড়ায় ফেরে এল তখনও ছেলেটা আসে নাই !
ওর কামড়ায় মাঝ বয়সী মহিলা সাথে এক ভদ্রলোক ততক্ষনে আসন নিয়ে বসেছে !
লোকটা বলল
-সাথে কে ছিল ?
-চিনি না !
-ও ! নেমে গেছে ?
-তাই তো মনে হচ্ছে !
মহিলা বলল
-দেখো আবার কিছু নিয়ে যায় নি তো !

নীলু বলল
-না না ! কিছু নিয়ে যায় নি !
নীলু মনেই হয় নি ছেলেটা ওর কিছু নিয়ে নেমে যেতে পারে ! ছেলেটা বলেছিল কোথায় যাচ্ছে জানে না। হয়তো কোন স্টেশনে নেমে গেছে ! একটু মন খারাপ হল নীলুর । আরো কিছু জানার ছিল ছেলেটার কাছ থেকে । এখনও তো ছেলেটার নামই জানা হয় নাই !
কেবল জানে ছেলেটার প্রেমিকার নাম ইশানা !

ট্রেনের উইসেল দিয়ে দিয়েছে । একটু ঝাকি দিয়েই ট্রেনটা নড়ে উঠলো ! তারপর চলতে শুরু করলো আস্তে আস্তে !
নীলু জানলার ধারে গিয়ে বসলো ! মনটা একটু বিষন্ন ! ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে । আরো কয়েকটা কথা জানতে পারলে ভাল হত ! জানলা দিয়ে বাইরে তাকলো । ট্রেনটা তখনও ঠিকমত গতি পায় নি ! আস্তে আস্তে পুরো স্টেশনটা পেছনে ফেলে এসেছে ।
কয়েক মুহুর্ত পরেই নীলুর চোখ পাশের রাস্তার দিকে গেল ! চারি দিকে অন্ধকার তবুও চাঁদের নিলাভ আলোতে নীলু ঠিকই বুঝতে পারলো নির্জন রাস্তা দিয়ে কেউ একজন হেটে যাচ্ছে !
ছেলেটা আস্তে আস্তে হাটছে । তার কোন গন্তব্য নেই । যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে যাব । ছেলেটির হাতে একটা মানিব্যাগ ধরা ! যেখানে তার প্রেয়সীর ছবি আছে !

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Onde histórias criam vida. Descubra agora