এই দুপুর বেলা এমন বৃষ্টি নামবে ভাবিনি । নিউ মার্কেটে এসেছিলাম । অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পাওয়া গেল । কোন মতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছি তবে খুব একটা লাভ হচ্ছে না । ভিজে যাচ্ছি ঠিকই । রিক্সা চলতে শুরু করলে বৃষ্টির ছিটেফোটা ঠেকানো কষ্টকর হয়ে উঠল ।
নাহ ! আজকে খবর আছে ! বৃষ্টির পানি আমার একদম গায়ে সহ্য হয় না ! বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর চলে আসে । আমি রিক্সাওয়ালাকে জোরে চালাতে বললাম !
পুলিশ বক্সের কাছে এসে নিশাতকে দেখতে পেলাম । ছাতা নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে । কিন্তু বৃষ্টির যা অবস্থা খুব একটা লাভ হচ্ছে না । অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে ভিজে গেছে । আর একটু দাড়িয়ে থাকলে সম্পুর্ণ ভিজে যাবে । আমি রিক্সা দাড় করালাম ওর সামনে । রিক্সার ভিতর থেকেই ডাক দিলাম ওকে । আমার ডাক শুনে খানিকটা চমকালো ।
আমি বললাম রিক্সায় "উঠে আসো । ভিজে যাচ্ছ" ।
-না ঠিক আছে ।
-না ঠিক নেই । অর্ধেক অলরেডি ভিজে গেছ । এভাবে আরো কিছুক্ষন থাকলে পুরো ভিজে যাবে । ঠান্ডা লেগে যাবে । উঠে এস ।
-না আমি ঠিক আছি । রিক্সা নিয়ে চলে যাবো ।
-আরে পাগল হয়েছে ? যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কোন রিক্সা যেতে চাইবে না । উঠে এস ।
-না আমি আপনার সাথে যাবো না ।
ও এই ব্যপার ! আমি রিক্সা থেকে নেমে এলাম । বললাম
-আচ্ছা ঠিক । আমার সাথে যেতে হবে না । তুমি এই রিক্সা নিয়ে চলে যাও । নাকি তাও যাবা না ?
নিশাত মনে হয় এটা আশা করে নি । আর কোন কথা না বলে রিক্সায় উঠে বসল । পলিথিন ঠিকঠাক করে নিল । তারপর কি মনে হল ওর ছাতাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । বলল
-আপনি ভিজে যাচ্ছেন ।
আমি বললাম
-আমি ভিজলে সমস্যা নাই ।
তবুও নিলাম ছাতাটা ।
রিক্সা চলতে শুরু করল । আমি দাড়িয়ে আছি । নিশাতের ছাতাটা হাতে ধরা । মেলতে ইচ্ছা করছে না । কেন জানি ভিজতে ইচ্ছা করছে । হটাৎ করে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুদ চিন্তা মাথায় এল ।
নিশাতের সাথে এমন ভাবে যদি বৃষ্টিতে ভেজা যেত ! মন্দ হত না ।
আমি নিশাতের রিক্সা করে চলে যাওয়াটা দেখছি । ঐ দিকেই তাকিয়েই আছি । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিশাত রিক্সার পেছন পর্দা তুলে ও আমার দিকে তাকাবে । এক ভাবে তাকিয়েই থাকলাম । কিন্তু আমার ধারনা সত্যি হল না । নিশাত ফিরে তাকালো না ।
মন খানিকটা খারাপ হল ।
নিশাত মেয়েটা এমন কেন ! একবার ফিরে তাকালে কি হত ! এই মেয়েটা আসলেই এমন ।
প্রথম যেদিন নিশাতের সাথে দেখা হয় কি ব্যবহারটাই না করেছিল !
নিশাত আমার বাড়িয়ালার মেয়ে । প্রথম যে দিন ওর সাথে দেখা হল যে ঝাড়িটাই না আমাকে মারল । সকাল বেলা মালপত্র নিয়ে বাসায় উঠেছি । সারা দিন গোছগাছে ব্যস্ত ছিলাম । সন্ধ্যার দিকে একটু অবসর নিলাম । যদিও তখনও অনেক কাজ বাকি ছিল । মন বলছিল একটু বিরতি নিতে ।
আমার ফ্লাটটা ছিল ছয় তলায় । তার উপরেই ছাদ । ছতলা বেয়ে নিচে নামার চেয়ে ছাদে যাওয়া টাই শ্রেয় মনে করলাম।
ছাদে উঠে হাওয়া খাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে খুব কঠিন গলায় কেউ বলে উঠল
-আপনি ছাদে কেন উঠেছেন ?
পিছনে ঘুরে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । বিশ বাইশ বছরের একটা মেয়ে । গায়ের রং শ্যামলা । কিন্তু মুখে একটা মায়া মায়া ভাব ছিল । প্রথম দেখাতে যে কারো পছন্দ হবে । আমি ভাবতেই পারছিলাম না এই মায়া করা চেহারার মেয়েটা এতো কঠিন করে কথা বলতে পারে ।
মেয়েটা আবার বলল
-আপনি কেন ছাদে উঠেছেন ?
আমি ততক্ষনে সামলে নিয়েছি । বললাম
-এমনি উঠেছি । হাওয়া খেতে বলতে পারেন ।
-আপনি জানেন না ছাদে ওঠা নিষেদ ? বাবা আপনাকে বলে নি ?
-কই আমি জানি না তো । আর ছাদে ওঠা নিষেধ এমন কোন সাইনবোর্ড ও লেখা নাই ।
কোন জুটসই উত্তর না খুজে পেয়ে মেয়েটার মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল । বলল
-এখন বলছি এরপর থেকে আর ছাদে উঠবেন না ।
-আরে কেন উঠবো না । এটা কোন কথা ? দেখেন আমি ছতলার বাসাটা ভাড়া নিয়েছি । তারমানে ঐ ফ্লাটের সব কিছুই আমার আন্ডারে পড়ে । ছাদও পড়ে । সুতরাং আমি আসবো ।
দেখলাম মেয়েটা মুখটা আরো লাল হয়ে গেল । ঘুরে যাওয়ার আগে বলে গেল
-আপনি কিভাবে এ বাড়িতে থাকেন আমি দেখবো ।
আমি বেশ মজা পেলাম । কি মেয়ে রে বাবা । বাসায় আসতে না আসতেই বাড়ি ছাড়ার হুমকি !
পরদিনই দেখলাম ছাদের দরজায় তালা মারা । আমার ছাদের ওঠার সমাপ্তি ঘটল । পরে খোজ নিয়ে জানলাম মেয়েটা বাড়িওয়ালীর মেয়ে । একমাত্র মেয়ে । নাম নিশাত । একটু বদমেজাজী ।
কি এক অজানা কারন বসত ছেলেদের একটুও দেখতে পারে না । কেন কে জানে !
বাসায় আসতে না আসতেই জ্বর চলে এল । ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম ! তার আগে নিশাতের ছাতাটা বারান্দায় মেলে দিলাম । ছাতা এই প্রথম খুললাম । ও যখন ছাতাটা আমাকে দিল কেন জানি খুব ভাল লাগল ।
আমি ভিজে যাচ্ছি বা ভিজে যাবো এই জন্য কি ছাতাটা ও দিল নাকি ওর জন্য রিক্সা ছেড়ে দিলাম তার প্রতিদান স্বরুপ আমাকে ছাতাটা দিল । দ্বিতীয়টা হবার সম্ভাবনাই বেশি । যাক তবুও তো মেয়েটার মাঝে কৃজ্ঞতা বোধ আছে । সে হিসাবে দেখতে গেলে মেয়েটা কিন্তু একেবারে খারাপও না ।
সবার সাথে ভাল ব্যবহার ই করে কেবর ছেলেদের উপরেই যত রাগ ওর । আমি এর আগেও লক্ষ্য করেছি ও ছেলেদের যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে ।
কেন চলে ?
নিশ্চয়ই ওর জীবনে পুরুষ মানুষ নিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রয়েছে । এবং ঘটনা ঘটেছে বেশ ছোট বয়েসেই । আর তখন থেকেই ছেলে মানুষের প্রতি ওর এতো রাগ ।
পরদিন শরীর একটু ভাল হল ! সন্ধ্যার দিকে দেখলাম ছাদের দরজা খোলা । তার মানে নিশাত ছাদে উঠেছে । যাক একটু কথা বলা যাক । আজকে মনে হয় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না ।
নাকি করবে ? করতেও পারে । বিশ্বাস নাই ।
আমি আমার ছাতাটা নিয়ে ছাদে গেলাম । নিশাত ফুলের টবে পানি দিচ্ছিল । আমাকে দেখে সোজা হয়ে দাড়াল । মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলাম । যাক কিছু বলে নি ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমাকে অবাক করে দিয়ে নিশাত বলল
-আপনার জ্বর এসেছিল ?
-এই তো ! বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে আমার । বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না একদম !
নিশাত আর কিছু না বলে পানি দিতে লাগলো আবার ! আমি বললাম
-ছাতা টা।
নিশাত একবার ছাতার দিকে তাকাল । চোখে জিজ্ঞাসা । বলল
-এটা তো আমার ছাতা না ।
-হুম । তোমার না । আসলে তোমার ছাতাটা আসতে আসতে হারিয়ে ফেলেছি ।
-হারিয়ে ফেলেছেন ? এই টুকু রাস্তা আসতে আসতে হারিয়ে ফেললেন ?
-আসলে বাসে উঠেছিলাম তো । সিটের উপর রেখেছিলাম । নামার সময় আর নিতে মনে ছিল না ।
নিশাত খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল
-আসলে মিথ্যা কথা বললে অনেক ভেবে চিন্তে বলতে হয় । তা না হলে ধরা পড়ে যেতে হয় ।
-না । আমি মিথ্যা কথা কেন বলল বল ?
-অপু সাহেব আপনি যখন রিক্সা করে বাড়ির সামনে নামলেন তখন আমি আমার ঘরের জানলার কাছে বসে ছিলাম । আর আমার ঘরের জানলা থেকে আমাদের বাড়ির গেটটা পরিস্কার দেখা যায় । কে আসল না আসল কার হাতে কি আছে কি নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকছে সব পরিস্কার দেখা যায় ।
আমি বোকার মত হাসার চেষ্টা করলাম । নিশ্চই একটা ঝাড়ি মারবে এখন । কিন্তু দেখলাম ঝাড়ি মারল না ।
বলল
-জানতে পারি কেন মিথ্যা কথাটা বললেন ?
আমি আসলে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । বুঝতে পারি নি এভাবে ধরা খেয়ে যাবো ।
নিশাত বলল
-আচ্ছা তার আগে আর একটা প্রশ্নের জবাব দিন । ভর দুপুর বেলা ঐ কাজটা কেন করলেন ? ও রকম বৃষ্টির মধ্যে নেমে গিয়ে আমাকে রিক্সাটা দিয়ে দেওয়াটা কেমন যেন লাগল আমার কাছে ।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম ।
তারপর বললাম
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।