-মিরা টাই টা একটু বেঁধে দাও তো ।
মিরা আমার দিকে এমন ভাবে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যেন আমি অন্য কোন ভাষায় ওর সাথে কথা বলেছি । এই মেয়েটা সব সময় এমন বিরক্ত হয়ে কেন তাকিয়ে থাকে কেন কে জানে ? এর বাবা মা ভাই কেউই তো এমন করে কথা বলে না ।
আমি আবার মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কানে সমস্যা তোমার ?
-মানে ?
-নাকি বাংলা বুঝো না ? বাংলা ? ইংরেজিতে বলবো নাকি হিন্দিতে ?
মিরা মুখ আরো কঠিন করে বলল
-আপনি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন ?
-তোমার সাথে আমি ইয়ার্কি কেন মারবো ? তুমি তো আমার শ্যালিকা হও না, তাই না ? তোমার ছোট ভাই অবশ্য আমার শ্যালক ....
-চুপ । আপনি আর একটা কথা বলবেন না । কি জন্য এসেছেন বলেন ? আমি ভার্সিটিতে যাবো ।
-আরে আমিও তো অফিস যাবো । এই জন্য তোমার কাছে এসেছি । দেখো টাই বাঁধতে পারছি না । একটু কষ্ট করে যদি বেঁধে দিতে ।
-দিস ইজ টু মাচ ।
-আরে একটু বিপদে পড়েছি । প্রতিবেশী হিসাবে একটু সাহায্য করবে না ?মিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিরার মাকে পিছনে দেখা গেল । আন্টির হাতে আটা জাতীয় কিছু লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপর মিরা ? ছেলেটার সাথে এমন করে কেন কথা বলছিস ?
মিরা কোন কথা বলল না । আমি বললাম
-দেখেন একটু হেল্প করতে বলছি করছে না । টাইয়ের নট খুলে গেছে কিছুতে বাঁধতে পারছি না । টাই বাঁধতে পারি না বলে নটটা খুলিও না কোন দিন কিন্তু এখন কি করি বলেন তো ।
মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-টাই বাঁধতে পারেন না টাই পরার দরকার কি ?
-এই কথা তো আর বস শুনবে না ।
মিরার মা পেছন থেকে বলল
-টাই বাঁধতে পারে না তো কি হয়েছে ? তোর বাবাও তো টাই বাঁধতে পারে না । আমার হাতে আটা লেগে আছে । তুই একটু বেঁধে দে ।
-মা ।।।
-আরে কি আশ্চর্য । একটু টাই বেঁধে দিলে কি হবে ?মিরার মা আমাকে বেশ পছন্দ করে সেই শুরু থেকে । বিশেষ করে মা যখন বড় ভাইয়ের বাসা থেকে মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে দেখি দুজনে মিলে কত কথা বলে । যেন হারানো দুই বান্ধবী । কি কথা বলে কে জানে ।
আমি দরজা দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকে মিরার সামনে টাইটা এগিয়ে দিলাম । মিরা মুখে বিরক্তি নিয়ে আমার টাই বাঁধতে লাগলো ।
আমি বললাম
-তুমি আমার উপকার করছো বদলে আমি তোমাকে ভার্সিটিতে পৌছে দেই ।
-জি না, ধন্যবাদ । আমার উপকার আপনার করার দরকার নেই ।
আবারও আমার উপকারে মিরার মা এগিয়ে এল । রান্না ঘর থেকেই বলল
-কেন যাবি না ?
-মা । আমি যেতে পারবো ।
-যাবি তো বাসে করেই । গাড়িততে করে গেলে কি হবে ?
-মা আমি ভার্সিটির গাড়িতে করে যাবো । তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না ।
স্বাধারনত মিয়া কোন দিন আমার সামনে, এটো কাছে আসে নি । আমার কেন জানি মনে হল মিরা আমার বিয়ে করা বউ । অফিসে যাওয়ার সময় ও আমার টাই টা বেঁধে দিচ্ছে । আহা ।
জীবন কি চমৎকার ।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।