রূপকথার গল্প ০২

888 26 1
                                    

যখন ঈশিতা আমাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে চাইতো কিংবা কোন আবদার নিয়ে আসতো তখন ও রান্না করে নিয়ে আসতো। ও খুব ভাল করেই জানতো ওর হাতের রান্না আমি কত পছন্দ করি। সেই ভার্সিটি থেকে শুরু। কেবল এই এক রান্না দিয়ে ও যে জীবনে আমাকে কত কিছু রাজি করিয়েছে সেটার কোন হিসাব নেই। আর আরেকটা ছিল আমার পছন্দের পোষাক। সেটাও কাজে লাগাতো আমাকে পটানোর জন্য। যদিও আমি অনেক আগেই পটে ছিলাম।

তাই আমি জানতাম আজকে ঈশিতা আমার পছন্দের পোষাক টাই পরে আসবে। একেবারে ধবধবে সাদা কামিজে ওকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে। খানিকটা মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না যেন। আমি ওকে সহজ করতে বললাম
-আজকে আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন?

কথাটা বলতেই ও আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তখনই আমার বুকের ভেতরে একটা তীব্র হাহাকার সৃষ্টি হল। মনে হল আজকের পরে আর কোন দিন এই গভীর চোখের দিকে তাকানো হবে না। আর কোন দিন এই চোখের দিকে তাকিয়ে বলা হবে না ভালবাসি।
আমি বললাম
-জীবনে সব কিছু নেমে নিতে হয়। তাই না?
ঈশিতা বলল
-আমাকে খুব খারাপ মনে হচ্ছে? প্রতারক!
-নাহ! কি যে বল। তোমার কি করার আছে! আমিও হয়তো এই এক কাজ করতাম।

ঈশিতা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কোন কথা যেন খুজে পাচ্ছে না অথবা বলতে চাইছে না। আমি বললাম
-তোমাকে সুন্দর লাগছে আজকে।
ঈশিতা বলল
-তোমার চোখে আমি তো সব সময়ই সুন্দর লাগি।
-একটা অনুরোধ করবো?
-বল।
-আর কোনদিন এই পোষাকটা পর না। এই সাদা সেলোয়ার আর সাদা ল্যাগিংস আর সাদা ওড়না। কেমন! আমার জন্যই এটা পরতে। আমিই যখন আর থাকবো না তখন আর কোন দিন পরো না। আমি চাইনা তোমার এই সৌন্দর্য টা আর কারো চোখে ধরা পড়ুক।

আমি তাকিয়ে দেখি ঈশিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে। আহ! আমার ঈশু আর কোন দিন এই চোখের পানি মুছে দেওয়া হবে না। কোন দিন আর হাত ধরে হাটা হবে না।

পড়াশুনা শেষ হওয়ার পরপরই আমার এনজিওতে চাকরি হয়ে যায়। মোটামুটি মানের চাকরি। চাকরির বাজারের এই দুর্মূল্যে সেটা আমার কাছে অনেক কিছু ছিল। বেতনও খারাপ না তবে খুব ছোটাছুটি করতে হবে। ঈশিতা এদিকে সরকারি চাকরি ছাড়া করবে না। ওকে বললাম বিয়ের কথা। ও খুব একটা আপত্তি করলো না। পারিবারিক ভাবেই কথা এগোচ্ছিলো। ঈশিতার বাবার অবশ্য আরও ভাল কিছুর চাহিদা ছিল কিন্তু মেয়ের ইচ্ছের কাছে তিনি আর কথা বলেন নি। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কথা ছিল সামনের বছরেই আমাদের বিয়েটা হবে। ঠিক সেই সময়ই ঈশিতার বিসিএসের রেজাল্ট দিয়ে দিল। ওর আশা ছিল হয়তো শিক্ষা ক্যাডারে হবে কিন্তু রেজাল্টে দেখা গেল ও একেবারে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেছে। সহকারী কমিশনার।

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Wo Geschichten leben. Entdecke jetzt