-ভাইয়া জানিস আমাদের পাশের বাসায় কারা এসেছে ?
একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখছিলাম সামুতে । খানিকটা বিরক্ত হলাম এনীর কথার । বললাম
-জ্বালাস না তো । দুর হ ।
এনীর চেহারায় বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ দেখলাম না ।
-আহা ভাইয়া শোন না ? ঐ যে এয়ার টেলের এড করে না স্পর্শীয়া !
-কে ? স্পর্শীয়া কে ?
-তুই স্পর্শীয়াকে চিনিস না ?
এনী এমন অবিশ্বাসের চোখে আমার দিকে তাকালো মনে হল যেন আমি স্পর্শীয়াকে না চিনে বড় অপরাধ করে ফেলেছি ।
-তুই আসলেই একটা পায়জামা । সারা দিন আছিস কম্পিউটার আর গিটার নিয়ে । কাজের কাজ তো কিছুই না ।
কথা সত্য । আমি সারা দিন কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকি । রাত হলে ছাদে গিয়ে গিটার বাজাই ইচ্ছা হলে । ইদানিং অবশ্য প্রায় প্রতিদিন রাতেই ছাদে উঠে গিটার বাজাই । পাশের বাড়ির সুপ্তি নামের একটা দেখি খুব বারান্দায় ঘোরাফেরা করছে । বিশেষ করে আমি যখন গিটার বাজাই তখন ।
এনী ঘর থেকে চলে গেল । এনী যেতেই আমি ইন্টার্নেটে স্পর্শীয়া লিখে সার্চ দিলাম । একটু দেখা দরকার এনী কাকে নিয়ে এতো মাতামাতি করছে ।
কে এই ইস্টার ।
গুগলে সার্চ দিতে বেরিয়ে এল মেয়েটার ছবি । বাহ ! বেশ কিউট তো !
পিচ্চি পিচ্চি মনে হচ্ছে ! চেহারায় একটা মিষ্টি ভাব আছে !
এই মেয়ে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এসেছে । ভাল তো !
কিন্তু এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই । এই মেয়ে এমনিতেও সুন্দরী তার উপর আবার মিডিয়া জগতের লোক । এর তো ভাবই হবে অন্য রকম । এর পেছনে ঘুরে কোন লাভ নাই ।
আমি বরং পাশের বাড়ির সুপ্তির দিকে মন নিবেস করি । ওখানে কিছু একটা হলেও হতে পারে ।
মডেল কন্যার আগমনে আমার জীবনের খুব একটা পরিবর্তন হল না । আগের মতই আমি আমার কাজ করতে লাগলাম । কিন্তু আমাদের এলাকায় একটা বেশ বড় সড় পরিবর্তন এল । আমাদের এলাকাটা আবাসিক তাই খুব একটা দোকান পার্ট এখানে নাই । কেবল গলির শুরুর মাথায় রমিজ মামার একটা বড় মুদি দোকান রয়েছে ।
আর আমাদের বাসাটা হল গলির একদম শেষ বাসা । এর পর থেকে আবার রাস্তা । আমাদের বাসার পিছন দিকে একটা ছোট খাটো দোকান । এই যা । আর বাদ বাকী গুলো সব রাস্তার ও পাশে । পাড়ার ছেলেদের আড্ডার স্থানও হল ঐ রমিজ মামার দোকানের সামনেই ছিল ।
কিন্তু মডেল কন্যার আগমনের ফলে রমিজ মামার দোকানের আড্ডা প্রতিস্থাপিত হয়ে আমাদের বাড়ির পিছনে চলে এল ।
একদিন প্রায় সামনা সামনি স্পর্শীয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল । দুপুরের দিকে একটা ক্লাস ছিল । আমি গেট দিয়ে বের হতেই স্পর্শীয়া কে দেখতে পেলাম । সাধারনত মিডিয়া জগতের লোক গুলো বাস্তবে অততা সুন্দর হয় না কিন্তু স্পর্শীয়া আসলেই দেখলাম দেখতে বেশ সুন্দর । বিশেষ করে ওর চোখ আর পাতলা ঠোট আসলেই পাগল করা ।
আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করলাম ।
আকাশ মিয়া ?
চাঁন্দের দেখো ভাল কথা ! তার দিকে হাত বাড়াইও না । এর চেয়ে যে তোমার লেভেলে আছে সেদিকে মন নিবেস কর !
স্পর্শীয়া মনে হয় কোথাও গিয়েছিল । দেখলাম একটা সুদর্শন আর পাংকু মত ছেলে ওকে বাইকে করে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল । নিশ্চই বয়ফ্রেন্ড হবে । নাও হতে পারে ! আমি যেমন ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম পাড়ার ঐ ছেলেদের জটলাটাও দেখলাম একই দিকে তাকিয়ে আছে ।
কি দেখছে কে জানে ?
আর আমিই বা কি দেখছি ? আমি এভাবে তাকিয়ে আছি কেন ?
স্পর্শীয়া ধীরে সুস্থে নামল বাইক থেকে । পাংকু ছেলেটাকে বিদায় দিল । তারপর যখন বাড়ির দিকে আসল আমাকে দেখে একটু হাসল । আমি একটু বিভ্রান্ত হল ।
আন্তরিক আর মিষ্টি হাসি । কিন্তু সমস্যা হল আমাকে দেখে স্পর্শীয়া হাসবে কেন ?
-আকাশ ভাইয়া ভাল আছেন ?
এই সেরেছে ! আবার কুশলও জানতে চাচ্ছে ! পাড়ার ছেলে গুলো তখনও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি আসলে স্পর্শিয়ার এমন আচরনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । কোন রকম বললাম
-এই তো আছি । তুমি ভাল ?
তুমি করেই বললাম । ইদানিং দেখি এনীর সাথে স্পর্শীয়ার খুব ভাব হয়েছে । এনীতো সারা দিন ওদের বাসাতেই থাকে । এই সুবাদেই তুমি বললাম । স্পর্শীয়া বলল
-ভাল আছি । কোথাও যাচ্ছেন ?
-হুম । একটা ক্লাস আছে ।
-ও । আচ্ছা !
এই বলে স্পর্শীয়া আবার হাসি দিল । তারপর গেট দিয়ে ভিতরে চলে গেল ।
একটু ভাল লাগল । কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নিলাম আবার ।
আকাশ মিয়া ! তোমার নাম আকাশ হলেও তুমি থাকো মাটিতেই । আর তার নাম স্পর্শীয়া হলেও তাকে স্পর্শ করার অনুমুতি তুমি পাবা না । তার চেয়ে বরং তুমি সুপ্তির দিকে মনযোগ দাও ।
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো । আমি রাতে ছাদে যাই । গুন গুন করে গান গাই । আর গিটার বাজাই । সুপ্তিকে দেখি বারান্দায় হাটা করতে । আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে ও আমার জন্যই আসে । ভালই লাগে ।
আমার বন্ধু সজিব বলে শোন প্রত্যেক মেয়ের সাথে প্রেম করার প্রধান শর্ত হচ্ছে মেয়েদের ইশারা বা ইঙ্গিত বুঝতে পারা । প্রত্যেক মেয়েই কিছু না কিছু ইঙ্গিত দেয় । তুই যদি ঠিক ঠাক মত ইঙ্গিতটা বুঝতে পারিস তাহলেই কেল্লা ফতে !
আমি সেই কেল্লা ফতের জন্যই অপেক্ষা করতে লাগলাম । একদিন সেই কাঙ্খিত ইশারা চলেও এল । এখন কেবল ঠিক মত কাজে লাগানো টা বাকি ! ঐ রাতে শরীর ভাল লাগছিল না । তাই গিটার না বাজিয়ে এমনি এমনি ছাদে হাটাহাটি করছিলাম । হাটাহাটি বলতে যে দিকটায় সুপ্তিদের বাসা সেদিকেই ছিলাম ।
হঠাৎ সুপ্তিকে বলতে শুনলাম কালকে ।
-কেএফসিতে । অবশ্যই আসবেন । বিকেল পাঁচ টায় । না আসলে কিন্তু খুব রাগ করবো ।
আমার প্রথমে মনে হল যেন সুপ্তি ফোনে কাউকে বলছে কিন্তু তারপরেই মনে হল নাহ !
এটাই সেই ইঙ্গিত । সুপ্তি খুব জোরে কথা বলছে । এমনিতেই রাত ফোনে কথা বললে এতো জোরে কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না । তাহলে এতো জোরে কথা বলতেছে কেন ?
নিশ্চই আমাকে শোনানের জন্য ।
অবশ্যই আমাকে বলছে কথাটা । তার মানে কালকে আমার সাথে সে দেখা করতে চায় !
ওয়াও !!
বাহ ! মেয়েটার তো বেশ ভাল বুদ্ধি আছে !!
রাতের বেলা বেশ আনন্দ নিয়েই ঘুমাতে গেলাম । অবশেষে শুভ দিন আসলো তাহলে ।
পরদিন ঠিক সময়ের একটু আগেই হাজির হয়ে গেলাম কেএফসিতে । ওয়েটারকে বলে বিশেষ একটা ব্যবস্তা করলাম । বললাম একজন আসবে । সেই আসলেই যেন সব কিছু পরিবেশন করা হয় ।
ওয়েটারের হাতে একটা একশ টাকার নোট গুজে দিতেই ওয়েটার ঘাড় বাকা করে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল ।
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম সুপ্তির জন্য । ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা যেন আর নড়েই না ।
সাড়ে চারটা ।
চারটা পয়ত্রিশ ।
চারটা চল্লিস ।
...........।
অবশেষে সময় এল । সুপ্তি এল ঠিক পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে । কেএফসির দরজা দিয়ে ঢুকেই একটা হাসি দিল এদিকে তাকিয়ে । আমি হাসলাম । অনুভর করলাম আমার বুকের স্পন্দন বেড়ে গেছে ।
এই তো । আসছে !
অবশেষে আমার ....
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সুপ্তি এগিয়ে ঠিক আমার সামনের টেবিলে বসে পড়ল । আমার দিকে ফিরেও তাকালো না !
ওখানে আগে থেকেই একজন বসে অপেক্ষা করছিল !
তাহলে ?
কাল রাতে সুপ্তি আসলেই ফোনে কথা বলছিল !
আমিই একটু ভুল বুঝেছি ! ভুল না আমি একটু বেশি বুঝেছি । বেশি বোঝার ফল কোন দিন ভাল হয় না !
-হাই !
চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি সামনে স্পর্শীয়া । হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে ।
-হ্যালো ।
-আপনি এখানে ?
-এই তো ! এমনি । তুমি এখানে ?
-আমিও এমনি এসেছি । ক্লাস শেষ হয়েছ তো । আপনার সাথে বসলে আপত্তি নাই তো ?
-না না । আপত্তি কেন থাকবে ? বস ।
-আকাশ ভাইয়া । আপনাকে একটা কথা বলি ?
-হ্যা । বল ।
-আপনি এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ! কি বলবো ? আর কি বলার আছে !
স্পর্শীয়া বলল
-থাক বলতে হবে না ! আপনাকে আর একটা কথা বলি !
-বল !
-আপনি খুব সুন্দর গিটার বাজান । প্রতিদিন রাতে যখন ছাদে উঠে বাজান আমি মন দিয়ে শুনি ।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ঠিক তখনই ওয়েটার এসে হাজির । হাতে এক গাদা খাবার ।
ওমাইগড !
আমি ওয়েটার কে বলেছিলাম কেউ এসে আসবে আসলেই যেন অর্ডার নিয়ে আসে । সব কিছু আগে থেকেই বলা ছিল ।
স্পর্শীয়া এসে বসেছে । ওয়েটার মনে করেছে এই সেই মেয়ে ।
-ম্যাম ।
ওয়েটার বলল
স্পর্শীয়া কৌতুহল নিয়ে ওয়েটারের দিকে তাকাল ।
-এই কেকটা স্যার আপনার জন্য স্পেশালী অর্ডার দিয়েছে । প্রতিদিন কেবল এক পিচই বানাই আমরা । আজকে আপনার জন্য । এ সিম্বল অব লাভ ! স্যারের পক্ষ্য থেকে !
আমার বুকের ভিতর ঘন্টা বেজে উঠল ।
আজকে গিয়েছি ।
আজকে আমি গেছি নিশ্চিত !
এই ওয়েটার বেটা এখন একটা ধোলাই দেওয়া দরকার ।
বেটা তুই কার ছেলে কার কোলে দিল ?
আমি স্পর্শীয়ার কাছ থেকে মোটামুটি একটা ঝাড়ি খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম । আচ্ছা ও কি টাইপের ঝাড়ি আমাকে দিতে পারে ?
আপনার সাহসতো কম না ? হাসি মুখে দুটো কথা বলেছি বলে ...
নাহ এটা ঠিক যাচ্ছে না । তাহলে ?
নাহ । ভাবতে পারছি না !
আমি স্পর্শীয়ার দিকে তাকিয়ে আছি । ওখানে রাগ কিংবা বিরক্তি থাকার কথা কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর মুখটা আশ্চার্য রকম শান্ত । মুখে কেমন একটা দুষ্টামীর হাসি !
-এতো কিছুর দরকার ছিল ?
আমি কোন মতে বললাম
-ছিল না ?
-উহু ।
-এনীকে বললেই হত । কালকে নিশ্চই এনীর কাছ থেকে শুনেছেন যে আমি আজ ক্লাস শেষে এখানে আসবো । তাই না ?
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু খুব বেশি হাসি বের হল না ।
-আমি খুব খুশি হয়েছি । খুব ।
আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না । আসলে স্পর্শীয়ার হাসি মাখা মুখ দেখে আমি আর আর কিছু বলতে পারলাম না ।
কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম !
আকাশের চাঁদ হাতের ভিতর চলেই এল শেষ পর্যন্ত !
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।