বুয়েটে চান্স পাওয়ার পরের ঘটনা সমুহ....

857 21 1
                                    

  -বাহ ! বুয়েটে চান্স পেতে না পেতেই আমার কথা ভুলে গেলে ?

নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি নিশির মুখ টা গম্ভীর ! গম্ভীর হলে নিশির চোখ দুটো একটু ছোট হয়ে যায় ! তখন ওকে দেখতে খানিকটা জাপানিজদের মত মনে হয় ! নাক টা যদিও বেশ খাড়া । বুচা নাক হলে চাইনিজ কিংবা জাপানিজ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত !
আমি বললাম
-কি বললা ?
-কি বলেছি শুনো নাই ?
-না তো !
-দেখো, ফাজলামো করবা না ! থাপ্পড় খাবা !
-সে কি ! কেন ?

নিশি অগ্নি চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! মনে হল এখনই আমাকে খেয়ে ফেলবে ! তবে সেই অগ্নি দৃষ্টি পরিবর্তন হয়ে এল কিছুক্ষনের ভিতরেই ! সেখানে একটু অভিমান দেখা দিল ! অভিমানী চোখের দিকের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় ! মনে হল আহা ! এমন অভিমানী চোখ কতদিন দেখি নি !

আসলেই দিন গুলো কেমন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর থেকেই চার পাশের মানুষ জনের আচরন খানিকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে । বিশেষ করে পরিবার, পাড়া প্রতিবেশি সবার ।
এলাকার ভিতর প্রথম বুয়েটে পড়া ছাত্র হতে যাচ্ছি কি না তাই !

যেদিন রেজাল্ট বের হল সেদিন থেকেই পাড়ার মানুষজন বিশেষ করে মুরুব্বী গোছের মানুষ গুলোর চোখে আমি অনেক ভদ্র ছেলে হয়ে গেলাম ! সবাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা নমনীয় হাসি দিতে লাগলো ! কেউ কেউ আবার মাথায় কিংবা কাধে হাত রেখে দোয়া করে বলতে লাগলো বেঁচে থাকো বাবা !
অথচ কদিন আগে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ ঠিক মত ফিরেও তাকাতো না, মাথায় হাত রাখা তো অনেক দুরের কথা !

সব থেকে বড় পরিবর্তন টা আসলো পাড়ার মেয়ে গুলোর ভিতর ! যে মেয়ে গুলো আমাকে পাত্তা দিতো না হঠাৎ করেই তাদের চোখের চাহনী বদলে গেল ! রাস্তা দিয়ে যাওার সময় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি টিপ্পনী চলতে লাগলো ! বিকেল বেলা ছাদে উঠলে এখন প্রায়ই আশে পাশের সুন্দরী মেয়েদের কে দেখতে পাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! সময় টা খুব একটা খারাপ যাচ্ছে না ! উপভোগই করছি !

অবশ্য নিশির পেছনে আমি অনেক আগে থেকেই আছি । তবে হ্যা এই ভাবে ওর সাথে কোথাও দেখা করতে এই প্রথম আসলাম ! তাও আবার নিশির ফোন পেয়েই ! এমন টা বলা যাবে না যে নিশি আমাকে মোটেই পছন্দ করতো না, তবে সরাসরি কিছু বলতো না ! কিন্তু ওর চোখে প্রশ্রয়ের হাসি আমি ঠিকই দেখতে পেতাম ! বিকেল বেলা ছাদে কিংবা রাস্তায় দেখা হলে ঠিকই একটা হাসি দিতো ! প্রান জুড়ানো হাসি ! সেই হাসিতেই কেটে যেত একটা রাত !

আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম
-দেখো, একটা বাসের জন্য অপেক্ষা করে করে যদি সেই বাসটা না আসে তাহলে তো বিকল্প বাসে করে গন্তব্যে যাওয়া উচিৎ ! তাই না ?
-কি বললা ? এই তুমি কি বললা ?
-না ! না ! কিছু বলি নি তো, কিচ্ছু বলি নি ! বলেছি ঐ একটা বাসের জন্যই সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকা উচিৎ !
-হুম ! দ্যাস বেটার !
নিশি কিছুটা শান্ত হল ! আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল
-আর যদি ঐ আদিবার সাথে পুটিসপাটিস করতে দেখেছি তাহলে কিন্তু একেবারে খুন করে ফেলবো !
-পুটিসপাটিস কি ?
-বুঝো না ? কচি খোকা !
-তোমার সাথে এখন যা করতেছি তাই ?
নিশি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হেসে ফেলল ! বলল
-হ্যা ! এটাই পুটিস পাটসি ! এটা কেবল আমার সাথে করবা ! আর কারও সাথে না !


হুম ! নতুন নতুন উপদ্রোকের সাথে যুক্ত হয়েছে আদিবা ! আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে ! বলতে গেলে ভয়াভহ রকমের সুন্দরী ! সবে মাত্র ক্লাস টেন এ উঠেছে ! এরই ভিতর বলতে গেলে পাড়ার ছোট বড় সবাই আদিবার পিছনে ঘুরা শুরু করে আবার শেষ করে ফেলেছে ! আদিবা কিছুদিন একে লাইন দেয় তো কিছুদিন তাকে লাইন দেয় ! এবার মনে হয় আমাকে লাইন দেওয়ার সময় এসেছে !

যাই হোক গত সপ্তাহের কথা । ওর বাবা হঠাৎ আমাদের বাসায় এসে হাজির ! মা মনে করলো হয়তো বাড়ি ভাড়া বাড়াবে ! কিংবা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলবে ! বাড়িওয়ালারা তো মাসে মাঝখানে কোন সমস্যা না হলে ভাড়াটিয়াদের বাসায় যায় না ! কিন্তু আমাদের খানিকটা অবাক করে দিয়ে আদিবার বাবা বলল যে সে চায় আমি যেন তার মেয়েকে পড়াই ! তার মেয়ে নাকি অংকে খুব কাঁচা !
কাঁচা তো হবেই ! সারা দিন টাংকি মেরে বেড়ালে তো কাঁচা হবেই ! বাড়িওয়ালার মেয়ে বিধায় না করতে পারলাম না ! এবং এই কথা পাড়ায় গুলির বেগে ছড়িয়ে পড়লো ! আগে যারা আমাকে ঈর্ষা করতো তারা আমার উপর চটে গেল আরও !

এই খবর নিশির কানে পৌছাতেও সময় লাগলো না ! সেই সুবাধে আজকে আমার তলব !
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঐ বদ মেয়েকে পড়াতে যাবা না ! খবরদার যাবা না বললাম !
-আরে আমি মানা করবো কিভাবে বল ? ওর বাবা আমাদের বাসায় এসে বলে গেছে ! না গেলে আমাদের বাড়ি ছাড়া করবে !
-করলে করবে ! আমাদের বাসায় এসে থাকবা ! সমস্যা কি ?

আদিবাদের বাসা মানে আমরা এখন যে বাসায় ভাড়ায় থাকি ঠিক তার পাশের বাসাটাই নিশিদের বাসা ! এও বাড়িওয়ালার মেয়ে সেও বাড়িওয়ালর মেয়ে ! বাড়িওয়ালার মেয়ে বনাম বাড়িওয়ালার মেয়ে !
-তুমি এতো টেনশন কেন নিচ্ছ ?
-নিবো না ?
-আমার উপর তোমার ভরশা নাই ?
-তোমার উপর আছে কিন্তু ঐ বদ মেয়ের উপর নেই ! না তুমি ওকে পড়াতে যাবা না ! খবরদার বলছি !
-আরে একটু চিন্তা করে দেখো ! পাড়ার সব ছেলে যখন আদিবার পিছনে ঘুরেছে তখন আমি কি তার পিছনে গেছি ? আমি কিন্তু তোমার পিছনে এসেছি ! আসি নি ?
নিশিকে দেখলাম একটু চিন্তিত গল ! আমার কথাটা ভাবছে যেন !
-তারপর চিন্তা করে দেখো, বিকেল বেলা যখন ছাদে উঠতাম আদিবারও উঠতো । একই ছাদের ছিলাম আমরা কিন্তু আমি তো তোমার সাথে টাংকি মারতাম ! তাই না ? ওর সাথে কথাও কিন্তু বলি নি !
-হুম ! বুঝলাম !
-তাহলে ? আসলে তোমার সাথে আদিবা ফাদিবার বেইল নেই ! আর পিচ্চি একটা মেয়ে ! ওর পিছনে যাওয়া কি মানায় ?
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা যেন মনে থাকে ! না হলে কিন্তু .....।
-খুন করে ফেলবা ?
-হুম !
-আমি তো খুন হয়েই আছি ! আর কত ?
-হয়েছে ! এখন চলেন ! সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে !

আমরা উঠে পড়ি ! আমারও একটু তাড়া আছে । সন্ধ্যার পরে আবার আদিবাকে পড়াতে যেতে হবে !   

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Where stories live. Discover now