বাবা আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার জানতে চাইল
-কি করেছিস ?
আমি ক্ষীণ গলায় বললাম
-বাবা বিয়ে করেছি ।
-কি করেছিস ?
আরে আপনি আব্বা হয়েছেন তাই বলে এই কথা বারবার হুংকার দিয়ে কেন বলবেন ? আর যতবারই জানতে চান উত্তর টা তো আর বদলে যাবে না । ঘন্টা খানেক আগে যাকে বিয়ে করেছি সে আর বউ থেকে আবার আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাবে না । আমার বউ বউই থাকবে ।
একলাখ দেনমোহর দিয়া বিয়ে করেছি ।
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে আছি চুপ করে । বাবা নিজের মুখটা রক্ত বর্ণ করার চেষ্টা করছেন কিন্তু একটু সময় লাগছে । এই ফাঁকে নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ টা শুকিয়ে এতুটুকু হয়ে গেছে । আসলে বাবার চিৎকার চেঁচামিচির অভ্যাসের সাথে ও খুব একটা পরিচিত নয় তো, তাই একটু ভয় পেয়েছে মনে হয় ।
বাবা মুখ লাল করে বললেন
-তুই এক্ষুনি বাসা থেকে বের হয়ে যা ।
আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না । বাবা দিনে দুতিন বার আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে ।
তুই এটা কেন করলি ? এক্ষুনি বাসা থেকে বের হও ।
ওটা কেন করলি ? বের বলছি বাসা থেকে ।
এসএসসি পরীক্ষায় সবাই এ প্লাস পেয়েছে আমি পাই নি বলে আমাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বললেন । সন্ধ্যার দিকে নিজেই মিষ্টি কিনে মানুষের বাসাতে পাঠানো শুরু করলেন । তখন অবশ্য এপ্লাস পাওয়া এতো সহজ ছিল না । আবার আমি কেন এ প্লাস পায় নি এই জন্য আমার মন খারাপ এই কথাও আলোচনা করতে লাগলো । ছোট খাটো সব বিষয়তেই উনার প্রথম কথা হচ্ছে আমার বাসা তুই বেরিয়ে যা ।
আমি বললাম
-নিশিকে কি নিয়ে যাবো নাকি রেখে যাবো ?
বাবা আবারও হুংকার দিয়ে বলল
-তোর বউ তুই রেখে যাবি মানে ? নিজে নিজে বিয়ে করেছি এখন বউকে নিয়ে নিজে নিজে থাক । আমার বাসায় জায়গা হবে না ।
নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ও প্রায় কেঁদে ফেলেছে । এখনও চোখ দিয়ে পানি বের হয় নি তবে যে কোন সময় বের হয়ে যাবে । আসলে আমার বাবার চিৎকার চেঁচামিটি আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের কিছু একটা মনে হয় না কিন্তু নিশি তো প্রতিদিন দেখে না ।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।