দরজাটার সামনে এসে কিছু সময় থমকে দাড়ালো লিসা । কত বছর পরে আবার এই বাসায় আসছে!
সাত বছর!
সাত বছর পরে এসেছে ও।আগে এমন একটা সময় ছিল লিসা বলতে গেলে সারাটা সময় এই বাড়িতে থাকতো। এই বাসায় ওর জন্য একটা ঘরও ঠিক করা ছিল। ঠিক একই ভাবে ওদের বাসায় মোনার জন্য একটা ঘর ছিল। দুজন দুই বাড়ির মেয়ে হলেও কোনটা যে কার বাড়ি, কার বাড়িতে কে কতদিন থাকছে সেটা কারোই মনে থাকতো না। আর আজকে সাত বছর পরে ও আবারও মোনাদের বাসায় এসে হাজির হয়েছে।
কলিংবেলটা টিপ দিতে গিয়ে হাতটা একটু যেন কেঁপে উঠলো ওর৷ সেই সাথে একটু একটু করে মনের ভেতরে অদ্ভুত বিষাদ ছেয়ে যেতে লাগলো। মোনা এই বাসায় নেই ভাবতেই চোখে পানি এল। দরজা খোলার আগেই লিসার চোখ দিয়ে পানি গড়াতে শুরু করলো।
দরজাটা খুলতেই লিসা ওর মীরু চাচীকে দেখতে পেল৷ এই সাত বছরে এই মানুষটাকে এই প্রথম দেখতে পেল। সম্পর্কে চাচী হলেও মীরু চাচী ওকে কোনদিন কম আদর করে নি। মোনাকে যতখানি ভালবাসতো ওকেও ততখানিই ভালবাসতো।
লিসা বলল, কেমন আছো আম্মু?নিজের মাকে মা বলে ডাকলেও মীরু চাচীকে সে আম্মু বলেই ডাকতো সব সময়।
মীরু চাচী প্রথমে কিছু সময় নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এতো দিন পরে তার আরেক মেয়ে তার কাছে ফিরে এসেছে। তিনি এবার সজোরে লিসাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। কতদিন পরে তিনি লিসাকে দেখতে পেয়েছেন।মোনা আর লিসার বাবারা দুজন আপন ভাই। দুজনের বয়সের পার্থক্য মাত্র দেড় বছর। দুই ভাইয়ের ভেতরে তাই মিল খুব ছিল সব সময়৷ সেই মিল টা প্রথমে তাদের বউদের মাঝে এবং পরবর্তীতে নিজেদের মেয়েদের মাঝেও প্রবাহিত হয়। দুই ভাইয়ের মাঝে এতোই মিল ছিল যে নিজেদের মেয়েদের নামও রাখলেন মিলিয়ে। মোনা আর লিসা। যদিও লিসার থেকে মোনা কয়েক মাসের বড় তবুও দুই বোন একই সাথে একই ভাবে মানুষ হয়েছে যেভাবে তার বাবারা হয়েছে।
মীরু চাচী অনেক সময় কান্না কাটি করে থামলেন। তারপর বললেন, তুই আসবি, কেউ বলে নি তো?
লিসা শুকনো হাসি হাসলো। তারপর বলল, কেউ জানে না৷
-কেউ জানে না?
-সবার আগে তোমাদের বাসায় এসেছি।
-মোনার খবর আমি গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।