নিহিনের শেষ বেলা

666 17 0
                                    

চোখ মেলে কিছু সময় নিহিন বোঝার চেষ্টা করলো ও এখন কোথায় আছে । ওর শোবার ঘরের ছাদের রংটা সাদা অথচ এই ঘরের সিলিংটা আকাশী । চট করে তাকালে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছি । পরক্ষণের নিহিনের সব মনে পড়ে গেল । সাথে সাথেই একটা তীব্র লজ্জার অনুভূতি ছড়িয়ে গেল পুরো শরীর জুড়ে । বুকের ভেতরে একটা অচেনা অনুভূতি এসে বাসা বাঁধলো ।

একটা বালিশ চেপে ধরে গত রাতের ঘটনা আবারও মনে করার চেষ্টা করলো ও । ওর সাথে কি হয়ে গেছে গত রাতে !

এমন কিছু ওর জীবনে হবে সেটা সে কোন দিন ভাবতে পারে নি !

সব কিছু জানার পরেও কেউ ওকে ভালবাসবে সেটা নিহিনের ধারনার বাইরে ছিল এতো দিন ! যেখানে ওর নিজের বাবা মা ওকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে দেখে এসেছে এতোদিন সেখানে এই ছেলেটা ওকে ভালবেসে কাছে টেনে নিয়েছে । কি আশ্চর্য্য !

অফিসে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পরপরই রিয়াদ ওকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে । কিছুটা সময় সে অজ্ঞান ছিল তবে যখন রিয়াদ ওকে গাড়িতে ওঠাচ্ছিলো তখন নিহিন বলেছিলো, আমাকে প্লিজ আমার বাসায় নিয়ে চলুন !

রিয়াদ বলল, চুপ করে শুয়ে থাকো । কোথায় নিয়ে যাবো সেটা আমি দেখছি !

-দেখুন !

ও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু সেদিকে রিয়াদ মোটেও কান দিল না । কিছু সময়ে অনুভব করলো যে রিয়াদ ওকে কোলে করে নিয়ে হাটছে । সম্ভবত চলে এসেছে কোথায় । আরও ঘন্টা খানেক পরে নিহিন একটু সুস্থ অনুভব করলো । বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো । তখনই দেখতে পেল রিয়াদ একটা ট্রে হাতে নিয়ে ঢুকছে ঘরে । ওর সামনে রেখে বলল, এগুলো খেয়ে নাও ।

নিহিন সেদিকে না তাকিয়ে বলল, আমি এখন মোটামুটি সুস্থ । বাসায় যাবো !

এই বলে উঠে গেলেই রিয়াদ ওর হাত চেপে ধরলো । তারপর বলল, কোথাও যাচ্ছো না তুমি ! আগামী এক সপ্তাহ ছুটি তোমার । বুঝতে পেরেছো । পুরোটা সপ্তাহ তুমি এখানে থাকবে !

-আপনি আমাকে জোর করতে পারেন না । আমি থাকবো না ।

এই বলে রিয়াদ অনেকটা জোর করেই নিহিনকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। মুখটা একেবারে নিহিনের মুখের কাছে নিয়ে গেল । নিহিন রিয়াদের চোখের তাকিয়ে অদ্ভুত কিছু দেখতে পেল । রিয়াদ ওকে পছন্দ করে সেটা নিহিন অনেক আগে থেকেই জানে । কিন্তু কোন দিন রিয়াদকে পাত্তা দেয় নি সে । পাত্তা না দেওয়ার পেছনে কারণও ছিল যথেষ্ঠ । যেই কারণ টার জন্য নিজের বাবা মা পর্যন্ত তাকে দুরে ঠেলে দিয়েছে, সেটা যখন অন্য কেউ জানবে সেও দুরে ঠেলে দিবে । রিয়াদ যখন জানবে রিয়াদও ওকে ঘৃণার চোখে দেখবে । এর থেকে কাউকে কাছে ঘেষতে দেওয়ার কোন দরকার নেই । কেউ যদি কাছেই না আসে তাহলে দুরে চলে গিয়ে ওকে কষ্ট দিতে পারবে না ।

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Where stories live. Discover now