তিথির বাবা চট করেই আমাদের ব্যাপার টা ধরে ফেললেন ! পাশাপাশি বাসা, তাই বাসায় নালিশ আসতে খুব বেশি সময় লাগলো না !
রাতে ভাত খাওয়ার সময় আব্বার মুখ দেখলাম গম্ভীর ! আশা করেছিলাম খাওয়ার মাঝখানেই তিনি আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলবেন !
আমি কোন দোষ করলেই তিনি মুখ গম্ভীর করেন বলেন
"আমি তো দুষ্ট গরু রাখবো না ! দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল ! তুমি আজকেই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবা ! ক্লিয়ার ?
আমি ক্লিয়ার ব্যাপার টা মাথা নিয়ে ভাত খেতে লাগলাম ! আজকে চিংড়ি মাছে ঝোলটা বেশ স্বাধ হয়েছে ! আমি মাকে বললাম
-মা আরেক পিচ দাও তো চিংড়িটা !
মা ভয়ে ভয়ে আমার পাতে আরেক পিচ চিংড়ি তুলে দিলেন ! দিয়েই বাবার দিকে আরেকবার তাকালেন ভীত চোখে ! আমি অন্য কোন দিকে না তাকিয়ে খেতে লাগলাম !
খাওয়া শেষ করে যখন হাতে পানি ঢালছি তখন আব্বার গম্ভীর গলা শুনতে পেলাম !
-খাওয়া ভাল হয়েছে ?
-জি আব্বা !
-এবার সোজা নিজের ঘরে যাবা ! নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবা ! তুমি দুষ্ট হয়ে গেছো ! আমি দুষ্ট গরু আমার গোয়ালে রাখবো না ! বিষয়টা ক্লিয়ার হয়েছে ?
-জি আব্বা ক্লিয়ার হয়েছে !
মা খানিকটা নিচু কন্ঠে বলতে গেলে এই রাতে বেলা ছেলেটা ....?
কথার মাঝ খানেই আব্বা মা কে থামিয়ে দিল !
-যেই ছেলে এই বয়সে অন্যের মেয়ের সাথে ফুটুস ফাটুস করতে পারে তার কাছে রাত কোন সমস্যা না ! সেই ছেলে লায়েক হয়ে গেছে !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার তুমি এখনও দাড়িয়ে আছো ? যাও ! এখনও বিদেয় হও !
আমি ঘরে চলে গেলাম ! মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখালম চার্য আছে কি না ! না থাকলে সাথে চার্যারটাও নিতে হবে ! বালিশের নিচে হেড ফোন ছিল, সেটা পকেটে নিলাম, তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম !
যাওয়ার দেখি মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
একটু হাসার চেষ্টা করলাম ! মাও একটু হাসলো ! এটাই তো আর প্রথম না ! আগে হয়েছে ! খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই ! তবুও মায়ের মন বলে কথা !
আমার মনে আছে প্রথম যেদিন বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি ! সকাল বেলার কথা ! স্কুলে বৃত্তি কোচিংয়ে আমি বেশ কয়েকদিন ফাঁকি দিয়েছিলাম ! সেই খবর বাবার কাছে এই এসে পৌছেছিল রাতের বেলা !
তিনি সকাল বেলা আমাকে বাসা থেকে চলে যেতে বললেন ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে কেবল বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ! এখন আর অবাক হই না !
আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে ছাদে চলে এলাম ! কিছুক্ষন গান শোনা যাক । রাতে আব্বা ঘুমিয়ে পড়লে তখন আবার বাসায় যাওয়া যাবে ! মা নিশ্চই জেগে থাকবে !
আসলে ঘটনা তেমন কিছুই হয় নি ! তিথিকে বেশ কিছুদিন থেকেই পছন্দ করি ! মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে । তার উপর আমাদের ফ্ল্যাট আবার পাশাপাশি ! টুকটাক দেখা তারপর কথা ! এর পর প্রতিদিন কথা হতে লাগলো, ছাদের দেখা হতে লাগলো প্রতি বিকেল বেলা !
মোবাইলেও কথা হত তবে কম ! অবশ্য আমার তাতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না ! বেশ ভালই দিন কাটছিল দুজনের !
গতকাল বিকেল বেলা ঝামেলা বাঁধলো ! ছাদে বসে দুজন কথা বলছি এমন সময় তিথির বাবা এসে হাজির ! তিথি কে এক চড় মেরে নিচে নিয়ে গেলেন ! আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন !
-এই !
খানিকটা চমকে উঠলাম ! কে ডাকে ? এই রাতের বেলা ভুত নাকি ? কান থেকে হেড ফোন খুলে কান পেতে রইলাম আবার শোনার জন্য !
-এই !
তিথির গলা !
এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি অন্ধকার থেকে তিথি বের হয়ে এল !
-তুমি এখানে ?
-তোমার জন্য বসে আছি ! বাবা মোবাইল নিয়ে নিয়েছে ! তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল !
-তোমার বাবা জানে ?
-বাবা রাতে বেশিক্ষন জেগে থাকতে পারে না ! সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে !
-আর তোমার আম্মা ?
-আম্মু ব্যাপার না ! আম্মাকে আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি ! তোমার বাসার কি অবস্থা ?
-ঐ একই কথা ! আমি দুষ্ট গরু গোয়ালে রাখবো না ! প্রস্থান কর !
-ভাল ! তা সারা রাত কি এখানেই থাকবা ?
-তুমি থাকলে অবশ্য থাকা যায় !
-এই খবরদার কিন্তু দুষ্টামী করবা না বলছি !
-দাড়াও ! দুষ্টামী কারে কয় তোমাকে দেখাচ্ছি !
-এই !
বলতে বলতে তিথি ছাদের অন্য দিকে দৌড় দিল ! আমি ছুটলাম তার পিছু পিছু !
ছাদের নিচে দুই পিতা ঘুমিয়ে আছে আর ছাদের উপর তাদের সন্তান গল্প করে রাত পার করে দিচ্ছে !!
আহা !!
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।