-আপনার সমস্যা কি ?
-কোন সমস্যা নেই !
-তাহলে এখানে কি করছেন ?
-আপাতত কিছু না ! তবে আপনি যা করতে এসেছেন আমিও ঠিক সেই কাজ টাই করতে এসেছি !
নীলা কিছুটা সময় সামনে দাড়ানো ছেলেটার দিকে তাকালো ! ছেলেটার হাতে একটা কাগজের ঠোঙগা ! সেখান থেকে একটু পরপর কিছু একটা নিয়ে মুখে দিচ্ছে ! বাদাম মনে হয় ! বয়স খুব বেশি হলে ২৩/২৪ হবে ! ওর থেকে দুএক বছর বড় হবে হয়তো ! তবে ছেলেটার শেষ কথাটা নীলাকে বেশ খানিকটা ধাক্কা দিল ! নীলা এখানে কি করতে এসেছে এটা ছেলেটার কিছুতেই জানার কথা না ! তাহলে এই কথা কেন বলল ছেলেটা ?
-আপনি কি বলতে চান ?
-বলতে চাচ্ছি যে আপনি যে উদ্দেশ্য এই রেল লাইনের ধারে বসে আছেন আমিও ঠিক একই উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে বসে আছি !
-দেখুন ! লাইনে আসুন ! কি বলতে চান সোজাসুজি বলেন !
ছেলেটি এবার নীলার পাশে বসতে বসতে বলল
-আমি তো লাইনে আসার জন্যই এখানে এসেছি ! আমি ঠিক করেছি সুন্দরবন এক্সপ্রেসে নিচে কাটা পড়ে মবরো ! সুইসাইড করবো আর কি ! আপনিও তো তাই করতে এসেছেন এখানে । তাই না ?
-কি বলছেন এসব ?
নীলার কথা শুনে ছেলেটি অদ্ভুত ভাবে হাসলো ! কিছুক্ষন অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আমি জানি ! এখানে মানুষ মরার জন্যই আসে ! গত কয়েকমাসে এখানে প্রায় ছয়জন মারা গেছে !
নীলা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না ! চুপ করে রইলো ! কিছু অবশ্য বলারও নাই ! নীলা আসলেই এখানে মরার জন্য এসেছে !
সকাল বেলা ঠিক করেছে কাজটা করবে ! নীলার রাগ উঠলে মাথায় কিছুই ঠিক থাকে না ! হাতের কাছে প্রথমে যা পায় তাই ভেঙ্গে ফেলে ! তারপরেও রাগ কমে না ! তখনই মরে যেতে ইচ্ছা করে ! রাগ টা তখন অভিমানে রূপান্তর হয় ! সকালবেলাতেই ঠিক এমন হয়েছে ! প্রথমে ভেবেছিল গলায় দড়ি দিয়ে মরবে কিন্তু ঘরে সিলিংসের সাথে ঝুলানোর মত শক্ত কিছুই খুজে পেল না !
ভাবল ঘুমের ঔষধ খেয়ে মরবে কিন্তু গতবারে এই চেষ্টা করেছিল । হলে থাকে, তাই লোকজন ভর্তি ! ওকে ঠিকই বাঁচিয়ে দিয়েছে ! আর দোকান থেকে ঘুমের ঔষধ কেনা টা অনেক ঝামেলার বিষয় !
তারপর চিন্তা ভাবনা করে এই ট্রেনের নিচে কাটা পরে মরাই ওর কাছে সহজ মনে হল ! তাছাড়া জায়গাটা ওদের ক্যাম্পাস থেকে কাছেই ! এখানে আগেও অনেকে মরেছে ! ওর জন্য সহজ হবে !
ছেলেটি বলল
-এই রোদে এখানে না আসলেই কি হত না ? আপনার চামড়া তো পুড়ে যাচ্ছে ! মারা যাবার পর যখন পত্রিকায় ফটো উঠবে তখন তো তখন ভাল উঠবে না ! কালো দেখাবে !
নীলা খানিকটা অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! বলে কি ছেলেটা ?
এখানে সে মরতে এসেছে নাকি চামড়ার যত্ন নিতে এসেছে । মরে গেলে চামড়া পুড়ায় কি যায় আসে ? নীলা বলল
-আপনি কি আমার সাথে ফাজলামো করার চেষ্টা করছেন ?
-না ! সত্য বলছি ! যখন ট্রেন টা আপনার শরীরের উপর দিয়ে চলে যাবে এবং পত্রিকায় সেই ছবিয যখন ছাপানো হবে তখন আসলেই দৃশ্যটা দেখতে কারো ভাল লাগবে না ! তার উপর দিয়ে গায়ের রং যদি পুড়ে যায় তাহলে কেমন লাগবে বলুন !
নীলা আবারও ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিছু বলল না !
এই ছেলের সাথে কথা বলার কোন মানে নেই ! তার থেকে অন্য দিকে যাওয়া যাক !
নীলা উঠতে গেল ! তখনই ছেলেটা বলল
-আরে কোন দিকে যান ? ঐ দিকে গেলে কেউ আপনাকে দেখে ফেলতে পারে ! তখন কিন্তু আর সুইসাইড করতে পারবেন না !
নীলা উঠতে গিয়েও বসে পড়লো আবার ! এদিকে ছেলেটা একমনে ঠোঙগা থেকে বাদাম নিয়ে খেয়েই চলেছে !
নীলা বলল
-আপনিও কি সুইসাইড করতে এসেছেন ?
-ইয়াপ !
-বাদাম খেতে খেতে ?
-হুম ! সেই কৌতুক টা পড়েন নাই ? এদেশের ট্রেনের টাইম টেবিল বলে তো কিছু নাই ! তার যদি ক্ষুদা লাগে তাই সাথে করে বাদাম নিয়ে এসেছি ! আপনি খাবেন ?
এই বলে ছেলেটি বাদাম এগিয়ে দিল নীলার দিকে ! এবং অবাক করার বিষয় নীলা নিজেও বাদাম নিয়ে মুখে দিল !
ছেলেটির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা বলল
-কি দেখছেন ?
-না । ট্রেন লেট মনে হয় ! দেড়টার সময় ট্রেন আসার কথা ! এখন একটা চল্লিশ বাজে ! দেখছেন কি অবস্থা ! ঠিক মত মরবো সেটারও উপায় নেই !
-হুম ! আসলেই মরেও শান্তি নেই !
ছেলেটি হঠাৎ বলল
-এই বারই প্রথম ?
নীলা ছেলেটির কথা ঠিক মত বুঝতে পারলো না !
-কি প্রথম ?
-এই সুইসাইডের চেষ্টা ?
-নাহ !
-আরও করেছেন ?
-হুম !
ছেলেটি বলল
-কেইস টা কি ? ভালবাসা !
নীলা কিছুটা সময় আবার চুপ করে থেকে বলল
-হুম !
-সমস্যা কার ? আপনার নাকি তার ?
-তার অবশ্যই !
ছেলেটা কেন জানি হেসে ফেলল ! নীলার দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি কি তার ?
নীলা গোমড়া মুখে বলল
-না ! সব টুকু তার না ! আমার নিজেরও আছে ! আমি অল্পতেই রেগে যাই আর মুখে যা আসে তাই বলে ফেলি ! আর.....
-আর ?
-আর আমি সরি বলতে পারি না !
-তো ? ব্রেক আপ হয়ে গেছে ?
-হুম !
-এই সুইসাইড ?
-হুম !
-আপনি তো দেখছি আচ্ছা বেকুন টাইপের মেয়ে ?
-মানে ?
-মানে কিছু না ! বেকুব মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না ! দেন, আমার বাদামের ঠোঙনা ফেরৎ দেন !
নীলাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটি নীলার হাত থেকে বাদামের ঠোঙগা টা নিয়ে নিল । তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আপনার সাথে আমি মরবই না ! আপনার মত বেকুব মেয়ের সাথে মরলে আমার মান সম্মান থাকবে না ! হু !
এই বলে ছেলেটি উঠে চলে গেল ! নীলার হঠাৎই এমন মেজাজ খারাপ হল ছেলেটার উপর কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না ! কোন মানুষ আজ পর্যন্ত ওর সাথে এমন ব্যবহার করে নি ! আর এই ছেলের সাহস কত বড় !
দাড়া ! ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে ! আবীর কে বলে একটা শিক্ষা দেওয়া বে !
নীলা আর দেরী না করে নিজের জিন্সের পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করলো ! ফোন করলো আবীর কে !
-কোথায় তুমি ?
-কেন ?
-এক্ষুনি আসো !
-কোথায় আসবো ?
-কাঠাল তলায় আসবা ! একটুও দেরি করবা না বলে দিলাম !
##
-দোস্ত ! কাম হইছে ! ও ফোন দিছে !
-হবে ! আমি বলেছি না !
-এখন ?
-যা ! তার কাছে গিয়ে একদম সোজা হয়ে থাক !
-থ্যাকংস দোস্ত ! এমনিতে ভয়ে ছিলাম ! প্রতিবার একটা করে ঝগড়া হয় আর ও এমন একটা বোকামী করে ফেলে ! ভাগ্য ভাল এইবার তোর বুদ্ধি শুনেছিলাম !
-যা যা জলদি যা ! দেরি করিস না !
আবীর আর দেরি করে না ! দ্রুত হাটা দেয় কাঠাল তলার দিকে !
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।