রিমির দ্বিতীয় আফসোস

450 14 2
                                    

স্টেশন গেট দিয়ে বাইরে তাকাতেই রিমিকে চোখে পড়লো । হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । প্রায় দুই বছর পরে ওকে সামনা সামনি দেখছি তবে চিন্তে মোটেও কষ্ট হল না । আগের থেকে মনে হল দেখতে আরও একটু বেশি সুন্দরী হয়েছে । চেহারাতে পূর্ণ নারীত্বের ব্যাপারটা আরও ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে ।
আমার সামনে এসে রিমি বলল, কি ভেবেছিলেন পালিয়ে যাবেন?
আমি হেসে ফেললাম । সত্যি বলতে কি আমার এমন ইচ্ছাই ছিল । ইচ্ছে ছিল যে আমি কোম্পানীর গেস্ট হাউজেই উঠবো । কাজ কর্ম শেষ করে একদিন ওদের বাসা থেকে ঘুরে আসবো । কিন্তু রিমি যে আমাকে নিতে স্টেশনে চলে আসবে সেটা বুঝতে পারি নি ।
আমি বললাম, আরে না । কি যে বলেন !
-হয়েছে । আর মিথ্যা বলতে হবে না । আসুন ।

আমি কিছু বলতে পারলাম না । ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওর পেছন পেছন হাটতে শুরু করলাম । রিমিকে দেখতে কেন সুন্দর লাগছে সেটা আরও ভাল করে বুঝতে পারলাম । রিমি হাতে মেহেদী দিয়েছে । সম্ভবত কাল রাতেই দেওয়া হয়েছে । এই জন্য হাতের রংটা বেশ পাকা মনে হচ্ছে । সেই সাথে ও পরে এসেছে সাদা রংয়ের একটা কামিজ । সাথে সাদা লেগিংস । সাদা ওড়নার সাথে ওকে দেখতে কেমন যেন মায়াময়ী মনে হচ্ছে ।

মেয়েটা আমার পছন্দের সব কিছু ঠিকঠাক মনে রেখেছে । এখনও কি মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে !
আমি জানি ও এখনও বিয়ে করে নি । বিয়ে করলে আমি খবর পেতাম । আমাদের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগ না হলেও মাঝে মধ্যে কথা বার্তা হয় । এই কথার ফাঁকে ও একবারও ওর বিয়ের কথা আমাকে বলে নি । আচ্ছা এমনও কি সম্ভবনা রয়েছে যে মেয়েটা এখনও আমার অপেক্ষায় রয়েছে ?
কিন্তু কেন থাকবে ?
আমি তো তাকে কোন কথা দিই নি । বরং পরিস্কার করেই বলে দিয়েছি আমার মনের কথা ।
স্টেশন থেকে বের হতেই দেখলাম আকাশ বেশ মেঘলা । বৃষ্টি হবে সম্ভবত । রিমি বলল, আকাশ মেঘলা ! তবে মনে হয় না বৃষ্টি হবে !
-কেন?
-এখন এমনই । তবে বৃষ্টি হলেও সমস্যা নেই ।

গাড়িতে উঠে একটু অবাক হতে হল । সাথে কোন ড্রাইভার আসে নি । তার মানে রিমি নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে । বাহ ! এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ লাগলো ।
যখন রিমিদের বাসায় পৌছালাম তখন প্রায় নয়টা । আমাকে এগারোটার ভেতরে অফিসে রিপোর্ট করতে হবে । সেখানে আজকে সারা দিন অডিট করতে হবে । মোট তিন দিনের কাজ ।
ঘরের ঢোকার মুখেই রিমির বাবা আতাহার আহমের সাথে দেখা হল । আমাকে দেখে যে সে খুশি হন নি সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম না । অবশ্য খুশি হওয়ার কথাও না । তবে রিমির কারণে কিছু হয়তো বলতেও পারছেন না । আমি তাকে দেখেই সালাম দিলাম । সে সালামের উত্তর নিলো এবং আর কিছু না বলে আমার সামনে দিয়ে বের হয়ে চলে গেল । তার মুখ দেখে মনে হল এখানে না আসলেই সম্ভবত ভাল হত । কিন্তু না এসে পারাও তো গেল না । আসলে রিমির প্রতি আমার সব সময় একটা অপরাধবোধ কাজ করে । আমার বারবারই মনে হয় যে যদি আমার সাথে রিমির দেখা না হত তাহলে বুঝি মেয়েটার জীবন আজকে অন্য রকম হতে পারতো ।

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)Where stories live. Discover now