শালার কপালই খারাপ !
তিন তিন বার বললাম ভালবাসি ! আর ঐ মেয়ে শুনে না ! শুনে না মানে একদম শুনে না ! বুঝলাম তুমি গান ভালবাস তাই বলে সারাক্ষন কানের ভিতর হেড ফোনে গুজে গান শুনতে হবে ?
ফাজিল মেয়ে !
শুধু ফাজিল না ফাজিলের চুড়ান্ত !!
-এই আমাকে কিছু বললা ?
-না ! না ! তোমাকে কিছু বলবো কেন ? কিছু বলি নাই ! কিছু বলি নাই তো !
আমি মিমির দিক থেকে চোখ সড়িয়ে সাব্বির দের দিকে তাকালাম । শয়তান গুলো মুখ বুজে হাসতেছে । আমি এতোক্ষন মিমি কে যা যা বলেছি সব ওরা শুনেছে কিন্তু যাকে বলেছি সেই কিছু শুনে নাই !
মহারানী কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতেছে !
এই লাইব্রেরীর ভিতরে কি গান শুনার জায়গা ?
লাইব্রেরী হল পড়া লেখা করার জায়গা ! আর এই বদ মেয়ে গান শুনতেছে !
-এই অপু !
-হুম !
আমি মিমির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমাকে বলল
-একা একা কি কি বিড়বিড় কর ?
-কিছু না তো ! একটা লাইন মুখস্ত করার চেষ্টা করছি !
মিমি আমার দিকে আর একবার ভাল করে তাকালো ! তারপর বলল
-কোথায় ? তোমার সামনে তো কোন বই নাই ! তাহলে কি দেখে মুখস্ত করতেছ ?
আসলেই তো ! আমার সামনে তো কোন বই ই নাই !
-না মানে ! লাইনটা আগেই পড়ে ছিলাম তাই মনে করার চেষ্টা করতেছি !
-অপু ! যদি মনেই থাকে তাহলে মুখস্ত করার দরকার কি ? তোমার মাথা কি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে !
আমি কিছু বলতে গিয়ে দেখলাম লাইব্রেরীয়ান আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে ! এই অর্থ আমাকে এখন চুপ করতে হবে ! কোন কথা বলা যাবে না ! আমি চুপ করে গেলাম । বেশি কথা বলতে গেলে আমাকে লাইব্রেরী থেকে বের করে দিতে পারে !
-কি মামা ? শুনলো না ?
লাইব্রেরী থেকে বের হওয়ার সময় দেখি সাব্বির আর সুমন দাড়িয়ে আছে ! মুখে একটা খোচা মারার হাসি!
সুমন বলল
-তুমি যে কিভাবে কথাটা বললি ! ভাগ্য ভাল মিমি শুনে নাই ! শুনলে আজকে তোর খবর ছিল !
আমি বললাম
-মানে কি ? খবর ছিল কেন ? কি খবর ছিল ?
-না মানে তুই যেভাবে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বলছিলি ভাগ্য ভাল যে শুনতে পাই নাই !
আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না ! কারন কথা সত্য ! আসলেই আমি যেভাবে ওকে প্রোপোজ করছিলাম তাতে যে কেউ যে কোন কিছু করে ফেলতে পারতো ! এমন কি আমার দিকে বই খাতা জামা জুতা ছুড়ে মারারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না !
আচ্ছা এমন কেন হয় ? আমি এর আগেও ব্যাপার টা খিয়াল করে দেখেছি ! কেবল মিমির সামনেই আমার এমন অবস্থা হয় ! তাও আবার সব সময় না ! যেদিন আমি ঠিক করে রাখি যে ওকে আজকে মনের কথাটা বলতে হবে ঠিক সেদিনই এমনটা হয় !
হাতপা কাঁপা শুরু করে ! তোঁতলাতে শুরু কররি !
-শোন মামা তোকে একটা বুদ্ধি দেই ! কাজে লাগবে !
-কি বুদ্ধি ?
আজকে মোটামুটি ভাবে আমি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি ! আজকে কাজ হবে ঠিকই ! আজকে আমাকে সফল হতেই হবে !
পারবো তো ?
নিজের মনের কাছে নিজেই খানিকটা কনফিউজ হয়ে গেলাম !
যদি আবার গত দিনের মত হয় ?
তখন ?
এর আগের আগেও আমি বেশ কয়েকবার মিমি কে বলার চেষ্টা নিয়েছি কিন্তু প্রত্যেক বারই কোন না কোন ঝামেলা হয়েছে ঠিকই !
সব চেয়ে বড় ঝামেলা হয়েছিল যেদিন ওকে একটা চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলাম ! ভাগ্য ভাল যে টাইপ করে পাঠিয়েছিলাম নয়তো খবরই ছিল ! আমার অবস্থা কি হত কে জানে ?
কাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে চাইছিলাম আর কে আমার গলায় ঝুলে পড়তো !
কয়েক দিন আগে মিমিকে একটা চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলাম । অনেকে তো বুদ্ধি করে বই বা ডায়রীর ভিতর চিঠি দেয় আমি আবার বেশি বুদ্ধিমান তো এসবের ভিতর না গিয়ে ঠিক করলাম যে সরাসরি মিমির ঘরে চিঠি পৌছে দিবো !
যা ভাবা তাই ! আমি আমার মনের কথা গুলো টাইপ করে একটা কাগজে লিখে হাজির হলাম মিমি যে ঘরটাতে থাকে সেই ঘরের সামনে ! মিমির ঘরটা দুইতালায় ! ঘরটা ওদের হোস্টেলের পেছন পাশে ! একটা বারান্দা আছে দেওয়ালের কাছেই ! আমি কাগজটা দলা করে সেই বারান্দা বরাবর ছুড়ে মেরেই দৌড় দিলাম !
আমি নিশ্চিত ছিলাম মিমি নিশ্চিত বুঝে যাবে যে কে ওকে চিঠি পাঠিয়েছে ! কিন্তু আমি এই কথা ভুলে গিয়েছিলাম যে ওর রুমে ও ছাড়াও আরো দুইজন থাকে ! সুমি আর কলি ! তার ভিতর কলিকে সবাই একটু এড়িয়ে চলে ওর উগ্র স্বভাবের জন্য !
পরদিন ক্লাসে এসে যা শুনলাম তাতে আমার চোয়াল ঝুলে গেল । সবার মুখেই কেবল এক কথা ! কলিকে কে জানি প্রেম পত্র দিয়েছে !
গতকাল রাতে কলি বারান্দায় বসে বসে গান শুনছিল । হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা কাগজের দলা এসে নাকি কলির গায়ে লাগে ! কাগজ খুলে দেখে সেখানে নাকি টাইপ করা একটা প্রেম পত্র !
ওকে যে কেউ প্রেম পত্র দিতে পারে এটা নাকি কেউ ভাবতেই পারে নাই ! আর সব থেকে বিপদের কথা এইটা কলি নাকি তাকে খুজতেছে । ঝাড়ি দেওয়ার জন্য না ! তার প্রোপোজাল এক্সসেপ্ট করার জন্য ! কলি নাকি সারা রাত চিঠি বুকে নিয়ে শুয়ে ছিল !
কি সর্বনাশের কথা !!
তবে এই টুকু আশার কথা যে আমি চিঠির শেষ নাম লিখি নি !
লিখলে কি হত !
ভাগ্যভাল যে লিখি নি !
যাই হোক ! আজকেই একটা দফারফা করতে হবে ! চমৎকার বুদ্ধি পেয়েছি ! মুখেও বলা লাগবে না ! খালি একবার ফোন দিলেই হবে ! সুমন কালকে ভালই বুদ্ধি দিয়েছিল !
না জানি, এডটা কে বানাইছিল ! তারে কাছে পেলে এই সময়ে ১০ কেজি পেয়াজ কিনে দিতাম !
-এই মিমি !
হোস্টেল থেকে সবে মাত্র বেরিয়েছে ! বিকেল বেলা মিমি প্রতিদিন হাটতে বের হয় আমি জানি ! কোন দিন একা আবার কোন দিন বন্ধুদের সাথে । ভাগ্য ভাল যে আজকে একাই বের হয়েছে ! আমার ডাক শুনে ফিরে চাইলো আমার দিকে ! তারপর আমার দিকে এগিয়ে এল হাসি মুখে ! যথা রীতি কানে হেড ফোন ! এই মেয়েটা কি গান ছাড়া একটুও থাকতে পারে না ?
আমার কাছে এসে মিমি বলল
-এই খানে কি ?
-কিছু না ! এই দিকে আসতে মন চাইলো । ভাবলাম তোমার সাথে আজকে একটু হাটি !
-বাহ ! চল তাহলে !
-নদীর ঐ দিকটাতে যাবে ?
-চল !
আমরা দুজন হাটতে লাগলাম ! মনে মনে ভাবছি এখন কি করবো ! এখনই বলব ?
নাকি ? আর একটু পরে !
-কি চুপচাপ কেন ?
-নাহ ! এমনি ! তুমি কি গান শুনছ ?
-কোন গান না ! এখন তোমার সাথে আছি না ! তোমার সাথে কথা বলি !
এখনই সুযোগ ! আমি বলে উঠলাম
-এই সেরে রে !
-কি হল ?
-আমার ফোন টা পাচ্ছি না !
-কি বল ? কোথায় রেখেছিলে ?
-কি জানি ! এখানে আসার আগে তো আমার কাছেই ছিল !
-তাহলে ?
-একটা ফোন দিবা ?
-হুম !
এই কথা বলেই মিমি ফোনের ডায়াল ঘুরাতে লাগলো !
আমার অপেক্ষা করতে লাগলাম ! কখন ফোন বেজে উঠবে ? কখন বেজে উঠবে ?
এই তো ফোন বেজে উঠেছে !
কিছুক্ষন কোন কথা নাই ! যাক কাজ হচ্ছে মনে হয় ! মিমির কানে হেড ফোন ! সে গান শুনতে পারছে !
রবিবাবুর ভালবাসি ভালবাসি !
আমি আমার পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম ! মিমি ফোন টা দেখেও কানে হেড ফোন লাগিয়ে আমার ওয়েলকাম টিউন শুনতে লাগলো !
ভালবাসি ! ভালবাসি !
এই সুখে ........
কাছে দুরে ...
আমি মনে মনে ঠিক করতে লাগলাম এর পর কি বলব আমি ! মিমিইবা কি বলবে ?
-আরেএএএএএএ !!
আমি খানিকটা চমকে উঠলাম ! "আরেএএএএ" তো বলার কথা না ! তাও আবার এতো জোরে ! মিমি "আরেএএএ" কেন বলছে ! আমি কিছু না বুঝে বলললাম
-আরে কেন বলছ ?
-জানো এই গানটা আমি কত খুজেছি ! মাই টিউন বানাবো বলে ! গানটার কোড নাম্বার কত ? তোমার জানা আছে ! প্লিজ বল না ! বল না !!
আমি খানিকটা মুখ হা করে মিমির দিকে তাকিয়ে রইলাম !
দুর !!
-এই বল না !
-দুই বার স্টার চাপ দাও ! হয়ে যাবে !
-আরে তাই তো ! দাড়াও !
মিমি আবার আমাকে কল দিয়ে কি মোবাইল টেপাটেপি করতে লাগলো !
কিছুক্ষন পরে আমাকে বলল
-এই আমাকে ফোন দাও তো ! দেখো তো গানটা চালু হয়েছে নাকি ?
-হুম ! দেখতাছি !
আমি বিরক্ত মুখে ফোন দিলাম !
শালা কি কাজে আসলাম ! আর কি হল !
এই এড টা কে বানাইছে একবার পাইলে হয় ! মাইয়াদের এতো সহেজ প্রোপোজ করা যায় ! বেটা কে কাছে পেলে ১০ কেজি পিয়াজ কাটতে দিতাম ! বেটা তখন মজা বুঝতো !!
নাহ ! নতুন পদ্ধতি বের করতে হবে !
নতুন পদ্ধতি !!
(গ্রামীন ফোনের একটি বিজ্ঞাপন দ্বারা অনুপ্রানীত)
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।