-তোমার ম্যাও এর নাম কি ?
-আপনাকে কেন বলবো ?
-না বললে নাই ! বাচ্চা মেয়েদের মত বিড়াল কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! নাম বলবে না ?
-না ! আপনাকে বলবো না !
-আচ্ছা বল না !
এই বলে ছেলেটা আবার নিজের গিটারের দিকে মন দিল ! অহীনের মেজাজটা একটু খারাপ হল ! ছেলেটা এমন ভাব নিচ্ছে কেন ? এমনিতেই ওর মন মেজাজ একটু খারাপ ছিল, ছেলেটার ভাব দেখে আর একটু বেড়ে গেল ! একবার মনে হল ছেলেটা কে একটা ধমক দিয়ে বাসার সামনে থেকে চলে যেতে বলে কিন্তু কিছু বলতে পারলো না ! কারন ছেলেটা আবার সেই গানের সুর ধরেছে !
বিন্দু আমি !
তুমি আমায় ঘিরে .....।
বৃত্তের মাঝে শুধু তুমি আছো ......
অহীন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ! অপুর খুব পছন্দের গান এটা ! যখনই অহীনের সাথে ও কোথাও যায় গানটা একবার না একবার গাইবেই ! অহীন রাগ করলেও অপু এই গান গেয়ে ওর রাগ ভাঙ্গে ! অহীন একদিন জানতে চাইলো
-কি ব্যাপার তুমি কেবল এই একটা গান গাও কেন ?
অপু কেবল হেসে বলল
-আমার বৃত্তের মাঝে কেবল তুমি তাই ! তুমি ছাড়া আর কেউ নেই !
-তাই !
-হুম !
আবার !! অহীনের মেজাজটা আবার গরম হয়ে গেল ! অন্য কারো উপর না । নিজের উপর ! আবার ও ঐ পাজি ছেলেটার কথা চিন্তা করছে !
না !
নিজেকে আবার একটু ধমক দিল !
খবরদার অহীন তুই ওর বদমাশটার কথা একটুও ভাববি না ! বেটার সাহস কত !! আমাকে ধমকায় !
নিজের সাথে বোঝা পড়া শেষ হলে অহীন আবার গিটারওয়ালা ছেলেটার দিকে তাকালো ! মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ! পরনে একটা ময়লা সবুজ রংয়ের শার্ট আর রং চটা কালো জিনস ! তবে হাতের গিটার টা বেশ চকচকে ! বোঝা যাচ্ছে জামা কাপড়ের প্রতি নজর না দিলেও গিটারে দিকে বেশ ভাল যত্ন নেয় সে !
প্রতিদিন বিকেল বেলা অহীন ওদের বাড়ির সামনে হেটে বেড়ায় ! হাটতে খারাপ লাগে না ! ওদের এলাকাটা ঢাকার অন্যান্য এলাকার মত না ! এখানে সরকারী সব উচু লেভের মানুষদের বাস ! কোন বড় বড় বিল্ডিং নাই ! তার বদলে রয়েছে একতলা আর দুইতলা ডুপ্লেক্স ভিলা ! সামনে একচিলে বাগান ! তাতে নানা রকমের ফুল গাছ লাগানো !
-কি ব্যাপার মিস ! মেজাজ গরম ?
-আপনি কিভাবে জানেন ?
-এই টুকু জানতে কোন জ্যোতিষী হওয়া লাগে না ! তোমার চেহারার বিরক্তি ভাব দেখলেই বোঝা যায় !
-তাই ?
-হুম ! কি কারনে মেজাজ খারাপ ?
-আপনাকে কেন বলবো ?
-ওকে না বল ! তোমার ম্যাও কে জিজ্ঞেস করি ?
-করেন !
-আচ্ছা এই খানটাতে বস !
অহীন ওর কোলে বসে থাকা টিংকুর মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে লাগলো ! তারপর ছেলেটার পাশে গিয়ে বসলো ! একটু দুরুত্ব বজায় রেখে ! প্রথমে মনে হল বসবে না । কিন্তু তারপর কি মনে পরে বসে পড়লো !
অপু যদি ওকে এভাবে কোন ছেলের সাথে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে তাহলে চিৎকার চেঁচামিচি করে একাকার করে ফেলবে !
কিন্তু এখন অহীন এসবের কিছুই কেয়ার করে না !
কে রাগ করলো না করলো কি যায় আসে !
কাল রাতেই অপুর সাথে ওর ব্রেক আপ হয়েছে ! যদিও প্রায়ই এমন টা হয় ওদের মাঝে ! এখন ও কার সাথে বসবে না বসবে তা এখন অহীনের একদমই নিজেরই ব্যাপার !
-এই ম্যাও ! কি নাম তোর ?
অহীন দেখলো ছেলেটার ওর টিংকুর দিকে তাকিয়ে আছে ! আবার বলল -কি নাম তোর ?
ইস ! ছেলেটার কি আদর মাখা চোখে টিংকুর দিকে তাকিয়ে আছে !
টিংকু বলল
-মিয়াও ! মিয়াও !
-আচ্ছা ! তোর নাম টিংকু !
অহীন চমকে উঠলো ! কি ব্যাপার ছেলেটা কিভাবে জানলো ওর নাম টিংকু ! এক বার ছেলেটার সাথে চোখাচোখি হল ! কোন ভাবেই ছেলেটা টিংকুর নাম জানতে পারে না ! ছেলেটাকে এর আগে কোন দিন দেখে নাই সে ! এই এলাকাতে তো নয়ই ওর কোন পরিচিত জায়গাতেও না ! তাহলে ?
কথা বলার সময় কোন ভাবে কি টিংকুর নাম টা সে উচ্চারন করেছে ?
মনে করতে পারলো না ! অহীন আবার ছেলেটার দিকে তাকালো !
কিন্তু ছেলেটা তখন টিংকুর দিকে তাকিয়ে !
অহীন বলল
-আপনি টিংকুর নাম কিভাবে জানলেন ?
-টিংকু বলল !
-মিথ্যা কথা !
-আরে মিথ্যা কথা কেন হহবে ? তোমার সামনেই তো বলল ! শোনো নাই ? মিয়াও !
ছেলেটার মুখ থেকে মিয়াও শুনে টিংকু আবার বলল
-মিয়াও !
ছেলেটা বলল
-দেখলে আবার বলল !
-তাই !
-হুম ! তোমার নাম জিজ্ঞেস করবো ?
-করেন !
ছেলেটা টিংকুর দিকে তাকিয়ে আবার বলল
-এই তোর আপুর নাম কি বলতো !
-মিয়াও ! মিয়াও !
-কি বললি ?
-মিয়াও মিয়াও !!
-হুম ! অদিতি ! তাই না ?
-মিয়াও !
ছেলেটার হাসলো ! অহীনে দিকে তাকিয়ে বলল
-মিয়াও তো আপনার নাম ঠিক বলে দিল !
অহীন বলল
-জি না আমার নাম অদিতি না ! আমি অহীন !
-অহীন ! ও ! তাহলে টিংকু মিথ্যা বলল ? ভেরি ব্যাড টিংকু ! ভেরি ব্যাড !
অহীন ছেলেটার দিকেই তাকিয়ে দেখে ছেলেটার চোখে একটা দুষ্টামীর হাসি ! তখনই ছেলেটার চালাকী ধরে ফেলল !
-আপনি একটা বদ ছেলে !
-আমি ? কিভাবে ?
-এই ধোঁকা দিয়ে আমার নাম জেনে ফেললেন !
-হাহাহাহাহা ! ধোঁকা কোথায় দিলাম ? তোমার টিংকু আমার কাছে মিথ্যা বলেছে !
-তাই না ? আমি যাই ! আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নাই আমার !
অহীন উঠতে গেলে ছেলেটা বলল
-তোমার মন খারাপ খুব না ? মন খারাপটা লুকানোর জন্য সকাল থেকে সবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করছো ?
অহীন উঠতে গিয়েও উঠলো না ! একটু অবাক করা চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো !
ছেলেটা এতো কিছু কিভাবে জানে ? কিভাবে ?
-আপনি কিভাবে জানেন ? বলেন কিভাবে জানেন ?
-তোমার টিংকু বলেছে !
-ঠাট্টা করবেন না প্লিজ !
-আরে সত্যি বলছি ! কি টিংকু বলেছিস না ?
তখনই টিংকু বলল
-মিয়াও !
-এই টিংকু চুপ ! বলেন কিভাবে জানেন ?
ছেলটা কিচুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-সত্যি কি সেটা জানার দরকার আছে ! কথা গুলো সত্য কিনা বল ?
অহীন কিছু সময় চয়প করে রইলো ! কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না !
ছেলেটা হয়তো ট্রিকস করে ওর নাম জেনে ফেলেছে কিন্তু ও যে সকাল থেকে বাসার সবার সাথেই খারাপ ব্যাবহার করে আসছে এটা কিছুতেই এই ছেলেটার জানার কথা না !
তাহলে কিভাবে জানলো !
ছেলেটা হঠাৎ বলল
-অহীন একজনের জন্য পরিবারে সবার সাথে কি খারাপ ব্যাবহার করাটা কি ঠিক ?
অহীন চুপ করে রইলো !
-জানো তোমার বাবা আজকে সারাটা দিন অফিসে মন মরা হয়ে কাজ করছে ! তুমি তার সাথে ওমনটা না করলে পারতে !
আচ্ছা তাহলে আব্বার কাছ থেকে শুনেছে ছেলেটা ! সকালের ঘটনা আবার মনে পড়ে গেল ! অহীনে আসলেই একটু বেশি রাগারাগি করে ফেলছিল ওর বাবা সাথে ! না বাসায় আসলে অবশ্যই তাকে সরি বলতে হবে !
ছেলেটা আবার হাসলো !
-আপনি হাসছেন কেন ?
-এমনি ! আর একটা কথা বলবো ?
-বলেন !
-যার জন্য এমন টা করছো একটা বার কি তার দিকটা ভেবে দেখেছো !
-মানে ?
-সে কিন্তু তোমাকে সত্যিই ভালবাসে ! আর এটা তুমি নিজেও জানো ! জানো না ?
অহীন আবারও চুপ করে রইলো ! সে জানে ! সে সত্যটা জানে ! অপু আসলেই অহীন কে ভালবাসে ! আর কোন সমস্যাও নেই ওর ! সব সময় ও খুব কেয়ারিং ! একটা মেয়ে ঠিক যেই রকম ছেলে মনের মানুষ হিসাবে চায় অপুর ভিতরে তার সব গুনই আছে কিন্তু কেবল একটা সমস্যা অপু !
অহীনের পাশে অন্য কোন ছেলেকে দেখলেই অপুর মাথা গরম হয়ে যায় !
তখন কি করে না কে ঠিক থাকে না !
ছেলেটা আবার বলল
-কি কথা বলছো না কেন ?
-কি বলবো ?
-দেখো ? তুমি অপুকে ছাড়া ভাল থাকবে না ! এটা আমি যেমন জানি তুমিও জানো ! আর তোমাকে ছাড়া অপুও ভাল নেই !
-আপনি কিভাবে জানেন ?
-আমি কিভাবে জানি সেটা আসলো কথা না ! কথা হল তোমরা দুজনেই কষ্ট পাচ্ছ ! দরকার কি ? একটু ছাড় কি দেওয়া যায় না ?
-না ! যায় না ! অপুর সাহস তো কম না ! আমার উপর খবরদারি করে ! আমি কার সাথে কথা বলব না বলবো সেটা ওর কাছ থেকে শুনতে হবে ?
ছেলেটা আবার হাসলো !
-তোমার মন কিন্তু সেই কথা বলছে না !
অহীন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না ! ছেলেটা কিভাবে জানে এতো কিছু ! এমন কি ওর মনের কথাও কিভাবে বুঝে ফেলছে !
ছেলেটা বলল
-অপু কিন্তু তোমার সব কিছু মেনে নিয়েছে ! কেবল একটা জিনিস বাদে ! তুমিও কি পারো না ? দেখো না একটু চেষ্টা করে !
-জি না ! আমি দেখতে চাই না !
-ওকে তোমার যা ইচ্ছা ! আমি যাই ! আর......
-আর ?
-ঐ যে গলি দেখছো না ?
অহীন মেইন রাস্তায় বা দিকের গলির দিকে তাকালো !
-হুম ! সমস্যা কি ?
-ওখানে অপু বসে আছে ! সেই দুপুর থেকে ! ইচ্ছা হলে দেখা করে আসতে পারো !
ছেলেয়টা উঠে দাড়ালো ! গিটার নিয়ে ! হাটতে লাগলো উল্টো দিকে !
অহীন একবার গলিরটার দিকে তাকালো ! আর একবার তাকালো চলে যাওয়ার ছেলেটার দিকে !
-এই ! আপনার নামটা বলে যান !
ছেলেটা পিছন ফিরে তাকালো ! একটু হেসে আবার হাটা শুরু করলো !
অহীন গলির টার দিকে হাটতে লাগলো ! দেখতে চায় সত্যি অপু ওখানে বসে আছে কি না !
অহীনের কোলে এখনও টিংকুর বসে আছে !
-মিয়াও ! মিয়াও !
-এই চুপ !
গলির মুখে যাওয়ার আগে অহীন আবার তাকালো পিছনে । ছেলেটা কোন দিকে গেল দেখতে চায় ! কিন্তু খানিকটা অবাক হয়ে দেখলো কোথাও কেউ নাই ! পুরো রাস্তাটা একদম ফাঁকা ! এক মিনিটও হয় নি এর ভিতর কোন ভাবেই ছেলেটা রাস্তার শেষ মাথায় যাওয়া সম্ভব না ! আর একদম সোজা রাস্তা । কোন গলিটলি নাই ঐ দিকে ! তাহলে ছেলেটা গেল কই ?
তখনই অহীনের একটু ভয় মত লাগলো ! আর একটু পা চালিয়ে গলির মাথায় চলে এল ! অপু আসলেই সেখানে চুপ করে বসে আছে ! ওকে দেখেই উঠে দাড়ালো ! অহীন ওর সামনে গিয়ে দাড়লো !
কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না !
কথা বলল টিংকু !
-মিয়াও ! মিয়াও !
-মিয়াও !
-এই ! তুমি মিয়াও কেন কর ?
অপু বলল
-তুমি তো কথা বলছো না ! টিংকুর সাথেই কথা বলি !
-এখানে তুমি টিংকুর সাথে কথা বলতে এসেছো ?
-হুম !
-কি ?
-হুম ! টিংকু আর টিংকুর মালিকের সাথে !
-টিংকুর মালিক ?
-না ! টিংকুর মালিক না ! আমি হৃদয়ের মালিক !
-তাই না ?
-হুম !
-তুমি খুব খারাপ !
-হুম ! খারাপ তো ! তাই তো তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি !
-এই কথাটা কালকে মনে ছিল না ?
অপু কোন কথা বলল না ! চুপ করে রইলো !
কিছু সমসয় পরে বলল
-কালকে মাথা ঠিক ছিল না ! তুমি তো জানোই !
-হুম ! ঘোড়ার ডিম ! এইবারের মত মাফ করতে পারি ! কিন্তু !
-কিন্তু !
-ঐ গানটা আবার গাও !
-বিন্দু !
-হুম !
-আচ্ছা গাচ্ছি ! কিন্তু তুমি হঠাৎ করে এদিয়ে এলে কেন বল তো ? আমি কখন থেকে দেখছি তুমি তোমাদের বাড়ির সামনে বসে আছো
-আর কাউকে দেখো নি ?
-আর কাকে দেখবো ? কেবল তুমি আর টিংকু ! কত বার মনে হল সামনে যাই । কিন্তু সাহস হচ্ছিল না !
অহীন কোন কথা না বলে অপুর দিকে তাকিয়ে রইলো ! বোঝার চেষ্টা করছে অপু সত্যি কথা বলছে কি না ! সত্যিই বলছে মনে হয় ! কারন অহীনের পাশে অন্য কোন ছেলে বসে থাকতে দেখলে অপু এখানে বসে থাকতো না । মেজাজ গরম করে চলে যেত !
তাহলে ?
কে ঐ ছেলেটা ?
কিভাবে এতো কিছু জানলো ??
ততক্ষনে অপু ওকে নিয়ে রাস্তার পাশে বেদিতে বসে পরেছে । গানও শুরু করে দিয়েছে !
বিন্দু আমি !
তুমি আমায় ঘিরে .....।
বৃত্তের মাঝে শুধু তুমি আছো ......
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।