কয়েকদিন আগে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা মারছি এমন সময় পল্টু বলল
-জীবনে মানুষ না হয়ে বিলাই হলে ভাল হত ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-হঠাৎ বিলাই হওয়ার সখ জাগলো কেন ?
-আরে মিলিকে দেখিস না ! বিড়াল নিয়ে কেমন রংঢং করে ।
কথা সত্য । আমাদের ক্লাসের মিলি বিড়াল নিয়ে একটু বেশিই রংঢং করে । অন্তত ওর ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে তো তাই মনে হয় । বিড়াল জড়িয়ে পেঁচিয়ে এমন সব ছবি আপলোড করে তখন যে কারো মনে হতে পারে আহা ঐ বিড়াল খানা কত ভাগ্যবান ।
আর পল্টুর তো মনে হবেই । পল্টু সেই কবে থেকে মিলির পিছনে ঘুরছে ।
পল্টু বলল
-আমি ঠিক করেছি মিলিকে একটা বিড়াল গিফট করবো । কি বলিস ?
-হুম ভাল বুদ্ধি । করে দেখতে পারিস ।
বিড়াল নিয়ে আমার কোন কালেই খুব বেশি আগ্রহ ছিল না । অবশ্য এর পিছনে কারন আছে । ছোট বেলায় আমায় একটা আস্তানা ছিল । দিনের বেশির ভাগ সময়ে আমি সেখানে কাটালাম । কিন্তু একদিন সেখানে দেখি বিড়াল ইয়ে করে রেখে গেছে । এমন মেজাজ গরম হল । সারা বাড়ি বিড়াল খুজে বেড়ালাম । বেটার একদিন কি আমার একদিন । কোথাও না পেয়ে যখন আমি আমার ঘরে এসে বসেছি দেখি বিড়াল মশাই আমার চেয়ারের গদির উপর আরাম করে শুয়ে আছে ।
ছোট ছিলাম, বেটাকে হাত দিয়ে ধরতে গেলাম কিন্তু হিতে বিপরীত হল । আমার হাতে খামচি দিয়ে একাকার করে ফেলল । শেষে রক্তারক্তি ব্যাপার । তারপর থেকে বিড়াল দেখলেই লাঠি হাতে বিড়ালের পিছনে দৌড় দিতাম ।
ইদানিং ফেসবুকে বিড়ালের আনাগোনা বেড়ে গেছে । যদিও মনে হয় মেয়ে গুলো হুদাই এমন আহ্লাদ করে । আর খানিকটা লোক দেখানো বটে । মিলিও নিশ্চয়ই তেমনটাই করে । কিন্তু আমি নিজের চোখে কদিন থেকে যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে মেয়ে গুলোর মাথায় আসলেই একটু সমস্যা আছে । না হলে বিলাইকে জড়ায়ে ধরে কেউ চুম খায় ?
আরে চুম খাবি ছেলেদের গালে চুম খা । বিলাইরে চুম খাওয়ার কি আছে । বিলাইকে চুম খাওয়ার জন্য মহিলা বিলাই তো আছে ।
যার প্রসঙ্গে কথা বলছি সে আমাদের বাসার পাশেই থাকে । বলা যায় আমার প্রতিবেশি । আমার ঘরের সাথেই একটা ছোট্ট বারান্দা আছে । ঠিক তেমনি মেয়েটার ঘরের সাথেই একটা বারান্দা আছে । যদিও শিওর না ঐটা মেয়েটারই বারান্দা কি না কিন্তু মেয়েটাকে প্রায়ই ঐ বারান্দায় দেখা যায় ।
আগে প্রায়ই মেয়েটাকে বারান্দায় দেখা যেত । বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে মেয়েটাকে দেখতাম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । কখনও বা গ্রিলের ভিতর থেকে হাত বের করে দিয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে । আমি দেখতাম আড়াল থেকেই । একদিন বারান্দায় বেড়িয়ে দেখেছিলাম । মেয়েটা আমাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে চলে গিয়েছিল । তারপর থেকে আর সামনে যাই না । মেয়েটাকে আড়াল থেকে দেখি ।
কিন্তু ইদানিং মেয়েটা বারান্দায় আসা বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে মেয়েটা এখন আর মেয়েটা আর একা আসে না । যখনই বারান্দায় আসে তখনই মেয়েটার কোলে একটা সাদা রংয়ের বিড়াল দেখা যায় । বিড়ালের সাথে কত আহ্লাদ করে । হাত দিয়ে এমন ভাবে আদর করে আবার বিড়ালটাকে চুম খায় । তখন আমার পল্টুর কথা টা মনে পরে । আসলেই বিড়াল হলে কত ভাল হত ।
আমার কাছ তেকে সব কথা শুনে পল্টুর মুখ গম্ভীর হয়ে খেল । বলল
-হুম । তো তুই এখন কি চাস ?
-চাই মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষন করতে । কিন্তু আমাকে বারান্দায় দেখলেই মেয়েটা ভিতর চলে যায় ।
-শোন । মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আগে তোর ঐ বিলাই টার দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে ।
-বিলাইয়ে দৃষ্টি আকর্ষন ? কিভাবে ?
পল্টু তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো । এমন একটা ভাব যেন আমি খুব হাস্যকর কোন প্রশ্ন করেছি । বলল
-তুই না একটা ! একটা বিড়ালকে বাগে আনা কোন ব্যাপার ?
তারপর আমাকে বোঝাতে লাগলো আমার কি কি করা লাগলো ।
পল্টুর বুদ্ধি মত এবার পাশের বাড়ির মেয়ে না পাশের বাড়ির বিলাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টায় নেমে গেলাম । পল্টু বলেছে কান টানলে যেমন মাথা আসবে তেমনি বিলাই টানলে মেয়ে আসবে । দেখা যাক কি হয় !
দোকান থেকে মিল্ক ভিটা পরিশোধিত দুধ কিনে নিয়ে আনলাম । হাতে দুধের প্যাকেট দেখে মা অদ্ভুদ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-দুধের গন্ধ তোর বমি আসে সেই তুই হাতে করে দুধ কিনে এনেছিস !
আমি বললাম
-খাওয়ার জন্য না মা ।
-তাহলে ?
-কাজ আছে । তোমাকে বলা যাবে না ।
আমি আর বেশি কথা বললাম না । একটা ছোট্ট বাটি নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম ।
বারান্দায় উকি দিয়ে দেখি মহারানীর বিড়াল রাজকীয় ভঙ্গিতে এসিটার উপর বসে আছে ।
মেয়েটির বারান্দার সামনেই একটা এসির আছে । তার সামনে একটা কড়ই গাছ উঠে গেছে । বিড়াল বেশির ভাগ সময়েই ঐ এসিটার উপরে বসে রোদ পোহায় । মাঝে মাঝে গাছটার উপরে চড়ে বসে ।
আমি বাটিতে দুধ ঢেলে আমার বারান্দায় উপর রাখলাম । এমন জায়গায় রাখলাম যেন বিড়ালটার চোখে পড়ে । তারপর নিজের কাজে চলে গেলাম । আমি জানি ম্যাও মিয়া আসবেই । আর একবার যদি অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নাই । আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ।
প্রথম দিনে বেটা এল না । পরের দিনেও না । তৃতীয় দিনে দেখি অন্য একটা বিড়াল এসে হাজির । কালো মত সারা গায়ে ময়লা ভর্তি । লাঠি দিয়ে জোরে একটা বাড়ি দিলাম । দৌড়ে পালাল ।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।