সায়েরা আপাকে এখানে দেখতে পাবো ভাবি নি । শেষ কবে দেখেছিলাম মনেও নেই ঠিক । শুনেছিলাম সে লন্ডন চলে গিয়েছিলো । কবে ফিরে এল কে জানে !
আমাকে দেখেই সায়েরা আপা বলল, আরে ফয়সাল যে । এখানে ?
তার চোখে কৌতুহল ! আমি নিনার দিকে তাকালাম । নিনা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেছে । ও আসলে বুঝতে পারে নি যে এই ক্লিনিকের ডাক্তার আমার পরিচিত হবে । আমিও যে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই নি, সেটা না । আমি খুব ভাল করেই জানি যে যখন আমার এখানে আসার কারণটা সায়েরা আপাকে বলব তখন সে আমার দিকে ভুরু কুচকে তাকাবে । আর ভাববে আমার ভেতরে সমস্যা আছে ! আর এমনটা ভাবলে তাকে খুব একটা দোষও দেওয়া যায় না !
নিনা সম্পর্কে আমার বন্ধু হয় । অনেক দিন ধরে ওকে চিনি । আজকে সকালে ফোন দিয়ে জানালো যে সে প্রেগনেন্ট । কিন্তু এই বাচ্চা সে মোটেই রাখবে না । এখন সে কোন ভাবেই মা হতে প্রস্তুত না । নিনার জামাই এই কথা জানে না । এবং সে তাকে জানাতেও চায় না । একা একা ক্লিনিকে যেতে তার কেমন যেন লাগছে । তাই বন্ধু হিসাবে আমাকে যেতে হবে !
আমি খুব ভাল করে জানি যে ও আসলে আমাকে স্বামী সাজিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে । প্রথমে একটু গাইগুই করছিলাম । কিন্তু শেষে রাজি হতে হল । আমার পুরো জীবনে নিনা আমাকে অনেক বার বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে । ওর এই উপকার টুকু আমি করতেই পারি । নিনা আমাকে বলল যে আমাকে কিছু করতে হবে না । কেবল আমি সাথে গেলেই চলবে । বাকি সব ব্যবস্থা সে করেই রেখেছে । আমি তাই আজকে সাথে এসেছি । এসেই পড়লাম বিপদে । সায়েরা আপাকে এখানে দেখতে পেলাম ।
সায়েরা আপা অবশ্য আমাকে আর নিনাকে খুব বেশি বিব্রত করলেন না । অহেতুক প্রশ্ন করলেন না । নিনাকে নিয়ে গেলেন ভেতরে ।
সকল কাজ শেষ করে নিনাকে নিয়ে যখন বের হয়ে যাবো তখন সায়েরা আপা বললেন, ফয়সাল, তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল । এখন না হলে কাল পরশু একটু এসো তো আমার কাছে । কেমন !
আমি মাথা কাঁত করে জি আচ্ছা বলে বের হয়ে এলাম ।
পরের সপ্তাহে আবার গিয়ে হাজির হলাম সায়েরা আপার ক্লিনিকে । নানান কথা বার্তা হল । আগে যখন আমরা যশোর ছিলাম, সায়েরা আমাদের পাশের বাসায় থাকতো । আমার থেকে চার বছরের সিনিয়র ছিল । ভাল ছাত্রী হিসাবে তখন থেকেই তার নাম ডাক ছিল বেশ । তাই মা বলতো তার কাছে গিয়ে যেন পড়া দেখে নিই । সেখান থেকেই আপার সাথে ভাল পরিচয় হয়েছিলো । আমাকে ছোট ভাইয়ের মত আদর করতো । পরে আপার বাবা বদলি হয়ে গেলে যোগাযোগ টা কমে যায়। ঢাকাতে এসে আবার যোগাযোগ হলেও দুরত্ব আর কমে নি ।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।