প্রিয়তি সব সময় নিজেকে শক্ত মনের মানুষ হিসাবে ভেবে এসেছে । কখনও সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাত পাতে নি । এই ব্যাপারটা সে শিখেছে তার মায়ের কাছ থেকে । স্কুলে থাকতে যখন ওর বাবা মারা গেল, প্রিয়তির মা একা হাতে ওকে মানুষ করেছে । কোন দিন কারো কাছে মাথা নত করে নি । প্রিয়তিও ঠিক একই ভাবে একা একা এতো দুরে এসেছে । নিজের কাজ সব সময় নিজে করেছে । কিন্তু আজকে প্রিয়তি কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি ।
ডাক্তার যখন বলল যে তার মায়ের অবস্থা এখন অনেকটা স্টেবল তখন ওর বুক ফেটে কান্না আসছিলো । অপুকে জড়িয়ে ধরে সে কিভাবে কান্না শুরু করে দিলো সেটা প্রিয়তি নিজেও বলতে পারবে না । এই কান্নার ভেতরে কোন লজ্জা কিংবা অস্বস্তি নেই । বরং একটা প্রাশন্তি রয়েছে ।
করিডোরের এক পাশে ওরা দাড়িয়ে ছিল। প্রিয়তির ধাতস্ত হতে আরও বেশ কিছুটা সময় লাগলো । একটা সময় অপু বলল, কিছু তো খাও নি তাই না ? কিছু খাবে !
প্রিয়তি কেবল মাথা ঝাকালো । সত্যিই কাল থেকে ও কিছুই খাই নি । এখন ক্ষুধাটা টের পাচ্ছে ।
অপু বলল, ক্যান্টিনে যাবে? নাকি এখানে নিয়ে আসবো?
-ক্যান্টিনে চল !
-এসো !
এই বলে হাটতে হাটা দিল । যাওয়ার আগে মায়ের কেবিনের জানলা দিয়ে আরেকবার ভেতরে তাকালো । ও মা এখন শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে । একজন নার্স সব সময় এখানে থাকে । কিছু হলে খবর পাওয়া যাবে । তবে ডাক্তার বলেছে এখন আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ।
জানলা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে অপুর দিকে তাকালো । ছেলেটা আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে । প্রিয়তির এখনও খানিকটা অবাকই লাগছে । এই মানুষটার সাথে সে কি না করেছে । প্রোফেশনাল রাইভাল সে । ক্যারিয়ার নিয়ে প্রিয়তি কখনও কাউকে ছাড় দেয় নি কিন্তু অপুর সাথে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করেছিলো । এমন কি যখন অপুর কোভিট পজেটিভ ধরা পড়লো ওকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার একটা প্লান পর্যন্ত করেছিলো । তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হয় নি । আর আজকে সেই মানুষটাই ওর মায়ের জন্য রক্ত দিতে এগিয়ে এল !
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।