যখন ক্যাম্পাসের জন্য বেরিয়েছিলাম তখন টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল । তবে আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যে খুব জলদিই কুকুর বিড়ালের বৃষ্টি শুরু হবে । হলও তাই ! সারাটা দিন মনে হল আকাশটা প্রাণ খুলে কাঁদলো ! আমি একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম । বারবার মনে হচ্ছিল যে বাসায় যাওয়ার সময় পথ ঘাটের অবস্থা কি হবে ? বিশেষ করে আমার বাসার সামনের গলির অবস্থা কি হবে কে জানে ?
ঠিক যা ভয় করেছিলাম তাই হল । বাসার সামনের গলিতে এসে দেখি সেখানে ছোট খাটো বঙ্গোপসাগর হয়ে আছে । তার থেকেও মজার বিষয় হল সেই সাগরের সামনে বাড়িওয়ালার মেয়ে অরনী বিরক্ত এবং খানিকটা অসহার চোখে দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখে যেন তার বিরক্তিটা আরও একটু বাড়লো !
পনেরো নাম্বারে আসার পরে জীবন একটু অশান্তিতে আছি । আগে যেখানে ছিলাম সেখানে শান্তি ছিল বেশি । কিন্তু কিছু করার নেই । আগের বাসাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে । তাড়াহুড়া করে আর কোন বাসাও পাচ্ছিলাম না । তার উপর ব্যাচেলরকে কেউ আবার ভাড়া দিতে চায় না সহজে । হাতের কাছে যা পেলাম সেটাই সই । মোটামুটি সবই ভাল কিন্তু বাসাটা একটু গলির ভিতরে । রিক্সা ঢুকে না । একটু হেটে যেতে হয় ! এটাও কোন ব্যাপার না । সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায় গলির ভিতরে । তখন একটু ঝামেলা হয়ে যায় !
তবে একটা আনন্দের বিষয় হল বাড়িওয়ালার মেয়েটি বেশ সুন্দরী ! কোন কলেজে পড়ে শুনেছি কিন্তু এমন একটা ভাব করে যেন কোন স্কুলের হেড মাস্টার ! যাক তবুও সুন্দরী মেয়েদের সব কিছু সহ্য করে নেওয়া যায় ! এই জন্য আমিও সহ্য করে নিয়েছি ! আর কপাল দেখো আজকে তার সাথেই এখানে আটকা পরেছি !
আমি অরনীর দিকে তাকিয়ে বললাম
-অনেক পানি, তাই না ?
যথারীতি বিরক্ত হয়ে অরনী বলল
-দেখতেই তো পাচ্ছেন ! কিভাবে পার হওয়া যায় সেই চিন্তা করেন !
আমি বললাম
-উপায় তো একটাই ! প্যান্ট গুটাও ! তারপর হাটো !
বলেই আমি অরনীর দিকে তাকালাম ! আমার পরনে ঢোলা জিন্স ! আমি সহজেই প্যান্ট গোটাতে পারবো । কিন্তু অরনীর পরনে কামিজের সাথে টাইট কালো জিন্স রয়েছে । কোন ভাবে গোটানো সম্ভব না ! আর অরনীর মনভাব দেখে মনে হল সে চাইছে না এই পানিতে তার প্যান্টা টা ভিজুক !
আমি বললাম
-আর কোন উপায় নেই ! এই গলি দিয়ে তো রিক্সা ঢুকে না । ঢুকলে না হয় একটা ব্যবস্থা করা যেত ! তবে.....
কথা বলতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম ! এইকথা কিছুতেই অরনীর সামনে বলা যাবে না ! নাকি যাবে ?
ও কি রাগ করবে ? করতে পারে ! থাক !
আমি নিজের প্যান্ট গোটাতে থাকি ! অরনী বলল
-তবে ? তবে কি ?
আমি বললাম
-তবে আরেকটা উপায় আছে । কিন্তু সেটা তোমার পছন্দ হবে না !
-কি বলেন ?
-থাক ! লাভ নেই ! তুমি ....
-আহা ! বলেন তো ! আমার এখন বাসায় যাওয়া জরুরী !
আমি খানিকক্ষন আমতা আমতা করে বললাম
-না মানে আমি তোমাকে কোলে নিয়ে এইপানি টুকু পাড়ি দিতে পারি ! যদি তুমি চাও ? কিন্তু আমি জানি তুমি চাইবে না !
এই কথা বলেই মন হল আজকে আমার মনে হয় খবরই আছে রে । অরনীও আমার দিকে কিছুক্ষন ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে থেকে অন্য দিকে চোখ ফেরালো ! আমি আর কোন কথা না বলে সেন্ডেলটা হাতে নিয়ে পানিতে নেমে পড়লাম ! কয়েক পা গিয়েছি তখনই অরনী পেছন থেকে ডাক দিল !
-শুনুন !
-হুম !
-কোথায় যাচ্ছেন ? আমাকে কে নিয়ে যাবে ?
আমার প্রথমে কেন জানি মনে হল আমি ভুল শুনতেছি । অরনী কি আসলেই এই কথাটা বলল ! কে জানে ! নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি আবার ফিরে তাকালম ! বললাম
-কি বললে ? শুনি নাই ? আবার বল !
অরনী আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বেশি ঢং করেন না ! হাতি গর্তে পড়লে সবাই লাথি মারে !
আমি কিছু মনে করলাম না ! হাসি মুখ বললাম
-তোমার ওজন কত ! আমি তুলতে পারবো তো ?
-যান, আপনাকে আমাকে তুলতে হবে না ! আপনি যান !
-আরে রেগে যাচ্ছো কেন ? আমি তো এমনি বললাম !
-আপনার কিছু করতে হবে না ! আপনি যান !
-আরে বাবা ! আর কেউ কিন্তু আসবে না ! কেউ কিন্তু এমন প্রস্তাবও দিবে না !
সত্য সত্যি অরনীকে যখন কোলে নিলাম তখন নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছিল ! অরনী আমার গলা ধরলেও খুব ভাল করে ধরে নি । কিছু দুর গিয়েই একটু ছেড়ে দেওয়ার ভাব করতেই অরনী আমার গলা আরও জোরে জড়িয়ে ধরলো ! চিৎকার করে বলল
-আপনাকে কিন্তু আমি ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো বললাম ! আর একবার যদি এমন করেন !
-আড়ে বাবা পা পিছলে গিয়ে ছিলাম !
-একদম চুপ ! কোন কথা না !
আমি হাটছি পানির ভিতরে ! আস্তে পানিযেন বাড়ছে আর অরনী আস্তে আস্তে আমা রগলা চেপে ধরছে । মনে হচ্ছে অনন্ত কাল ধরে আমি পানিতে হাটিতেছি, চারিদিকে সমুদ্রের সাফেন ! আমার দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল পনের নাম্বারের অরনি সেন !
বাড়ির গেটে কাছে এসে অরনী নেমে পড়লো ! আমার মনে বড় জলদি যেন চলে এলাম ! আর একটু লাম্বা রাস্তা হলে কি এমন ক্ষতি হত ! আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না ! সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল ! আমিও ওর পেছন পেছন উঠতে লাগলাম ! মনে মনে বললাম ইস যদি প্রতি দিন যদি এমন করে বৃষ্টি হত !
দুই দিন পরে বাড়ির ছাদে আবার অরনীর সাথে দেখা । যদিও আমাদের বাড়ির ছাদে ওঠা নিষেধ ছিল কিন্তু সুযোগ পেলেই আমি ছাদে উঠতাম ! অরনী দেখলে অবশ্য মাঝে মাঝে চিৎকার চেঁচামিচি করতো কিন্তু আজকে করলো না ! আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম !
-এখানে কি করেন আপনি ?
অন্য দিনের মত এতো কড়া করে না তবে নরম করেও বলল না কথা না !
-এমনি হাওয়া খেতে এসেছি তোমার বাবা এমন ভাবে বাসা বানিয়েছে হাওয়া বাতাস আসে না ঘরের ভিতরে !
-তাহলে আছেন কেন ? ছেড়ে দিন !
-দিতাম কিন্তু ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না ! আরও একটা কারন অবশ্য আছে !
-কি কারন ?
-আছে ? একটা জনকে মাঝে মাঝে দেখি ! তাকে একবার দেখলে মন ভাল হয়ে যায় আপনা-আপনি । এই জন্য এই বাসা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না ! এই জন্য শত বকা খেয়েও ছাদে উঠি মাঝে মাঝে তাকে দেখার জন্য !
অরনী কিছু বলতে গিয়ে বলল না ! আমিও কিছু বললাম না ! সেদিনের অরনীকে কোলে নেওয়ার কথা ভাবতে লাগলাম ! এই দুই দিনে সেই কথাই অবশ্য অনেক বার ভেবেছি ! মেয়েটা এতো সহজে কিভাবে রাজি হয়ে গেল ! হয় তো ঐ দিন বাসায় যাওয়াটা ওর জন্য বেশ জরুরী ছিল ! কিংবা ....।
ভাবনায় ব্রেক লাগালাম ! নিজেকে বললাম আতো বেশি চিন্তা করা ঠিক না ! সব কিছু এমনি এমনি এভাবে হবে না !
আমি বললাম
-তোমার বৃষ্টি ভাল লাগে না ?
-নাহ ! একদম না ! দেখেন না বৃষ্টি হলে বাসার সামনে কেমন বিচ্ছিরি পানি জমে যায় ! বিরক্ত লাগে !
-এই কারনে বৃষ্টি ভাল লাগে না ?
-হুম !
-আজিব ! তবে আমার কিন্তু বৃষ্টি অনেক পছন্দ ! আমি তো চাই প্রতিদিন এরকম বৃষ্টি হোক !
অরনী খানিকটা বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-মানে কি ? কেন ?
-আমারও তোমার মতই ঐ একই কারন ! বৃষ্টি হলে বাসার সামনে পানিজমে যায় ! কাউকে না কাউকে কোলে নেওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় !
এবার অরনী আমার দিকে ভুরু কুচকে খানিকটা সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর আর কোন কথা না বলে নিচে চলে গেল ! আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আকাস একদম ফকফকা !
একটু বৃষ্টি দিলে কি হয় শুনি ?
মনে হয় আমার কথা শুনেই ফেলল । পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আকাশ জুড়ে বৃষ্টি পরছে । আমি শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম । আহা সেদিনের সেই দিন টা যদি আবার ফিরে আসতো ! এই কথা ভাবছি এমন সময় বাড়ির দারোয়ান ছেলেটা আমাকে ডাকতে এল ।
-কি ব্যাপার ?
-আফা আপনারে ডাকতাছে ।
-কোন আফা ?
-অরনী আফা !
-কি জন্য ?
-উনি নিচে দাড়ায়া আছেন । আপনারে যাইতে কইছে ।
আমার মাথায় কিছু এল না । আমি নিচে গিয়ে দেখি যথারীতি বাড়ির সামনে পানি জমে গেছে । তার সামনে অরনী দাড়িয়ে । সেদিনের মতই পোষাক পরা । আমি খানিকটা বিশ্ময় নিয়ে অরনীর দিকে তাকিয়ে আছে সেই পানির দিকে । আমি ঠিক বুঝলাম না আমাকে এখন আসতে বলার কারন কি ?
অরনীর কাছে গিয়ে বললাম
-কি ব্যাপার ? এতো সকালে ?
-উপরওয়ালা আপনার কথা শুনেছে ! তাই না ?
-হুম ! তাই তো দেখছি !
-তা এখন আমি বাইরে যাবো কিভাবে ?
-চলেন আমি নিয়ে যাই !
অরনী আমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-এই জন্যই আপনাকে ডেকেছি !
আমনার প্রথম মনে হল হয় তো আমি মনে হয় তখনও ঘুমিয়েই আছি কিন্তু অরনীর চেহারা দেখে তেমন মনে হল না ! আমি বললাম
-তুমি কি সিরিয়াস ?
-আমার চেহারা দেখে কি মনে হচ্ছে ?
-আমাকে একটা চিমটি কাটবে ?
-কেন ?
-না মানে স্বপ্ন দেখছি না তো !
আমি কিছুক্ষন অরনীর চেহারা দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আসলেই কখন কোথা থেকে কার ভাগ্য ফিরে যায় সেইটা বলা মুশকিল ! আমি ওকে কোলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম !
আহা ! লাইফ ইজ বিউটিফুল !
ESTÁS LEYENDO
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Historia Cortaব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।