ঘড়িতে ঠিক যখন দশটা বেজে সতের মিনিট তখন সবাই মোবাইলের সাইরেন বেজে উঠলো । অফিসের সবাই মুহুর্তের ভেতরে সচকিত হয়ে গেল । তারপর তাড়াহুড়া করে নিজেদেরকে সামলে নিতে শুরু করলো। সাইরেন বাজার অর্থই হচ্ছে নাইরা ম্যাম আসছে । সবাই সাবধান হও ।
সাইরেনটা ঠিক বিশ সেকেন্ড বেজেই বন্ধ হয়ে গেল । আমরা সবাই জানি বাইরা ম্যামের গাড়ি যখন গ্যারেজ দিয়ে প্রবেশ করে তখন গেটের দারোয়ান ফোন করে জানিয়ে দেয় রিসিপশনের মেয়েটাকে । সেই তখন সাইরেন বাজায় । এছাড়া অন্য কেউ যদি তাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে সেও মোবাইলের সাইরেন এপসটা চালু করে দেয় ! এই সাইরেনের কথা ম্যাডাম জানে না । জানলে আমাদের খবর আছে । তবে এই ব্যাপারে আমরা কেউ মুখ খুলি না । সবাই নাইরা ম্যামের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা রক্ষা করতে ব্যস্ত । তাই অন্তত এই ব্যাপারে সবাই একমত । অন্তত কেউ এই সকাল বেলা নাইরা ম্যামের কাছে বকা শুনতে রাজি নয় । তাহলে দিন একেবারে খারাপ যাবে ।
আমাদের অফিসের সব কিছু ভাল । তবে সবাই আমাদের বস মানে নাইরা ম্যামকে ভয় পায় । আরও ভাল করে বললে কেউ ই ঠিক পছন্দ করে না তাকে । এই রকম বস হলে কেউই পছন্দ করতে পারে না । কিন্তু আবার চাকরিও ছেড়েও যেতে চায় না । যতই নাইরা বদরাগি হোক, এই অফিসের স্যালারী অনেক ভাল । অনেক ভাল বলতে অনেক বেশি ভাল । যেখানে টাকা এতো আসছে তাই হাজারটা বকা শুনেও আমরা সবাই টিকে আছি । টিকে থাকার নানান কৌশল শিখে নিচ্ছি । সেই কৌশলের একটা হচ্ছে এই সাইরেন । এই সাইরেন এপটা আমরা স্পেশাল ভাবে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়েছে । আমাদের অফিসের সবাই মোবাইলে এটা ইনস্টল করা । যখনই ম্যাম গাড়ি নিয়ে গ্যারাজে ঢুকবে তখনই খবর আসবে । আর সে এপ বের করে সাইরেন চালু করবে । সাথে সাথেই যাদের মোবাইলে এই এপ আছে সব বেজে উঠবে ।
আমরা নিজেদের সামলে নিলাম । টেবিলে বসে পরিপাটি হয়ে নিলাম যাতে কোন ভুল না হয় ।
সকাল বেলা নাইরা ম্যাডাম যখন অফিসে ঢোকা তার আগেই আমরা টের পেয়ে যাই । আজও তাই হল । সে অফিসে ঢোকার আগে আমরা সবাই মন দিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম । ম্যাম দরজা দিয়ে ঢুকে করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে এগিয়ে গেল তার কেবিনের দিকে । প্রত্যেকেই তাকে গুড মর্নিং জানালো বটে তবে সে কারো দিকে ফিরে তাকালো না । কদিন থেকেই সে খানিকটা আপসেট হয়ে আছে । সবাই সাথেই একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করছে । কেন আছে সেটার কারণ হয়তো আমি জানি । আবার হয়তো জানি না । কদিন থেকে তার কাজ কর্মেও ঠিক মত মন নেই । সারাটা সময় কী যেন ভাবতে থাকে ! কী যে ভাবতে থাকে সেটা কেউ জানে না ।
VOCÊ ESTÁ LENDO
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Contoব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।