বাচ্চাটার মা মারা গেল সন্ধ্যা বেলা । হিমি তখন স্টাফ রুমে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো । একজন নার্স ছুটে এল । জানালো যে কেবিন নম্বর চারের পেসেন্ট কোন কথা বলছে না । হিমি উঠে দাড়ালো । রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না । বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মেয়েটার অবস্থা বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিলো । শরীর ভেঙ্গে গিয়েছিলো অনেকটা । হিমি বুঝতে পারছিলো যে মেয়েটা বাঁচবে না । কিছু কিছু মানুষের চেহারাতে ফুটে ওঠে ব্যাপারটা । হিমি ব্যাপারটা আগেও খেয়াল করেছে । নীলিমা নাম মেয়েটার । বয়স হবে ওর মতই । ফুটফুটে একটা বাচ্চা জন্ম দিয়েছে মেয়েটা । কি চমৎকার দেখতে হয়েছে !
কেবিনে গিয়ে দেখলো সব কিছু শেষ । মেয়েটা ঘুমের ভেতরেই মারা গেছে । বড় স্যার এসে দেখলো । কিছুই করার ছিল না কারো । পাশে বাচ্চাটা তীব্র চিৎকার করে কাঁদছে । সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে এই পৃথিবীর সব থেকে আপন মানুষটা তাকে ছেড়ে চলে গেছে । কয়দিন হয়েছে বাচ্চাটার বয়স? মাত্র ছয়দিন । এর ভেতরেই গলায় আওয়াজ বেশ বেড়েছে । বাচ্চার দাদী বাচ্চাটাকে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না । সবার চোখে পানি । তারপরেও চোখে একটা ব্যতীব্যস্ততা ।
বাচ্চাটা এতো চেচাচ্ছে কেন?
ওকে কেউ থামাও !
হিমি দেখতে পেল বাচ্চার দাদী বাচ্চাটাকে নিয়ে রুমের বাইরে চলে গেল । কিন্তু কাজ হল না । বাইরে থেকেও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ঠিকই । হিমি বাইরে বের হয়ে এল । এখানে আসলে আর কিছু করার নেই । আর মৃত্যু ব্যাপারটা ওর কখনও ভালো লাগে নি । ওর সাথে কাজ করতে আসা সবার মাঝে এই মৃত্যু নিয়ে কোন আলাদা অনুভূতি দেখেনি । সবার কাছেই যেন এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার । হাসপাতালের কেবল ডাক্তারেরাই না, নার্স আয়া সবার মাঝেই এক ব্যাপার । এসব দেখতে দেখতে সবার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে অথচ হিমি এখনও স্বাভাবিক হতে পারলো না । কোন দিন হয়তো পারবে । করিডোরে বাচ্চার দাদীর কাছে এসে হঠাৎ কি মনে হল দাদীকে বলল, আমার কোলে একটু দিবেন কি?
বাচ্চার দাদী তখনও খানিকটা দিশেহারা । একটু আগে তার ছেলের বউ মারা গেছে । ছেলের বাচ্চাকে কিছুতেই থামাতে পারছেন না । কেমন একটা অসহায় ভাব ফুটে ওঠেছে । হিমির কথা শুনে বাচ্চাটাকে ওর কোলে দিয়ে দিল । তখনই ঘটলো ম্যাজিক । বাচ্চাটা প্রায় সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দিল । এটা হিমি মোটেই আশা করে নি । এমন কি ওর দাদীও না । খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ওদের দিকে । বাচ্চা একটু পরেই কেমন হেসে উঠলো । হিমির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়েছে ।
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।