ফেসবুকে লগিন করতে গিয়ে আরেকবার ভাবলাম । শয়তানি টা করবো কি না বুঝতে পারছি না । একবার মনে হল নাহ, এমন টা করা ঠিক হবে না । কাউকে না বলে তার ঘরে ঢোকা যেমন অন্যায়, তেমনি কাউকে না জানিয়ে তার প্রোফাইলে ঢোকাও অন্যায়। ঠিক তখনই আবার মনে হল, কিন্তু যদি সেই মানুষ নিজের ঘরের চাবি অন্যের হাতে তুলে দেয় তাহলে কি ঘরে ঢোকা যাবে না ? আমি কিছু হাত না দিলেই হল । আর কোন কিছু চিন্তা করলাম না । ইমেল এর জায়গায় লিখলাম নাওরিন নাহিন এট ইয়াহু ডট কম । এবার পাসওয়ার্স । মনে আছে তো ?সহজ কয়েকটা নাম্বার । লিখে দিলাম । লগিন বাটনে চাপ দিতেই কাজ হয়ে গেল । নাওরিন নাহিনের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে পড়লাম । আহা ! দেখতে তো চমৎকারই মেয়েটা । অবশ্য সরাসরি দেখতেও বেশ সুন্দরই । তবে আমি পেছন দিকে বসে ছিলাম বিধায় ভাল করে দেখতে পারি নি । এখন বেশ ভাল করেই দেখা যাচ্ছে । স্ক্রল করে বেশ কিছু স্টাটাস পড়লাম । কিছু সবি দেখলাম । প্রোফাইলের ইন্টারেস্ট, লাইকস সবই দেখতে লাগলাম আস্তে আস্তে করে । এবার মেসেজ ।না । মোটেই না । কারো ব্যক্তিগত মেসেজ পড়া ঠিক না । মোটেই ঠিক না । তানভীর ভাল হয়ে যাও । বলছি ভালো হয়ে যা । কয়েকবার নিজেকে ধমক দিলাম কিন্তু বদ তানভীর কিছুতেই শুনলো না । মেসেজ বক্সে ঢুকেই পরলো । হুম দেখা যাক । কোথায় আছে ?বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবীর সাথে ক্যাজুয়াল কথা বার্তা । আর কিছু না । একটু পড়াশুনা করলাম । ক্লাসের বই পড়তে ভাল না লাগলেও অন্যের মেসেজ পড়তে ভালই লাগে । এই তো পেয়ে গেছি । নাওরিন নাহিন তার এক বান্ধবীকে তার মোবাইল নাম্বার দিয়েছে । এই তো কিছুক্ষন আগেই । যাক ভাল । আমি দেরি না করে নাম্বার টা টুকে নিলাম । তারপর নিজের আইডি থেকে নাওরিন কে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম । এবং নিজেই সেটা গ্রহন করে নিলাম নাওরিনের আইডি থেকে । এখন অপু তানভীর ইজ ফ্রেন্ড উইথ নাওরিন নাহিন । হিহিহিহিহিহি ।নাওরিন নাহিনের খোজ কেমন করে পেলাম ? বলা যায় এটা খনিকটা ভাগ্য গুনেই পেয়েছি । আজকে ক্লাসে যাওয়াটা বিরাট এক ভুল ছিল । দু ঘন্টা জ্যামে আটকে যখন ক্লাসে পৌছালাম তখন ক্লাসের অর্ধেক টা হয়ে গেছে । বিরক্ত হয়ে ক্লাস করতে শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেল । এবং ম্যাডাম জানালো যে আজকে আর কোন ক্লাস হবে না । আজকে নাকি ক্যাম্পাসে সেমিনার আছে কিসের না কিসের উপরে । বিরক্তির সীমা রইলো না । আমার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । আবার সেই জ্যাম । বাসে বাসে ঢুলতে ঢুলতে আসতেছি তখন বাস সিটি কলেজের সামনে এসে দাড়ালো । মর্নিং সিফট ছুটি হয়েছে কেবল । মেয়েরা কিছু উঠলো বাসে । তবে বেশির ভাল সিটই ফাঁকা । আমার সামনের সব গুলো সিট ফাঁকা । সামনের কয়েকজন এদিক ওদিক বসে আছে ।তখনই মেয়ে দুটো কে উঠতে দেখলাম । এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আমার দিকে চোখ পড়লো একজনে । তারপর চোখ সরিয়ে নিল । এবং বসার জায়গা খুজতে খুজতে আমার সামনেই সিটের এসেই বসলো । আমি পা তুলে বসে ছিলাম, পা নামিয়ে বসলাম । হাজার হোক মেয়েদের সামনে অভদ্র হয়ে বসে থাকা যায় না । বাস চলতে শুরু করলে মেয়ে দুটো কথা শুরু করলো । কত কিসিমের কথা রে ভাই । একবার মনে আরও পেছনে চলে যাই । এতো বকর বকর ভাল লাগছে না । যাবো যখন মনস্থির করলাম তখনই একজন আরেকজন কে বলল-এই তোর মোবাইল টা দে তো । -কেন ?-আমার টাকা শেষ । একটু ফেসবুকে ঢুকবো ।-এই নে । মেয়েটা নিজের সামনে মোবাইল ধরে ফেসবুক অন করলো । মেয়েটা মোবাইলটা এমন ভাবে ধরেছিল যে আমার সিট থেকে মেয়েটার মোবাইলের স্ক্রিন একেবারে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল । আমি এক ভাবে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটি নিজের আইডি দিল । এবং যে পাসওয়ার্ড দিল সেটাও দেখলাম কি-প্যাডের প্রতিটি টাচ স্পষ্ট করে দেখতে যাচ্ছিলাম । এবং সত্যি বলতে কি এতো সহজ যে মনের ভিতর সহজেই ঢুকে গেল । পেয়ে গেলাম তার আইডি আর পাসওয়ার্স ।রাতের বেলা নাওরিন নাহিন আমাকে নক করলো । -হ্যালো ।-হাই । সে বলল-আমি তো ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না । আপনি কে বলেন তো ?-আশ্চর্য আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করলেন আর আপনি জানেন না আমি কে ?-আমি ? কখন ?-আজকেই তো ?-কই না তো ? আপনাক নতুন দেখছি । আপনাকে আমি ঠিক চিনতে পারছি না । আমি বললল-আপনি আপনার এক্টিভিটি লগ চেক করে দেখেন । নাওরিন কিছুক্ষন কি করলো যেন । একটু পরে একটা অবাক হওয়ার ইমো দিল । তারপর বলল-আপনাকে আমি সত্যিই চিন্তে পারছি না । -তবে আমি কিন্তু তোমাকে ঠিকই চিনি ।-তুমি ? আপনি থেকে তুমি ?-আসলে তোমাকে চিনি তো আর তুমি আমার থেকে ছোটই হবে । তোমাকে তুমি করে বলি ?-কিভাবে চিনেন বলেন ? আমি আস্তে আস্তে বেশ কিছু কথা বললাম । সব গুলোই আমি ওর মেসেজ থেকে জেনেছি । সাথে সাথে ওর ইনফো থেকেও কিছু নেওয়া । সব শেষে বললাম যে ওর মোবাইল নাম্বারও আমার কাছে আছে । নাওরিন এটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না । কিন্তু যখন ফোন দিলাম ওকে ও সত্যি সত্যই অবাক হল বেশ । মানে ওর কন্ঠ স্বর শুনে তেমন মনে হচ্ছিল । সেই দিন থেকেই শুরু । ওর সাথে টুকটাক কথা শুরু করলাম । মেয়েটা তো কিছুতেই আমার সাথে কথা বলবে না কিন্তু কিভাবে ওর সম্পর্কে এতো কিছু জানলাম এটা না জেনেও মেয়েটা শান্তি পাচ্ছিলো না । এভাবেই কথা চলতে থাকলো । আস্তে আস্তে মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবে কথা শুরু করলো । আমি কোথায় থাকি কি করি সব কিছুই মেয়েটার সাথে শেয়ার করার পরে মেয়েটা কথা বলতো । আমি ফোন দিতাম মেয়েটাও মাঝে মাঝে দিত । এভাবে দিন ভালই যাচ্ছিল । তবে প্রতিদিন সে আমার কাছে একই প্রশ্ন করতো । আমি কিভাবে তার পরিচিত হলাম, তার ফেসবুক ফ্রেন্ডই বা কিভাবে হলাম । একদিন মনে হল মেয়েটা সত্যি সত্যি বলেই দেই । এমন করে আর কত দিন । ক্লাস শেষ করে বাসায় আসছিলাম । ওদের কলেজের সামনে এসে ফোন দিলাম । -কোথায় তুমি ?-এই বাইরে বের হচ্ছি । কলেজ ছুটি হল মাত্র । -সাথে কেউ আছে ?-কেউ বলতে ? -না মানে তোমার বন্ধুরা ?-কেন বলুন তো ?-আসলে আজকে তোমাকে সত্য কথাটা বলতাম । কিভাবে তোমাকে চিনি ? কিভাবে তোমার নাম্বার পপেলাম । এই ।-ও । তা বলুন ।-না মানে তোমাকে লাঞ্চ করাতাম । যদি আপত্তি না থাকে । কিছুক্ষন নিরবতা । তারপর নাওরিন বলল-আচ্ছা । আমি ওদের কে কাটিয়ে আসতেছি । কোথায় আসবো বলুন ?-স্টারে আসো । -ওকে । একটু অন্য রকমই লাগছিল । দেখলাম নাওরিনও একটু যেন অস্বস্থিতে আছে । বিশেষ করে আসে পাশে অনেকেই ওদের কলেজের ছেলেমেয়েরা রয়েছে । আমরা কোনার দিকে একটা টেবিলে বসে কাচ্চি দিতে বললাম । -আচ্ছা এবার বলুন । -শুনবেই ? -হুম ।-আসলে একটু ভয়ে আছি যে তুমি আবার রাগ না করো ?-আমি তো জানি আপনি রাগ করার মত কোন কাজই করেছেন । কেবল জানতে চাচ্ছি কিভাবে করেছেন । -বলবো ?-হুম । বলুন । কাচ্চি চলে এল । খেতে ওকে সব কিছু বললাম । বারে বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ও ওঠে চলে যাবে । কিন্তু নাওরিন আস্তে আস্তে খেতে লাগলো । আমি চুপকরে রইলাম । এক সময় নাওরিন বলল-এটা কি আপনি ঠিক করেছেন ?-নাহ । -তাহলে এখন আপনার কি শাস্তি পাওনা বলুন ?-আমি জানি না । কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নাওরিন বেশ জোরেই হেসে ফেলল । আমিও খানিটা অবাক হলাম । হাসার মত এমন কি বললাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল-আপনারা ছেলেরা নিজেদের কে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন,তাই না ?-মানে কি ?-মানে এতোই সহজ ? একটা মেয়ে কি এতোই গাধা যে নিয়ে আইডি পাসওয়ার্ড এতো সহজে কাউকে দিয়ে দিবে ? কিংবা হাত ছাড়া হয়ে যাবে ? আমি জানতাম না আপনি আমার পিছনে আছেন ?-তাহলে ? আমি চোখ বড় বড় করে নাওরিনের দিকে তাকিয়ে আছি । নাওরিন বলল-আমি ইচ্ছে করে আপনাকে আমার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েছি । বুঝছেন ? আমি এমন ভাবে মোবাইল টা ধরেছিলাম যাতে আপনি সেটা দেখটে পারেন ।-মানে কি ?-জি এটাই মানে । আমি তো জানতাম । আপনার চেহারায় লেখা ছিল আপনি ঠিকই আমার আইডিতে ঢুকবেন । -চেহারায় লেখা ছিল ?-জি জনাব । লেখা ছিল । -তাই বলে অপরিচিত একজন কে নিজের আইডি দিয়ে দিবে ?-ওটা আমার আসল আইডি না । এমনি এমনি খুলেছিলাম । আর যে মোবাইল নাম্বার টা দিয়েছি ওটাও সব সমসয় বন্ধই থাকতো । কেবল আপনার জন্য চালু করেছিলাম । নাওরিন খেতে খেতেই হাসতে লাগলো । আমি বেকুবের মত ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । নাওরিন বলল-হা করে কেন তাকিয়ে আছেন ? খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো । আমি চুপচাপ খাওয়াই মন দিলাম । এই বদ মেয়ে আমাকে কিভাবে বেকুব বানালো । এখন আবার দাঁত বের করে হাসতেছে ! সামনে এই মেয়ে আর কত কি করে কে জানে ! #427
YOU ARE READING
বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০৩)
Short Storyব্লগে গল্প লিখছি সেই ২০১১ সাল থেকে । অনেক গল্প সেখানে জমা হয়ে গেছে । সেই গল্প গুলোই আস্তে আস্তে এখানে এনে জমা করা হচ্ছে । দুইটা ভলিউম এর আগে প্রকাশ হয়েছে ।