3

2.1K 79 0
                                    

৩.

পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে। অপার্থিব এবং অদ্ভুত সুন্দর। চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে সবকিছু। গাছের পাতায় আলো লেগে ঝিকমিক করে উঠছে। ট্রেন ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। ট্রেনের ঝাঁকুনি অনুভব করছে মিশু। থেকে থেকে দুলে দুলে উঠছে আর ঝিকঝিক শব্দ কানে আসছে। মাঝেমাঝে কিছু তরুণ তরুণীর হাসির শব্দ ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দকেও হার মানাচ্ছে। মিশু কারো শরীরের উষ্ণতা মাপতে পারছে। মনেহচ্ছে কেউ বুকের বা পাশে ঠিক বাহুর কাছাকাছি পরম যত্নে জড়িয়ে রেখেছে ওকে,তার পেশিবহুল বাহুর উপস্থিত টের পাচ্ছে নিজের বাহুর উপর। সে আলগোছে মেয়েটির বাহু ধরে রেখেছে, মাঝেমাঝে ট্রেনের ঝাঁকুনিতে শক্ত করে চেপে ধরছে। ভ্রম লেগে যাচ্ছে মিশুর। সেই শয়তানটা নয়তো? শুয়োরটা ট্রেনে করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

চিৎকার করে হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো মিশু। চোখ মেলে দেখলো পরিস্থিতি অন্যরকম। একটা দারুণ হ্যান্ডসাম মতন ছেলের বুকের বা পাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছিলো সে। সেই ছেলেটিই ওকে আলগোছে ধরে ছিলো বুকের সাথে। সামনের সিটে, পাশের সিটে কয়েকটা যুবক যুবতীর কৌতুহলী চোখ দেখে বিস্মিত হয়ে গেলো। এরা আবার কারা? ওদের সাথে আমি কোথায় চলেছি? আর এই ছেলেটিই বা কেন এভাবে আমায় বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো? সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত লাগছে। ঘোর ঘোর লেগে যাচ্ছে রীতিমত। মিশু মনে করার চেষ্টা করলো।

আস্তে আস্তে মনে পড়ে যাচ্ছে সবকিছু। পালানোর জন্য প্রাণপণে ছুটছিলো সে। হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো মাত্রই আর কিছু বলতে পারেনা। খুব সম্ভবত সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলো। তারপর কি যেন হয়ে গেলো বুঝতে পারেনি সে। কয়েকটা কৌতুহলী মুখ উপুড় হয়ে তাকে দেখছিলো। হ্যা,এইতো সেই কৌতুহলী মুখগুলো। এখন যারা পাশে বসে আছে তাদেরকেই তো দেখেছিলো। এবার বেশ মনে পড়েছে, মিশু ভেবেছিলো আল্লাহ কোনো ফেরেশতা পাঠিয়ে দিয়েছেন ওর জন্য। এই পাশে বসে থাকা হ্যান্ডসাম ছেলেটা ওকে কোলে নিয়ে হাঁটলো, তারপর সিএনজিতে বসে রুটি আর ওষুধ খাইয়ে দিলো। হুম,এরপর ছেলেটি বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিলো ঘুমিয়ে পড়তে, ঘুমালে নাকি আর বিপদ থাকবে না। সত্যিই তো,তারপর মিশু ঘুমিয়ে পড়েছিলো আর এখন অদ্ভুত ভাবে বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু ওরা কারা? আর ট্রেনে উঠলো কিভাবে?

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now