54

1K 41 0
                                    

৫৪

ডাক্তার এসে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দিলেন। তন্ময় গলাকাটা পশুর মত ছটফট করছে। শারীরিক যন্ত্রণার সাথে মানসিক যন্ত্রণাও যুক্ত হয়েছে। মৃত্যুও হচ্ছেনা, বাঁচার শান্তিও পাচ্ছেনা। দুটোর মাঝামাঝি অবস্থায় পড়ে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। তন্ময়ের কষ্ট দেখে মিশু পাগলের মত কাঁদছে।

মেঘালয় মিশুর হাতটা শক্ত করে ধরলো। মিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো এমন সময় মিশু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তন্ময়ের পাশে গিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ডাক্তারকে বারবার বললো, 'তন্ময় ভালো হয়ে যাবে তো? ওকে ভালো ওষুধ দিন না। যেন তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।'

কথাগুলো বলার সময় মিশুর চোখেমুখে যে মায়া ফুটে উঠেছিলো সেটা দেখেই ভয় হচ্ছে মেঘালয়ের। একদিকে রাগও হচ্ছে, অন্যদিকে অসহ্য দহন। মিশু কেন কাঁদবে ওর জন্য? কাঁদলেও ও এতটা পাগল কেন হচ্ছে? ও কি জানেনা মেঘালয়ের কষ্ট হয় অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা দেখলে? তবুও রাগ সামলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো মেঘালয়।

মিশু তন্ময়ের হাত শক্ত করে ধরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। ডাক্তারের সাথে তার চেম্বারে গিয়ে আলোচনা করলো। তারপর আবারো এসে বেডের পাশে বসে রইলো শান্ত হয়ে। মেঘালয় শুধু থ হয়ে দেখছে মিশুর কর্মকাণ্ড। তন্ময় একটু পরপর হাসফাস করে ওঠে। এ্যাজমা রোগীর মত হাফাতে থাকে। মিশুর খুব কষ্ট হয় এটা দেখলে। পাগলের মত কাঁদতে থাকে। মেঘালয় মিশুকে বুকের সাথে জাপটে ধরলে মিশু কাঁদতে কাঁদতে বললো, 'তন্ময় এমন করছে কেন? ওর বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে মেঘ। খুব কষ্ট হচ্ছে। তন্ময় কি মরে যাবে?'

বলতে বলতে মিশু মেঘালয়কে জাপটে ধরে শক্ত করে। মিশুর গলা শুনে মেঘালয়ের বুকটা ফেঁটে যায়। তবুও সহ্য করছে চুপ করে। মেঘালয়ের কষ্টটা ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব না। খারাপ লাগা, যন্ত্রণা, হিংসে, ভালোবাসা সবকিছুর অনুভূতি একইসাথে হানা দিচ্ছে। মিশুর মনে কি এখনো তন্ময়ের জন্য ভালোবাসা আছে? সেটাই তো মনেহচ্ছে। নয়তো এভাবে কেন কষ্ট পাবে। মেঘালয়ের মাথাটাই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ভাবলে।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now