৪২
রাত নেমেছে অনেক্ষণ আগেই। মিশু সদ্য শ্বশুরবাড়িতে এসেছে। বাড়ি দেখেই হতবাক হয়ে গেছে ও। মেঘালয়ের রুমটা একেবারে ওর স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর। এরকম একটা ঘর ওর হবে ভাবতেও পারেনি কখনো। ঘরের সবকিছুতেই এক ধরণের শুভ্রতা ছেয়ে আছে। মনটা না চাইতেও ভালো হয়ে যায়। প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় ভেতরটা। আর বিছানা দেখেই মনেহয় শুয়ে পড়লেই ঘুমে চোখ বুজে আসবে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিশু মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘালয় সোফার উপর বসে ল্যাপটপ কোলে বসিয়ে কি যেন করছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে কিছু একটা নিয়ে। মিশু বিছানা থেকে উঠে ধীরেধীরে এগিয়ে এলো মেঘালয়ের কাছে। পাশে বসে বললো, 'কি করছেন?'
- 'একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ করছি। একটু অপেক্ষা করো।'
মিশু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আজকে মেঘালয়ের কাজ শেষ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে হয়ত। হতাশ হয়ে উঠতে যাবে এমন সময় মেঘালয় ওর হাত টেনে ধরে বললো, 'মন খারাপ কোরোনা। কাজটা শেষ করেই আসছি।'
মিশু মুচকি হেসে বললো, 'মন খারাপ করিনি। আপনি কাজ শেষ করেই আসুন।'
মিশু বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। শহরটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে এখান থেকে দেখতে। কত মোহময় একটা রূপ আছে এই শহরের। চেনা শহরটাকেও রাত্রিবেলা কেমন যেন অচেনা লাগে। মুগ্ধ হয়ে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিশু। মেঘালয়ের কাজ কি এখনো শেষ হয়নি? তখন তো খুব করে বলেছিলো আজ রাতে তোমার খবরই আছে। তাহলে এখন আবার কি হলো? এরপর আবার নিজেকেই নিজে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, 'আচ্ছা কাজ করছে যখন করুক।'
হঠাৎ মেঘালয় ডেকে বললো, 'কল এসেছে ফোনে।'
মিশু একটু অবাকই হলো। মেঘালয় কি পারতো না ফোনটা নিয়ে বেলকুনিতে এসে দাঁড়াতে? কাজের প্রতি খুব মনোযোগী ছেলেটা সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মিশুর মন খারাপ হলেও রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো। বাবা ফোন করেছে। ও রিসিভ করে বললো, 'ঘুমাওনি?'
- 'ঘুম আসছে না মা। আমি কাল সকালে বাসে উঠবো। ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি।'
মিশু কি যেন ভেবে বললো, 'আব্বু তুমি আরো কয়েকদিন পরে এসো।'
বাবা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, 'কেন?'
মিশু ফোন নিয়ে বেলকুনিতে এসে দাঁড়ালো। বললো, 'আমাকে দুটো দিন এদের সাথে একাকী মিশতে দাও। আমি দেখতে চাই সবাই আমার সাথে কেমন আচরণ করে। তুমি কয়েকদিন পরে আসো।'
- 'ঠিক আছে মা। কিন্তু তোর শ্বশুরকে কি বলবো?'
- 'আমি বলে দিবো আম্মুর শরীরটা একটু খারাপ। তাই তুমি দুদিন পরে আসবে।'
- 'তুই যা ভালো মনে করিস। রাতে খেয়েছিস মামনি?'
- 'হ্যা। তুমি?'
- 'হ্যা রে মা। তোর কি মন খারাপ?'
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, 'না আব্বু। কাল কথা বলবো, ঘুম পেয়েছে আমার।'
ফোন কেটে দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মিশু। মেঘালয়কে ছাড়া একটা মুহুর্তও ভালো লাগেনা ওর। তাহলে কি ধীরেধীরে মেঘালয়ের প্রতি এক ধরণের মায়া তৈরি হচ্ছে? মায়া জিনিসটা বড্ড অদ্ভুত। কিভাবে কখন কার প্রতি জন্মে যায়, বোঝাই যায়না।
এমন সময় মেঘালয় এসে আচমকা কোলে তুলে নিলো মিশুকে। রুমে এসে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মিশু শিউরে উঠে দুহাতে খামচে ধরলো মেঘালয়ের শার্ট। মেঘালয় নিচু হয়ে এসে মিশুর কপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে বললো, 'আমার বউটা একটু বেশিই মিষ্টি দেখতে। কি বলেছি মনে আছে তো?'
মিশু চোখেচোখে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, 'কি?'
মেঘালয় বললো, 'আমার বউকে আমার মত হতে হবে।'
মিশু চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মেঘালয় আরো কাছে এসে ওর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো মিশু। চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো দুফোটা। এটা কিসের কান্না বুঝতে পারলো না ও। হয়ত সুখের কিংবা অচেনা কোনো যন্ত্রণার...
![](https://img.wattpad.com/cover/188007503-288-k560327.jpg)
YOU ARE READING
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Adventureমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...