56

1K 37 0
                                    

বাড়ি থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলো কি করবে এখন? কোথায় যাওয়া যায়?

এমন সময় মেঘালয় এসে পাশে দাঁড়ালো। মিশু জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি এলেন কেন? আমার সাথে যাবেন নাকি?'

- 'নিয়ে গেলে যাবো।'

- 'আমি আপনাকে নিয়ে যাবোনা।'

- 'তবুও যাবো।'

মিশু তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে জানতে চাইলো, কেন?

মেঘালয় বললো, 'আমি তন্ময়ের মত দায়িত্বহীন নই যে রাস্তায় ফেলে যাবো। তুমি চলে যেতে চাইছো যাবে। কিন্তু একা একা এখন কোথায় যাবে খেয়াল রাখাটা আমার দায়িত্ব। কোথায় যেতে চাও বলো, আমি নিজে গিয়ে রেখে আসবো।'

মিশু ফিক করে হেসে বললো, 'এই দায়িত্ববোধ জিনিস টার জন্যই আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে।'

- 'আমার আর কিছু ভালো লাগেনা?'

- 'এখন ইয়ার্কির সময় না। আমি ছোট চাচার বাসায় যাবো।'

- 'সেখানে আবার মাসুদের মত ভাই নেই তো? তোমার চাচাতো ভাইয়েরা আবার ঘরে শত্রু বিভীষণের মত।'

- 'না, আমার বোন খুব ভালো মেয়ে।'

- 'গাড়িতে ওঠো, রেখে আসছি।'

মিশু কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। মেঘালয় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো, 'যা করছো ভেবে করছো তো?'

- 'হ্যা। আমি যা করছি একদম সঠিক করছি সেটা আপনিও বুঝতে পারছেন।'

- 'আবারো ভাবো।'

মিশু তেজের সাথে বললো, 'মা আমাকে বলেছে এক পা ফেলার আগে আমাকে ভাবতে হবে আমি কার ছেলের বউ। একটা মেয়ে আজীবন এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বাঁচে। বিয়ের আগে সবাই জানতে চায়, তুমি কার মেয়ে? আর বিয়ের পর তুমি কার বউ কিংবা কার ছেলের বউ? একটা মেয়ের নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। মাকে সবাই চেনে একজন ভালো ডক্টর হিসেবে, তারপর উনি অন্যের স্ত্রী। আমিও নিজের একটা পরিচয় চাই, তারপর আপনাদের।'

মেঘালয় শান্ত হয়ে ভাবলো কথাটা। বেশ বলেছে মিশু। কথাটা অনেক মনে ধরেছে ওর। গাড়ি থামিয়ে মিশুর দিকে তাকালো মেঘ। মিশু বললো, 'কি? গাড়ি থামালেন যে?'

- 'একটা কথা বলবো মিশু?'

- 'হুম বলুন।'

- 'তোমার এই কথাটাকে আমি স্যালুট জানাই। তবে একটা আদেশ থাকবে তোমার প্রতি। দূরেই যখন থাকবে তাহলে আমার এই কথাটাও তোমার সত্যতে রূপান্তর করতে হবে। পারবে?'

- 'কি রকম?

মেঘালয় মিশুর চোখে চোখ রেখে বললো, 'তোমার নিজেকে এমন একটা জায়গায় দাড় করাতে হবে যেন সবাই তোমাকে তোমার পরিচয়ে চেনে। একদিন তুমি লাইভ প্রোগ্রামে যাবে, টকশো তে যাবে। তখন আমি কিংবা আমার পরিবার যাবো তোমার পরিচয়ের সুবাদে। সবাই যেন আমাদের দেখলে বলে এটা মিশুর হাজব্যান্ড কিংবা মিশুর শ্বাশুরি। তোমার বাবা যেন গর্বের সাথে বলতে পারে আমি মিশুর বাবা। তখন বাবা তোমার পরিচয়ে পরিচিত হবে। এরকম কিছু করে দেখাতে পারবে?'

উদ্দীপনা খেলে গেলো মিশুর চেহারায়। চেহারা দৃঢ় হয়ে উঠলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'আমি পারবো।'

- 'এই আত্মবিশ্বাস টাই এনাফ। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।'

তারপর মিশুর হাতের উপর হাত রেখে বললো, 'আমি সবসময়ই তোমার। নিজের একটা স্থান গড়ে তারপর আমার স্ত্রী হয়ে ওঠো। সবসময় পাশে আছি। ভরসা রেখো।'

মিশু প্রসন্ন হাসি দিলো। মেঘালয়ওহাসার চেষ্টা করলো। মিনিট বিশেক গাড়ি ড্রাইভ করে গেলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না।নিরবতার ও একটা ভাষা আছে। নিরবেই বলা হয়ে গেলো কত কথা। মেঘালয় মিশুকে ওর চাচার বাসারসামনে নামিয়ে দিয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলো। প্রসন্ন হাসি দিয়ে বিদায় দিলো মিশু। দুজনেরমুখটাই হাসি হাসি কিন্তু অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূরত্বের কথা ভেবে বুকটা কিভাবে ফাটছেতা কাউকে দেখানো যায়না।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang