35

1K 36 0
                                    

৩৫.

মাথায় বাজ পড়লে যেমন হয়, হঠাৎ বাবার এরকম কথা শুনে একই অবস্থা হয়েছে মেঘালয়ের। মিশুকে সে অনেক আপন করে নিয়েছে, এখন যদি বাসার লোকজনরা নিতে না পারে তাহলে কি হবে মেয়েটার? এত বড় মুখ করে নিয়ে এসেছে তাকে, সমস্ত কথাই মিথ্যে হয়ে যাবে যে।

মিশু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কি হয়েছে? বাবা কি বললেন?'

মেঘালয় করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বলতে পারলো না কিছু। মিশু মেঘালয়ের কোলের উপর উঠে বসে দুহাতে গলাটা জড়িয়ে ধরলো। মুখটা এগিয়ে এনে মেঘালয়ের মুখের সামনে কাৎ করে বললো, 'আসো।'

মেঘালয় কোনো সাড়া দিলো না। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে ওর। মিশু মেঘালয়ের মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে চুলগুলো মুঠো করে ধরে ফেললো। মুখটা ক্রমশই কাছে এগিয়ে আনতে আনতে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো, 'বাবা কি বললেন? আমরা কবে বাসায় যাবো? আপু সবকিছু ম্যানেজ করেছে তাইনা?'

মিশু মেঘালয়ের মুখের একদম কাছাকাছি চলে এলে নিশ্বাস ঘন হয়ে উঠতে শুরু করলো ওর। আবেশে চোখ বুজে আসতে চাইছে। মিশু দুহাতে মেঘালয়ের চুলগুলো খামচি দিয়ে ধরে আরো কাছে টানতে টানতে বললো, 'চব্বিশ ঘন্টা কি এখানেই কাটাবো? বাসায় যাবো কবে?'

কথাটা বলতে বলতে ঠোঁট দুটো একদম কাছে এগিয়ে এনে মেঘালয়ের ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে এমন সময় মেঘালয় বললো, 'বাবা বলেছে আর কখনো বাসায় এসোনা। কখনো আমাকে ফোনও দিওনা।'

বড় ধরণের ধাক্কা খাওয়ার মত চমকে উঠে মেঘালয়ের মাথাটা ছেড়ে দিলো মিশু। সরে গেলো অনেকটা দূরে। এরকম কথা শোনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলোনা ও। মেঘালয় কয়েকদিন ধরে ভরসা আর বিশ্বাস দিয়ে আগলে রেখেছে ওকে। মৌনি নিজেও নিজের গলার চেইন খুলে পড়িয়ে দিয়ে গেছে। মেঘালয়ের কাছে যতটুকু জেনেছে, পরিবারটা অনেক বেশি সুন্দর। তাহলে এরকম কেন হলো?

দুজন দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মিশুর বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠছে। ওর জন্য মেঘালয়ের সাথে বাবার সম্পর্কটা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না ও। কষ্ট হচ্ছে খুব। মেঘালয়ের কোল থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে বেলকুনিতে এসে দাঁড়ালো ও। মেঘালয় মাথায় হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগলো এবার কি হবে? সায়ানের নাম্বারে কল দিলে কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেলো। বাধ্য হয়ে মায়ের নাম্বারে কল করলো মেঘালয়। সেটাও রিসিভ হলোনা। এবার সত্যিই প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now