48

1.1K 42 1
                                    

৪৮

জানালায় ঠকঠক শব্দ শুনে মিশু জানালা থেকে পর্দা সরাতেই দেখতে পেলো তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। মেজাজ বিগড়ে গেলো মিশুর। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, 'চলে যাও এখান থেকে। দয়া করে আর কক্ষনো এসোনা।'

তন্ময় হাত জোর করে অনুরোধ করলো একটু কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য। মিশু কিছুতেই ওর কথা শুনতে চাইলো না। জানালায় পর্দা টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। মিনিট দশেক পর কৌতুহল বশত পর্দাটা সরাতেই কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখতে পেলো তন্ময় এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বুকটা ব্যথা করছে মিশুর। তন্ময়কে কিছু কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া দরকার। কথাগুলো না বললে সে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। আর কিছু কথা তন্ময়কে বলাটাও উচিৎ।

অনেক কিছু ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো ও। জানালা খুলে তন্ময়ের দিকে তাকালো। মিশুকে জানালা খুলতে দেখে তন্ময় চমকে উঠলো। পিছন ফিরতেই মিশু ওকে বললো, 'তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। কিন্তু আমি বাইরে গেলে আর কেউ দেখে ফেললে বাজে ব্যাপার হয়ে যাবে। গ্রামের লোকজন অনেক খারাপ ভাববে। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি, ভেতরে এসে সোজা ছাদে চলে যাবা। আমি আসছি।'

- 'আচ্ছা মিশু।'

- 'বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করবে না একদম। কথা বলা শেষ হলে চলে যাবে।'

- 'আচ্ছা ঠিকাছে।'

মিশু মেইন দরজা খুলে তন্ময়কে ভেতরে আসতে বললো। তন্ময় ভেতরে প্রবেশ করে সোজা ছাদে চলে গেলো। মিশু গায়ে একটা চাঁদর জড়িয়ে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে ছাদে উঠে এলো। তন্ময় মিশুকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলো না। দ্রুত রীতিমত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো মিশুকে। হতবাক হয়ে গেলো মিশু। এটা ও কিছুতেই আশা করেনি। তন্ময়ের বুকের সাথে মাথাটা ঠেকতেই অস্থির লাগতে শুরু করলো। এরকম করলে তো দূর্বল হয়ে পড়বে ও। তারচেয়ে যে কথাগুলো বলতে এসেছে সেগুলো বলা উচিৎ।

মিশু নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই তন্ময় আরো জোরে বুকে চেপে ধরলো। মিশুর পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। যন্ত্রণার আগুনে দগ্ধ হতে হতে আর বোধহয় কিছুই অবশিষ্ট নেই। তন্ময়কে এখনি চলে যেতে বলতে হবে। তন্ময় মিশুকে বুক থেকে সরিয়ে দাড় করিয়ে দুহাতে ওর মুখটা ধরে ফেললো। মিশু সমানে চেষ্টা করলো তন্ময়ের হাত সরানোর কিন্তু পারছে না। গলা দিয়ে শব্দও বের হচ্ছেনা। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলো। তন্ময় মিশুর চোখ মুছে দিয়ে বললো, 'কাঁদবে না তুমি আর।'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now