২৭
সমুদ্র শান্ত হয়ে আছে, শিরশিরে বাতাসে ঢেউ এসে আচড়ে পড়ছে তীরে৷ চাঁদের মোহময় আলোয় চিকচিক করছে তীরের বালুগুলি। মাঝেমাঝে জোরে হাওয়া এসে বিশাল ঢেউ টেনে এনে তীরে ফেলছে৷ সামনে শুধুই মহাশূন্য! বিশাল শূন্যতায় ভরা আকাশটা নেমে গেছে সাগরে। এই সাগরের রূপের বর্ণনা বলে শেষ করা সম্ভব না। নীল জলে চাঁদের আলো পড়ে অপূর্ব রূপ ধারণ করেছে। আর তার তীরঘেষে দুজন সুখী মানুষ হেঁটে চলেছে।
বাতাসে উড়ছে মিশুর শ্যাম্পু করা চুল, ওড়নার একাংশ উড়ে মেঘালয়ের গায়ের উপর গিয়ে পড়ছে। মেঘালয় একহাতে মিশুর একটা হাত ধরে রেখেছে, পাশাপাশি হাঁটছে দুজনে। সমুদ্রের নোনা জলে ভিজে যাচ্ছে পা আর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে দুজনের হৃদয়! মিশু ক্রমশই এই অনিন্দ্য সুন্দর মানুষটার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করেছে। আর এই মানুষটাও ভালোবেসে একদম বুকের ভেতর পুষে রাখতে চাইছে এই চঞ্চল পাখিটাকে।
মেঘালয় বললো, 'সমুদ্র কত শান্ত হয়ে আছে তাইনা?'
মিশু মুগ্ধ হয়ে নানান আঁকিবুঁকি করছিলো আর চেয়েছিলো সমুদ্রের দিকে। এবার চমকে উঠে বললো, 'সত্যিই অপূর্ব! সমুদ্র এত সুন্দর কেন মেঘ?'
- 'তোমার কণ্ঠটা এত সুন্দর কেন?'
মিশু অবাক হয়ে বললো, 'আমার কণ্ঠ!'
মেঘালয় বললো, 'তোমার কণ্ঠটা অনেক মিষ্টি, ঠান্ডা আর শীতল। কণ্ঠে অজস্র মায়ার কাব্য ঝরে, আবেগে মাখা গলা। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। মধুর মত কানে বাজতেই থাকে। সমুদ্রটাও সেরকম শান্ত আর সুন্দর। তোমার কণ্ঠের মত।'
মিশু বিস্ময় লুকাতে না পেরে বললো, 'সত্যিই! আপনি অদ্ভুত সুন্দর করে কথা বলেন! আমার কণ্ঠ এত সুন্দর?'
- 'শান্ত সমুদ্রের মত।'
মিশু মুচকি হেসে তাকালো সমুদ্রের দিকে। ঢেউ এসে পায়ের উপর আচড়ে পড়ছে। পা ভিজিয়ে দিয়ে আবারও সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে। চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়েছে। চাঁদের আলোয় সমুদ্রকে এতটা লোভনীয় লাগে যে সত্যিই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে৷ আকাশটা একেবারেই ফাঁকা। জোৎস্নার কারণে নক্ষত্রগুলোকে চোখে পড়ছে না। বিশাল আকাশ ও প্রশস্ত সমুদ্র দেখে বুকটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
মিশু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো আর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে লাগলো বিড়বিড় করে। মেঘালয় মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো মিশুর দিকে। মিশু এক পা এক পা করে এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রের ঢেউ হাত দিয়ে ছুঁয়ে কয়েক ফোঁটা জল হাতে তুলে ছুঁড়ে মারলো সাগরে। তারপর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললো, 'তোমার কি দুঃখ আছে?'
মেঘালয় এগিয়ে গিয়ে মিশুকে ধরে বললো, 'ঠিক আছো?'
মিশু বললো, 'সমুদ্রের যেন অজানা একটা ভাষা আছে, কিছু বলতে চায় সে। উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে দেখো?'
মেঘালয় নিজেও তাকালো সমুদ্রের দিকে। মনে হতে লাগলো সত্যিই সমুদ্রের নিজের কোনো ভাষা আছে। কিছু বলতে চাইছে সে। এই ভাষা হয়ত তার বোঝার সাধ্য নেই, মিশু বুঝতে পারবে।
মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো, 'সমুদ্র কি বলছে?'
- 'বলছে মেঘালয়কে ছাড়িস না।'
- 'সিরিয়াসলি?'
- 'হুম। আর এটাও বলছে যে মেঘালয় অনেক বেশি দূর্লভ। এত সহজে ওকে পেয়ে গিয়ে তুচ্ছ করিস না।'
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, 'ওকে। তুচ্ছ কোরোনা তাহলেই হবে। আকাশটা কিছু বলছে না?'
মিশু একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আরেকবার সমুদ্রের দিকে তাকালো। বুক ভরে নিশ্বাস নিলো কয়েকবার। বিশাল আকাশটা সমুদ্রে নেমে গেছে কেন? সমুদ্র কোথায় শেষ হয়েছে কেউ জানেনা? এত বিশাল সব শূন্য দেখলে যে বুকটা কেমন ফাঁকা হয়ে যায়। অস্থির লাগে, বড্ড অস্থির লাগে। বুকের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যেতে যায়। প্রকৃতি অদ্ভুতভাবে টানে মানুষকে, এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে। সমুদ্রকে ভালোবেসে শুধু স্নান নয়, আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করছে। মিশু নিচু হয়ে জল নিয়ে দুহাতে মুখে ছিটিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললো।
দুজনেই অনেক্ষণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো হাঁটা ধরলো। একজন মধ্যবয়স্ক পুলিশ দূর হতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো এই দুজন পাগল প্রকৃতিপ্রেমীকে!
YOU ARE READING
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Adventureমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...