52

1K 42 0
                                    

৫২

হঠাৎ মায়ের গলা শুনতে পেলো মিশু। মা এসে যে কথাটা বলে গেলো সেটা শোনার জন্য ওরা কেউই প্রস্তুত ছিলোনা। তন্ময় সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলো। এখন ওর শারীরিক অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই বারবার মিশুকে দেখতে চাইছে। তন্ময়ের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আপনজন বলতেও কেউ নেই ওর। এমতাবস্থায় মিশুকে দেখতে চাইলে মিশু না গেলে ব্যাপারটা বাজে হয়ে যায়। একটা জীবনের মূল্য তো আছে।

মিশু ও মেঘালয় একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। চোখেচোখে কি বলে নিলো বোঝা গেলো না। উদভ্রান্ত দৃষ্টি, দৃষ্টিতে কোনো ভাষা নেই। মেঘালয় বলতে চাইছে যেওনা, আবার যাওয়াও উচিৎ। এদিকে মিশুও বলতে চাইছে, আমি যেতে চাইনা কিন্তু একবার যাওয়াটা দরকার। দুজনে দুজনের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মেঘালয় বললো, 'চলো আমরা দুজনই যাই, দেখে আসি ওকে।'

শেষ পর্যন্ত মেঘালয়ের সিদ্ধান্তকেই মেনে নিলো মিশু। দ্রুত রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়তে হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। মনটা কেমন কেমন করলেও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো মিশু। ভালোবাসার দিক থেকে নয় বরং মানবিক দিক থেকেই খারাপ লাগা কাজ করছে তন্ময়ের জন্য। তন্ময় না থাকলে একটা সময় ঠিকই ভূলে যাবে। কিন্তু আজ তন্ময়ের কিছু হয়ে গেলে সবসময় ব্যাপারটা মানসিক যন্ত্রণা দেবে। এরকম একটা মানুষ কিভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারে জানা নেই কারো।

মেঘালয় সেদিন রাতে আসার সময় গাড়ি নিয়ে এসেছিলো। ড্রাইভার এখনো থেকেই গেছেন। গাড়ি নিয়েই আজকে বেড়িতে পড়তে হলো। এত ঝামেলা আর ধকল কবে যে শেষ হবে কে জানে। একটার পর একটা ঝামেলা পিছু লেগেই থাকে। সব ঝামেলার পিছনে যদি ভালো কিছু থেকে থাকে তাহলে এরপর নিশ্চয়ই অনেক ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। মেঘালয়ের জীবনেও এরকম ঝামেলা প্রথম ঘটছে।

মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে রইলো মিশু। বুকের ঢিপঢিপ শব্দটাকে শোনার চেষ্টা করলো।

মেঘালয় বললো, 'তুমি তো দিনদিন মারাত্মক সুন্দর হয়ে উঠছো। তন্ময়ের মাথাটাই খারাপ হয়ে যায় কিনা দেখো।'

- 'কি যে বলো। অবশ্য এটাই হয়ত ঠিক। তোমরা পুরুষরা সৌন্দর্যের পূজারি।'

- 'হ্যা কিন্তু শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয়, সবদিক থেকেই যে সুন্দর আমি তাকে রেসপেক্ট করি। ব্যক্তিত্ব সুন্দর হলেই একটা মানুষ সুন্দর।'

- 'আমার ব্যক্তিত্ব তো অতটাও সুন্দর নয়, আমিতো নিতান্তই পাগলী একটা মেয়ে। যদি নিজেকে বদলাতে না পারি, তুমি কি আমাকে ছেড়ে যাবা?'

মেঘালয় মিশুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, 'ছেড়ে গেলে শুরুতেই যেতে পারতাম। যেহেতু ডিভোর্সের সুযোগ তুমি দিয়েছিলে।'

- 'আচ্ছা, যদি আমরা ভূলেও কখনো আলাদা হয়ে যাই। একে অপরকে ডিভোর্স দিয়ে দিই, এরপর যদি নিজের ভূল বুঝতে পেরে আবার এক হতে চাই? তখন কি আবার বিয়ে করতে হবে?'

- 'এসব বাজে কথা কেন বলছো?'

- 'আহা বলোনা। এরকম হতে পারেনা? তাহসান মিথিলার ডিভোর্স হয়নি? ওরা বেস্ট একটা কাপল ছিলো।'

- 'আমাদের কখনো হবেনা। অন্তত আমি সেটা হতে দিবোনা।'

- 'একটা সময় আমার উপর তোমার বিরক্তি আসবে দেখো। ঠিকই চলে যাবে আমাকে একা রেখে।'

- 'একদম চুপ। মাইর শুরু করবো নয়তো।'

মিশু চুপ করে গেলো। মেঘালয়ের গলা জাপটে ধরে বসে রইলো শান্ত হয়ে। আস্তে আস্তে হাতটা শিথিল করে দিলো। গলা ছেড়ে দিয়ে চুপটি মেরে রইলো। অনেক্ষণ কেউ কোনো কথা বললো না। দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো আস্তে আস্তে।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now