6

1.5K 52 1
                                    

৬.

ট্রাকের উপর উঠে অদ্ভুত চোখে চারিদিকে একবার তাকালো মিশু। হেডলাইটের আলোয় সবকিছু একদম অন্যরকম লাগছে। হাইওয়েতে দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করেছে ট্রাকটা। আশেপাশে দুই দিক থেকেই হুশ করে বাস ট্রাক চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো গাড়ি আবার জোরে হর্ণ ও বাজাচ্ছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে দুদিকে সুন্দর গাছের সাড়ি, চাঁদের আলোয় সবকিছুই অন্যরকম রূপ ধারণ করেছে। এত সুখ লাগছে দেখতে যে মিশুর আনন্দে লাফালাফি করতে ইচ্ছে করছে।

মিশুকে ধরে এনে পিছনের দিকে একটা বস্তার উপর বসিয়ে দিলো মেঘালয়। ট্রাকের অর্ধেক পর্যন্ত বস্তাভর্তি। আর বাকিটা ফাঁকা। ইচ্ছে হলে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে, আবার বসেও যাওয়া যাচ্ছে। মিশুর গায়ে একটা চাদর ছিলো,সেটাকে ভালোমতো গায়ে মুড়িয়ে নিয়েছে ও। তাই খুব একটা ঠাণ্ডা লাগছে না। যদিও শিরশিরে বাতাস এসে হাত পা ও কান শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে।

মেঘালয় বস্তার উপর শুয়ে পড়লো। চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগলো। মিশুও শুয়ে পড়লো মেঘালয়ের পাশেই। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ, লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র। মনেহচ্ছে তারাগুলো মিটিমিটি হাসছে আর হাত নাড়ছে ওদের দিকে। মিশুও হাত নাড়তে লাগলো। আর বললো, "আমি শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছি আর মনেহচ্ছে বাতাসে ভেসে চলেছি। এমন হাইওয়ে ধরে শুয়ে শুয়ে যাবো আর আকাশ দেখবো এটা কক্ষনো কল্পনাও করিনি।"

মেঘালয় বললো, "মানুষ যা কল্পনাও করেনা, সেটা করে তাদেরকে চমকে দিতে আমার দারুণ মজা লাগে।"

-"হুম তাই তো মনেহচ্ছে। থ্যাংকস এটার জন্য। আমার এত আনন্দ হচ্ছে! আমি আজীবন গল্প শোনাবো সবাইকে যে, আমি শুয়ে থেকে আকাশ দেখতে দেখতে জার্নি করেছি। জোৎস্না স্নান করেছি ট্রাকের উপর শুয়ে। কি থ্রিলিং ব্যাপার!"

সত্যিই ব্যাপারটা দারুণ থ্রিলিং। ট্রাকে শুয়ে জোৎস্না স্নান, চাঁদের আলোয় শরীর মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। নক্ষত্র গুলো হাসছে, চাঁদ টাও গল্প করতে চাইছে যেন। মনেহচ্ছে চাঁদের আলো গিলে খাওয়া যাবে। মুগ্ধ হতে হতে চরম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে মিশু। হিমুর গল্পে ও পড়েছিলো একজন লোক হা করে গপগপ করে চাঁদের আলো খেয়ে ফেলে। মিশুর ও সেভাবে খেতে ইচ্ছে করছে। ও হাত বাড়িয়ে হাতের মুঠোয় চাঁদের আলো ধরে হা করে মুখে পুড়ে দিতে লাগলো যেন আলো গিলে খাচ্ছে। গপাগপ এভাবে আলো ধরে খেতে লাগলো। মেঘালয় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মিশুর দিকে চেয়ে রইলো মুগ্ধ হয়ে। মেয়েটা জোৎস্না খাচ্ছে? কি অদ্ভুত!

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now