81

1.1K 38 5
                                    

৮১

মেঘালয় অনেক রাত করে বাসায় ফিরলো। মিশু ঘুমিয়ে পড়েছিলো। মেঘের পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো ওর। মেঘালয়ের চেহারায় এখনো দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কোনো কথা না বাড়িয়ে খাবার নিয়ে এলো মিশু। মেঘালয় গোসল সেরে খালি গায়ে রুমে এসে বসেছে। মিশু এসে ওর মুখের সামনে ভাত তুলে দিলো।

খেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু মুখে তুলে দেয়া ভাত সরাতে পারলো না মেঘালয়। খাবার মুখে নিয়ে বললো, 'তুমি খেয়েছো?'
- 'না।'
- 'কেঁদে চোখ ফুলিয়েছো কেন?'
- 'কে বললো আপনাকে?'
- 'আমি কি কানা?'
- 'আপনি মেঘালয়।'

মেঘালয় হেসে বললো, 'টেনশন কোরো না। আসলে আমার ব্যবসার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। ছয় লাখ টাকার হিসেব মেলাতে পারছি না। একার প্রচেষ্টায় ব্যবসাটাকে এতদূর নিয়ে এসেছি। ছয় লাখ টাকা গরমিল হওয়া মানে কতটা লস বুঝতে পারছো তুমি?'

মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'হুম। কি করে হলো এমন?'
- 'গত দু'মাস আমি ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারিনি। নিজে অফিসে যাইও নি, খোঁজ ও নেইনি। আমার উদাসীনতার কারণেই এই অবস্থা।'
- 'ইস! আমি আপনার জীবনে এসেই যত ঝামেলা পাকিয়েছি তাই না?'
- 'এরকম ভেবো না। আমার উচিৎ ছিলো বিজনেসে সময় দেয়া। কিন্তু তোমাকে পেয়ে পুরো দুনিয়া ভূলে গিয়েছিলাম আমি।'

মিশু মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকালো। বিয়ের পর থেকে প্রত্যেকটা কাজের জন্য ওর নিজেকে অপরাধী মনে হতো। এমনকি বিয়েটাও ওর ভূলের জন্যই হয়েছে। সবসময় ওর জন্য এত ঝামেলা লেগে থাকে যে ওর নিজেকে শনি মনেহয়। মেঘালয় বলেই এতকিছু সামলে নিয়েও ওকে ভালোবাসে। অন্য কেউ হলে তো রাগে কবেই ছেড়ে চলে যেতো।

মিশু'র কাচুমাচু করা মুখটা দেখে মেঘালয় বললো, 'অমনি গাল ফোলানো শুরু করলে? বলেছি তো তোমার মন খারাপ করার মত কিছু হয়নি। আমাকে সময় দাও, আমি সবকিছু গুছিয়ে ফেলবো।'

মিশু মেঘালয়ের মুখে ভাত তুলে দিয়ে বললো, 'খেয়ে নিন।'

মেঘালয় মিশুকেও খেতে বললে মিশু দু'বার খাবার মুখে দিলো। হাত ধুয়ে এসে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো মিশু। মেঘালয় ভেজা চুল হাত দিয়ে আঁচড়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ ও ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলো। ওকে এই মুহুর্তে বিরক্ত করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না। নিঃশব্দে বেলকুনিতে এসে দাঁড়ালো মিশু।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora