32

1K 40 0
                                    

৩২.

মিশুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা মেঘালয়। মেয়েটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোথায় উধাও হয়ে গেলো বোঝা যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ সমুদ্রের পাড়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কোথাও না পেয়ে রাস্তায় এসে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো। গাড়ির ড্রাইভারও দেখেনি ওকে। এইটুকু সময়ের মধ্যেই উধাও হওয়ার ব্যাপারটাকে রহস্যময় লাগছে মেঘালয়ের কাছে। মিশু ঠিক আছে তো? কোনো বিপদ হলো কিনা কে জানে!

কয়েক মুহুর্ত রাস্তাতেই খুঁজে খুঁজে কাটলো। রাস্তা একদম ফাঁকা। সামনে বিশাল পাহাড় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ উধাও হয়ে যাবেই বা কোথায়? যেদিকে যাবে অবশ্যই চোখে পড়বে। অবশ্য বিপদের সময় কোনোদিকেই নজরে আসেনা। এসব ভেবে ভেবে মাথাটা খারাপ হতে শুরু করেছে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। মেঘালয় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিশুর বাবা ফোন দিয়েছেন। কি বলবে বুঝতে না পেরে প্রথমে রিসিভ করতে চাইলো না। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পর কানে ধরে হ্যালো বলার আগেই উনি বললেন, 'বাবা তুমি কোথায়? মিশু আর্মিদের ক্যাম্পের কাছে আছে তারাতারি ওর কাছে যাও।'

মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, 'কোথায়?'

- 'তোমার নাম্বার ওর কাছে নেই তাই আমাকে ফোন দিয়ে বললো তোমাকে জানাতে। দ্রুত মিশুর কাছে যাও।'

আর কিছু জিজ্ঞেস না করে মেঘালয় ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো, 'আশেপাশে আর্মিদের ক্যাম্প ট্যাম্প কিছু আছে?'

- 'হ্যা, সামনেই একটা আছে।'

- 'দ্রুত চলুন তো।'

গাড়ি ছেড়ে দিলে মেঘালয় ফোন রেখে দিলো। বেশিক্ষণ লাগলো না পৌঁছাতে। গাড়ি থেকেই দেখতে পেলো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দুজন আর্মির সাথে কথা বলছে মিশু। এখানে কিভাবে আসলো ভাবতে ভাবতে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসলো মেঘালয়।

আর্মিদের কাছে আসার পর একবার মিশুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আর্মিদের দিকে তাকালো। দুজনের মধ্যে বেশি বয়স্ক লোকটি বললেন, 'আপনি ওনার হাজব্যান্ড?'

কথাটা বলেই উনি হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালেন। ওনার মুখে প্রসন্ন হাসি দেখে চিন্তা থেকে স্বস্তি পেলো মেঘালয়। তারমানে কোনো বিপদের আশংকা নেই! কাহিনী পরে শোনা যাবে, আপাতত দুশ্চিন্তা নেই ভেবে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মেঘালয়। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো লোকটির সাথে। বললো, 'মেঘালয় আহমেদ'

লোকটি বললেন, 'আমি আবদুল কালাম। আপনি বোধহয় টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন?'

- 'হ্যা সেটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ ওকে দেখতে না পেয়ে প্রচন্ড টেনশন হচ্ছিলো।'

- 'উনি আমাদের হেল্প করেছেন। যদিও এখানে পুরো রাস্তায় গার্ড আছে, সেরকম বিপদের সম্ভাবনা নেই। তবুও রিস্কি জোন তো, ভয় একটু থাকবেই।'

মেঘালয় একবার মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, 'হেল্প বলতে?'

- 'এক আসামি পালাচ্ছিলো, ওকে ধরতে সাহায্য করেছেন আমাদের।'

মেঘালয় ভ্রু কুঁচকে তাকালো মিশুর দিকে। বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেলো ওর! মিশু আসামি ধরতে সাহায্য করেছে? এটা কিভাবে সম্ভব?

আবদুল কালাম নিজে থেকেই বললেন, 'আসামি বাবা পাঁচার করছিলো। মেয়েটি ভদ্র মেয়ের মতো যাচ্ছিলো। আপনার ওয়াইফ কিভাবে বুঝতে পেরেছে জানিনা, মেয়েটাকে সরাসরি গিয়ে ধরে ফেলেছে।'

মেঘালয় এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ভাবছে, মেয়েরাও ইয়াবার ব্যবসা করছে! তাকে আবার ধরে ফেলেছে আরেক মেয়ে। বাহ! মিশু দেখছি ডিটেকটিভ হয়ে গেছে! মিশুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কিভাবে বুঝলে তুমি?'

মিশু বললো, 'মেয়েটা হয়ত কোথাও যাচ্ছিলো। আমাকে খেয়াল করেনি। রাস্তা থেকে নেমে এক ছুটে সমুদ্রে নেমে হাত পা ধুচ্ছিলো। হঠাৎ কি যেন পড়ে গেলো ওর জামার ভিতর থেকে। চোখের পলকে মেয়েটা সেটা লুকিয়েও ফেললো। কিন্তু ততক্ষণে আমি বুজে গেছি সেটা ইয়াবা। দ্রুত গিয়ে আলাপ জমাতে চেষ্টা করলাম। মেয়েটা এড়িয়ে যাচ্ছিলো। কথা বলতে বলতে একহাতে ওর ওড়নাটা দিয়েই ওর গলা পেঁচিয়ে ধরে হেচকা টান দিয়ে আটকে ফেলেছিলাম। যখনি তোমাকে ডাকতে যাবো তার আগেই দেখি ওনারা আসছেন।'

মেঘালয় হেসে বললো, 'বাহ! ডিটেকটিভ মিশু হয়ে গেছো দেখছি। গ্রেট!'

মিশু বললো, 'মেয়েটা আমার হাত থেকেও পালাতে চেষ্টা করছিলো। ওনাদের সাথে আমিও পিছনে ধাওয়া করি, তারপর গাড়িতে করে এখানে চলে এলাম।'

মেঘালয় মুখে হাত দিয়ে হাসলো। পাশেই একটা টিনের ঘর থেকে আরেকজন লোক বেড়িয়ে এসে মেঘালয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। এরপর চেয়ার নিয়ে এসে বসতে বললো মেঘালয় মিশুকে। বসে দুকাপ চা খেয়ে টুকটাক গল্প ও করে নিলো দুজনে। মেঘালয় বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিলো মিশুর দিকে। মিশুকে হঠাৎ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ওর কাছে। রহস্যটা কি?

চা খাওয়া শেষ করে সৌজন্যতা বিনিময় করে মেঘালয় ও মিশু এসে আবারও গাড়িতে উঠলো৷ গাড়ি ছুটলো হিমছড়ির উদ্দেশ্যে।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now