৩৮.
ছুটতে ছুটতে সাগর পাড়ে এসে থামলো মিশু। জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে বিশাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। জীবনটা অদ্ভুত খেলা শুরু করেছে! এত এত দুর্ভোগ চলে যাচ্ছে। একটার পর একটা এক্সিডেন্ট। আর ভালো লাগছে না কিছু। মেঘালয়ের সম্মানের কথা ভেবেই কষ্ট হয় খুব। বাবা মায়ের মুখটা ছোট হয়ে গেছে সবার সামনে, এখন আবার মেঘালয়ের পরিবার। নিজেই নিজেকে বললো, ' বড্ড ছেলেমানুষি করি আমি। আর কোনোদিনো কারো সামনে যাবো না। মেঘালয়কে একা ছেড়ে দিবো। ওরা সবাই ভালো থাকুক। আমার মত অভাগিনীকে আর ওদের দেখতে হবেনা।'
এদিকে মেঘালয় দ্রুত করিডোর দিয়ে খুঁজতে খুঁজতে হোটেলের বাইরে বেড়িয়ে এলো। মিশু আবার অভিমান করে কোথাও চলে গেলো না তো? আগে সমুদ্রের পাড়ে দেখা দরকার। মেয়েটা যে কেন এত টেনশনে ফেলে দেয়? একা একা কোথায় গিয়ে বসে আছে কে জানে! এখানে সমুদ্র ছাড়া আর কোথায় ই বা যাবে? পাগলের মত খুঁজতে খুঁজতে মেঘালয় হাফিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে দৌড়ে সবখানে খুঁজতে লাগলো।
মিশু তীর দিয়ে হেঁটে হেঁটে পিছন দিকের ঝাউবনের দিকে চলে গেলো। কোথায় যাবে এখনো জানেনা ও। ঝাউবনে এসে আধ ঘন্টার মত বসে থাকার পর নিজের ভূলটা বুঝতে পারলো। কাজটা মোটেও ঠিক করেনি। বাইরের পৃথিবীটা যে অনেক বেশি কঠিন। এভাবে বেড়িয়ে আসাটা কি উচিৎ হলো? হাতে একটাও পয়সা নেই। কক্সবাজারে চেনা পরিচিত কেউ নেই আর কক্সবাজার থেকে এক পা বাইরে এগোনোর জন্যও টাকার দরকার। সে রাতে মেঘালয় পাশে ছিলো বলে পালিয়ে বেঁচেছে। কিন্তু আজকে সেই মেঘালয়কে রেখে কেন পালাবে ও? আপন মনেই ভাবতে লাগলো কথাগুলি। রাগ ও ক্ষোভের বশে সত্যিই একটা ভূল করে ফেলেছে ও। এখনি ফিরে যাওয়া উচিৎ।
আবারো উঠে একটা ভোঁ দৌড় দিয়ে হোটেলের দিকে ফিরে এলো মিশু। মেঘালয় এখনো বিচ ধরে এদিক সেদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে ওকে। মাথাটাই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এলাকাটা অনেক রিস্কি, এভাবে কোথায় গেলো কে জানে! খুঁজতে খুঁজতে মেঘালয়ের পাগল হওয়ার মত অবস্থা। বিচ থেকে ঝাউবনের দিকে গিয়ে সেখানেও খুঁজে দেখলো দৌড়ে দৌড়ে। এরপর হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরে এলো।
মেঘালয় দরজায় নক করার পর যখন মিশু দরজা খুলে দিলো, চমকে উঠে চোখ বড়বড় করে ফেললো মেঘালয়। মিশু মাথাটা নিচু করে অপরাধীর ভঙ্গিতে বললো, 'সরি।'
সরি বলার পর এক মুহুর্ত দেরি না করে ঠাস করে কষে একটা থাপ্পড় এসে পড়লো মিশুর গালে। মেঘালয়ের দৃষ্টিতে যেন অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে। মিশু প্রথমাবস্থায় বুঝে উঠতে পারলো না কি ঘটলো। মেঘালয় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, 'নূন্যতম বিবেকবোধ নেই তোমার? দরজা খুলে কোথায় বেড়িয়ে গিয়েছিলে?'
মিশু হঠাৎ ই কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, 'আমার জন্য সবার এত সমস্যা হচ্ছে। আপনাকে বিপদে ফেলে দিয়ে আমার নিজেকে অপরাধী মনেহচ্ছিলো। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো।'
- 'তাহলে ফিরলে কেন? মরে যেতে। মরার সাহস নেই?'
- 'আপনার কথা ভেবে। আপনি ই তো বলেছেন দেশের জন্য কিছু করার আগে যেন না মরি।'
মেঘালয় রেগে বললো, 'তোমার মরার ইচ্ছে হচ্ছিলো না? আসো আমি খুন করে ফেলি।'
মিশু একটু এগিয়ে এসে বললো, 'মেরে ফেলুন তো আমাকে। আমার মরে যাওয়া উচিৎ।
মেরে ফেলুন প্লিজ।'
মেঘালয় খপ করে মিশুর মুখটা দুহাতে ধরে আচমকা ঠোঁট দুঠো নিজের ঠোঁটের ভেতরে নিয়ে নিলো। পরম আবেশে চুম্বন করতে লাগলো মিশুর আলতো ঠোঁটে। সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা সমস্তকিছুর অবসান যেন একসাথে হয়ে যাচ্ছে। মিশুর দুচোখ বেয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ছে। এটা কিসের কান্না সে নিজেও জানেনা।
অনেক্ষণ পর মেঘালয় ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো, 'আমি এয়ারপোর্ট যাবো। তুমিও রেডি হয়ে নাও।'
YOU ARE READING
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Adventureমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...