78

1.1K 38 0
                                    

৭৮
দ্রুত গাড়ি টেনে শহর থেকে দূরে একটা বৃক্ষঘেরা দোকানে নিয়ে এলো মেঘালয়। গাড়ি থেকে নেমে প্রাণভরে শ্বাস নিলো মিশু। শহরের শব্দদূষণে ঘেরা গরম পরিবেশ থেকে কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি। এখানে তেমন কোনো শব্দ নেই, আলো নেই, মাঝেমাঝে দূরের রাস্তায় হুশ করে একটা গাড়ি চলে যাওয়ার শব্দ কানে আসে। বেশ ভালোই লাগছে।

মেঘালয় মিশু'কে দোকানের ভিতরে নিয়ে গেলো। একজন মধ্যবয়সী মহিলা দোকানদারি করছেন। মেঘালয় কাছে যেতেই উনি হেসে বললেন, 'কেমন আছেন সাহেব?'
- 'ভালো আছি খালা। তুমি ভালো আছো?'
- 'এইতো আছি। বহুদিন পর এসেছো। প্রেমিকা?'

মেঘালয় হেসে বললো, 'বউ। বিয়ে করেছি খালা।'
- 'ওমা! মেয়েটা মিষ্টি আছে।'
- 'থ্যাংকস খালা। আইসক্রিম হবে না?'
- 'হবে। শুধু ভ্যানিলা হবে, চকোলেট শেষ হয়ে গেছে।'
- 'ওটাই দিও। আমাকে সুজির রসবড়া আর কফি দিও। আর ওকে আইসক্রিম।'
- 'দিচ্ছি, বসো গিয়ে। আইসক্রিম কাপে দেবো না কোণে?'
- 'কাপেও না, কোণেও না। একটা বালতি কিংবা গামলা থাকলে গামলা বালতি ভরতি করে দাও। আমার বউয়ের আইসক্রিমের সাধ মেটাবো আজ।'

হো হো করে হেসে উঠলেন দোকানি মহিলা। মিশু হা করে মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বললো, 'ইস এমনভাবে বলছে যেন আমি রাক্ষস। আইসক্রিম ভালো লাগে বলে এমন নয় যে এক গামলা আইসক্রিম খাবো।'

মেঘালয় মিশু'র দিকে তাকিয়ে বললো, 'এক বালতি দিতে বলেছি। এটা তো বলিনি যে ইয়া বড় বালতি হবে। বালতির সাইজ হবে ছোট্ট একটু। চার ইঞ্চি।'

মিশু ক্ষেপে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করলো। দোকানি মহিলা হেসে বললেন, 'তুমিও যা দুষ্টু বাবা। বৌ মনি তুমি মন খারাপ কইরো না। আমি তোমাকে কোণেই দিচ্ছি। একবার শেষ হয়ে গেলে আবার নিও। গামলায় দিলে তো গলে যাবে। তুমি অল্প অল্প করে এক গামলা খেও।'

মিশু বললো, 'আমি কি রাক্ষস? আর মেঘমনি সবার সামনে আমাকে এভাবে বলেন কেন? সবাই মনেমনে বলবে মেয়েটা রাক্ষসী। ওর স্বামীর টাকা পয়সা সব বুঝি খেয়েই শেষ করে দেবে।'

হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। তারপর কাছে এসে মিশুর কাঁধে হাত রেখে ওকে টেনে নিয়ে বললো, 'তোমার বর অনার্স সেকেন্ড ইয়ার থেকে প্রচুর পরিশ্রম করেছে বুঝলে? যাতে করে তার লক্ষী বউটার সব আবদার পূরণ করতে পারে। আমার লক্ষী বউটার তো তেমন কোনো আবদার ই নেই, শুধু খাওয়া ছাড়া। আমার পরিশ্রম টাকে সার্থক করতে হবে না?'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now