67

1.1K 36 0
                                    


৬৭
ওয়েডিং প্লানারের সাথে ঘুরে ঘুরে সাজসজ্জার কাজগুলো দেখছে মিশু। গায়ে হলুদের মঞ্চটা কেমন হবে সেটা নিজেই বলে দিলো। রাতে বিয়ের শপিংয়ে বের হবে সবাই মিলে। আগামীকাল মিশু চলে যাবে নিজের বাসায়। যখন বিয়েবাড়ির ডেকোরেশন নিয়ে কোমর বেঁধে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মিশু, এমন সময় একটা ফোন এলো।

কথা বলা শেষ করে কিছুক্ষণের জন্য চোখের পলকও পড়ছিলো না। সবকিছু যেন হঠাৎ করেই থেমে গেলো। এমন একটা খবরে আজকে আনন্দের বদলে কষ্ট হচ্ছে। কি হবে এখন?

মিশু যে স্কলারশিপের পরীক্ষাটা দিয়েছিলো সেটা পেয়ে গেছে। এখন অভিভাবক সহ হাইকমিশনার অফিসে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছে। এমন একটা স্কলারশিপ পাওয়াটা নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। কিন্তু মিশুর পক্ষে এখন দেশের বাইরে যাওয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব না। প্রথমত শ্বশুরবাড়ির লোকরা যেতেই দেবে না, আর দ্বিতীয়ত মেঘালয়ের থেকে দূরে গিয়ে দুজনের কেউই থাকতে পারবে না। চুপচাপ হয়ে মেঝেতে বসে রইলো মিশু। শ্বাশুরি মা এসে জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা কিনা? মিশু কোনো উত্তর না দিয়ে ঠায় বসে রইলো।

মেঘালয় অফিস থেকে ফিরলো বিকেলবেলা। মিশুকে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কেউ কিছু বলেছে কিনা?
মিশু একবার মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো। মেঘ কাছে এসে ওর হাতটা ধরে বললো, 'কি হয়েছে মিশু? এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?'
- 'আমার স্কলারশিপটা এসে গেছে।'

মেঘালয় চমকে উঠে মুচকি হেসে বললো, 'সেটা তো অনেক ভালো খবর। এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকবা?'
- 'আমি ওটা ক্যানসেল করে দেবো।'
- 'সেকি! কেন?'
- 'আমাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হবে। আর এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না।'

মেঘালয় কিছুক্ষণ মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মিশুকে কাছে টেনে নিয়ে মৃদু স্বরে বললো, 'এত মন খারাপ কোরো না। যেহেতু সেটা এখন সম্ভব না, কাজেই মন খারাপ করে লাভ নেই।'

মিশু করুণ সুরে বললো, 'এটা আমার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। বিয়েই একটা মেয়ের জীবনে সবকিছু নয়। আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতাম না। একটা ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতাম, সামাজিক কর্মকাণ্ডলোতে নিজেকে জড়াতাম। জীবন নিয়ে তো সবারই ভাবনা থাকে তাইনা বলুন?'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now