শেষ পর্ব

1.9K 88 29
                                    


পরদিন দুপুর হয়ে গেলো কিন্তু মেঘালয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না। মিশু তবুও অফিসে এসেছে। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। এত বড় টেনশনের মাঝেও অফিসের দায়িত্ব সামলাতে ভূল করলো না। মেঘালয়ের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আর অফিসে আসবে না তাই সবাইকে সবার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলো মিশু।

এমন সময় একটা মেয়ে দরজায় এসে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলো। মিশু অনুমতি দিয়ে মেয়েটার দিকে ভালোভাবে তাকালো। অনেক চেনা চেনা লাগছে। মেয়েটাকে দেখে মনেহচ্ছে এখানকার কোনো শ্রমিক।
মেয়েটা ভেতরে আসার পর মিশু বসতে বললে সে বললো, 'আমি বসবো না, দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলবো।'

মিশু অবাক হয়ে বললো, 'কেন?'
- 'বসলে মনের কথাগুলো বলতে পারবো না।'
- 'আচ্ছা দাঁড়িয়ে থেকেই বলুন। তার আগে আপনার পরিচয়?'
- 'আমি সবেমাত্র ট্রেনিং শেষ করেছি। ট্রেইনিংয়ের জন্যও আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ কিন্তু অন্যকিছুর জন্য আরো বেশি। আমি সারাজীবন আপনাকে মনে রাখবো ম্যাডাম।'
- 'বুঝলাম না, অন্যকিছু মানে? আমি কিভাবে আপনার উপকার করেছি?'
- 'শুধু উপকার না ম্যাডাম। আপনি আমার পুরো জীবনটাই বদলে দিয়েছেন। আপনি এই কোম্পানির মালিক সেটা আগে জানতাম না। এখানে ট্রেনিং করতে এসেই আপনাকে দেখি। অনেক চেষ্টা করেছি আপনার সাথে কথা বলার কিন্তু সুযোগ হয়নি।'

মিশু ভ্রু কুঁচকে বললো, 'ওহ আচ্ছা। কিন্তু বোন আমি তো আপনাকে চিনতে পারলাম না। আপনি কি আগে থেকেই আমাকে চিনতেন?'
- 'যার জন্য আমার পুরো জীবনটাই বদলে গেছে তাকে চিনবো না? তার জন্য তো সারাজীবন মন থেকে দোয়া করি।'

মিশু বিস্মিত হয়ে বললো, 'তাই নাকি! খুলে বলুন তো ঘটনা কি? আর আমি কিভাবে আপনার উপকারে এসেছিলাম?'

মেয়েটা মিশুর পাশে দাঁড়িয়ে বললো, 'আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি। আমি দেহ ব্যবসা করে খেতাম।'

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মিশু- মানে!

মেয়েটা করুণ মুখে বললো, 'আপনার মনে আছে এক বছর আগে আপনি মেঘালয় স্যারকে নিয়ে হানিমুনে গিয়েছিলেন? স্যার হোটেলে ফেরার পর আমি ওনাকে ভূলিয়ে ভালিয়ে কাস্টমার বানানোর চেষ্টা করছিলাম। সেই মুহুর্তে আপনি কোথ থেকে এসে হঠাৎ আমার গালে কষে থাপ্পড় বসালেন। তারপর রেগে কয়েকটা কথা বলেছিলেন। সেদিনের অপমান আর ওই কথাগুলোই আমার জীবন পালটে দিয়েছে বোন। আপনি বলেছিলেন, আল্লাহ দুটো হাত দিয়েছেন, একটা মাথা দিয়েছেন। যতক্ষণ শরীরে কাজ করার সামর্থ্য আছে ততক্ষণ সৎ পথে উপার্জন করার চেষ্টা করতে। অভাব আছে মানে এই নয় যে নিজের সম্মান বিক্রি করে খেতে হবে। গায়ে কাজ করার শক্তি থাকতে কাজ করে খাও। দুই হাতে যথেষ্ট শক্তি আছে। আপনার সেদিনের কথাগুলো আমার খুব লেগেছিলো। বাড়িতে গিয়ে সারারাত কান্নাকাটি করেছি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সৎ পথে রোজগার করবো। আমি আর কখনো খারাপ পথে যাইনি বোন।'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Où les histoires vivent. Découvrez maintenant