85

1K 41 0
                                    

৮৫

এক বছর পর

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে। এই এক বছরে মিশু হয়ে গেছে পাক্কা গৃহিণী। মেঘালয়ের ব্যবসায় এখন মিশু'র অবদান সবচেয়ে বেশি। দিনরাত এক করে মেয়েটা পরিশ্রম করে, সমস্ত কাজ দেখাশোনা করে। কখনো উপদেষ্টাদের সাথে কথা বলা, কখনো নিজেই শ্রমিকদের সাথে কাজ করা। মেঘালয় ওর কাজের গতি দেখে পুরোপুরি মুগ্ধ! এতটুকু বয়সের একটা মেয়ে অথচ নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে পরিশ্রম করছে। ও মনেপ্রাণে চাইছে আকাশ আহমেদের বিজনেসকে ছাড়িয়ে যেতে। মেঘালয়ের ব্যবসায় যে লোকসান হয়েছে সেটা পূরণ করে আরো দ্রুত উন্নতির জন্য প্রবলভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। একটা মেয়ে এতটা পরিশ্রমী কি করে হতে পারে সেটা মেঘালয়ের অজানা। সে নিজেও এত পরিশ্রম করেনি।

মিশু মাঝেমাঝে বলে, 'আমি দিনের বারো ঘন্টা কাজ করতে চাই, বাকি বারো ঘন্টা খাওয়াদাওয়া ঘুম আর আদর।'
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, 'আর গোসল?'
- 'বারে, আদর করতে করতে গোসল করিয়ে দিবা। হা হা হা।'

মিশু ব্যবসায়ের গতি বিধি বেশ ভালো রপ্ত করে ফেলেছে। শ্রমিক যত দক্ষ হবে, পণ্য তত মানসম্মত হবে আর এভাবেই বিজনেসকে আরো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ কারণে শ্রমিকের প্রশিক্ষণের জন্য তিনমাস মেয়াদে কয়েকটা ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য ফ্রি তে একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। তারা মাস শেষে নির্দিষ্ট অংকের ভাতা পাবে আবার প্রশিক্ষণ শেষে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি চাকরিতে জয়েন করবে। মিশুর এই বুদ্ধিটা আকাশ আহমেদের পরিচিত অনেকেই পছন্দ করেছেন। মেঘালয়ের স্ত্রী'র প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে।

আজকে এক দলের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তাদের পরীক্ষা নেবে স্বয়ং মিশু। মেঘালয় চেয়েছিলো কোনো পরীক্ষার ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি জয়েনিং লেটার দিয়ে দিতে। কিন্তু মিশু স্পষ্ট বলে দিয়েছে, 'দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কাউকে আর নিয়োগ দেয়া হবে না। তাছাড়া প্রত্যেকে প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা পাচ্ছে এটাই বা কম কিসে?'

ওর যুক্তিতে মেঘালয় আর কথা বাড়ায় নি। পড়াশোনার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনিং কে বেছে নিয়েছে মিশু। পড়াশোনা শেষ করে নিজস্ব একটা পোশাক কারখানা খোলার ইচ্ছে ওর। যাতে শুধুমাত্র নিজের ডিজাইন করা জামাকাপড় থাকবে।

যারা প্রশিক্ষণ শেষ করেছে তাদের অর্ধেকের সাক্ষাতকার নেয়া শেষ। সন্ধ্যে হয়ে আসায় আজকে বাসায় যেতে হবে। মেঘালয় মিশুকে বলেছে পিকমি রাইডে বাসায় চলে যেতে। ওর নাকি কোথায় একটা জরুরি মিটিং আছে। মিশু নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরলো ঠিকই কিন্তু রাত বেড়ে গেলেও মেঘালয় কোনো ফোন করলো না দেখে ও অবাক হয়ে গেলো। প্রথমে ভাবলো হয়ত সে ব্যস্ত আছে। পরক্ষণে আবার মনে দুশ্চিন্তা দানা বাঁধতে লাগলো।

ধীরেধীরে রাত সারে এগারোটা বেজে গেলো। মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ। এবার দুশ্চিন্তা আরো জোরে চেপে ধরলো। নাম্বার বন্ধ হবে কেন! হয়ত ফোনে চার্জ নেই, একটু পরেই বাসায় ফিরবে - এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো মিশু।

রাত বাড়তে লাগলো। মেঘালয়ের নাম্বারও বন্ধ, বাসায় ফেরারও নামগন্ধ নেই। ড্রাইভারকেও সাথে নিয়ে যায় নি। বাবা মা কেউ বলতে পারছেন না মেঘালয় কোথায় আছে!

দুশ্চিন্তায় রাতে খেতে পারলো না মিশু। সারা রাত মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিয়ে গেলো। নাম্বার বন্ধ!
মিশু টেনশনে পুরো বাড়ি ছোটাছুটি করছে। বাড়ির বাকি মানুষ গুলোকেও ঘুমাতে দিচ্ছে না। মেঘালয়ের সব বন্ধুদের বাসায় খোঁজ নেয়া হয়েছে, কেউ ওর খোঁজ জানে না।

মিশুর চোখ ফেটে জল আসছে। বিছানায় শুয়ে কতক্ষণ কাঁদলো নিজেও জানেনা। মেঘালয় কোথায় গেলো কিছু না বলে! ওর কোনো বিপদ হলো না তো?

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now