২৮
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো তীরে। বালির উপরে ধপ করে বসে পড়লো মিশু। মেঘালয় ও পাশেই বসে রইলো। নিরাপত্তার ব্যাপারে কড়া গার্ড আছে। সৈকতে রাত্রিবেলাতেও কোনো সমস্যা হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এলাকাটা অনেক বেশি রিস্কি। পরিচিত পুলিশকে নজরে রাখতে বলায় ভয়হীনভাবে বসে থাকা যাচ্ছে। মিশু হঠাৎ জেদ ধরে বললো, 'আসুন ওই ঝাউবনের দিকে যাই?'
মেঘালয় একবার বনের দিকে তাকিয়ে বললো, 'এখন? আমারও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তোমাকে নিয়ে...'
- 'খুব রিস্কি হয়ে যাবে?'
- 'তা তো একটু হবেই। আচ্ছা আসো একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো।'
মিশু লাফিয়ে উঠলো। মেঘালয়ের প্রতি ক্রমশই ভালোবাসা আর সম্মানটা বেড়েই যাচ্ছে ওর। দুজনে খালি পায়ে বালির উপরে পা ফেলে ফেলে উপরে উঠে এলো৷ পুলিশ আংকেলের কাছে এসে ভালোভাবে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে মেঘালয় মিশুকে নিয়ে বালি ধরে হাঁটা শুরু করলো। মিশু মেঘালয়ের বাহু চেপে ধরে হাঁটছে আর পা দিয়ে বালি ছিটাচ্ছে। মেঘালয় বাঁধা দিচ্ছেনা। মেয়েটার অদ্ভুত পাগলামি গুলোকে ভালো লাগে ওর।
জোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে দুজনে হাঁটছে আর হাসছে। একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করছে আর ভাবছে অপর মানুষটা এত সুন্দর কেন! মিশু হঠাৎ মেঘালয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে ছুটে সমুদ্রের তীরে চলে গেলো। তারপর শুয়ে পড়লো ধপ করে। মেঘালয় ও ছুটে গিয়ে শুয়ে পড়লো মিশুর পাশেই।
সমুদ্রের ঢেউ এসে ছুঁয়ে গেলো দুজনকেই। চাঁদের আলোয় মরা মানুষের মত শুয়ে আছে দুজনে। দুজনেই তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশের বিশালতা অনুভব করছে আর কানের কাছে বাজছে সমুদ্রের গর্জন। এরকম পাগলামি গুলো করতেও ভালো লাগছে। মিশুর সাথে সাথে আজ যেন মেঘালয়ের বয়সটাও অনেক কমে গেছে। নিজেকে কিশোর মনে হচ্ছে। দুহাতে গ্রহণ করছে এই পরিবেশটাকে।
বারবার সমুদ্রের ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যেতে লাগলো। ঢেউ উত্তাল হতে শুরু করেছে, আর ঠান্ডাও লাগছে বেশ। ভেজা শরীরে উঠে পড়লো দুজনে। এক পলক মিশুর দিকে তাকিয়েই শরীরটা কেঁপে উঠলো মেঘালয়ের। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় মিশুকেও স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। ভেজা চুল মুখের উপর লেপ্টে আছে, বালি লেগে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না, ঘোর লেগে যায়। ঝাউবনে যাওয়ার ভূতটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো মেঘালয়। একহাতে মিশুকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, 'চলো ফিরে যাই।'
মিশু মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললো, 'কেন? আমার খুব ভালো লাগছে। তোমার ভালো লাগছে না?'
মেঘালয় মুখটা এগিয়ে এনে বললো, 'যখন সমুদ্রের চেয়েও এই সমুদ্রকন্যাকে বেশি ভালো লাগে তখন কি আর সমুদ্রের পাড়ে থাকতে ভালো লাগে?'
- 'কিহ! তাহলে?'
- 'কথা বলতে ইচ্ছে করছে।'
মিশু মেঘালয়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বললো, 'উহু ছাড়ুন লোকজন দেখবে।'
- 'এটা এমন একটা জায়গা যেখানে কেউ কাউকে দেখেনা। দেখলেও বলার কেউ নেই। তিস্তার পাড়ের গ্রাম এটা নয় মিশু।'
- 'তো? সেজন্য এভাবে.. ছাড়ুন ছাড়ুন।'
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে একহাত ধরে ঘুরিয়ে অন্যপাশ করিয়ে নিয়ে মিশুকে পিছন দিক থেকে ধরে সমুদ্রের দিকে তাকালো। মিশু মেঘালয়ের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। বিশাল ঢেউ এসে একবার দোলা দিয়ে গেলো দুজনকে। হাঁটু অব্দি ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। মেঘালয় মিশুর কানে কানে মুখটা এনে বললো, 'শুনবে না আমার কথা?'
- 'বলুন।'
মেঘালয় ফিসফিস করে বললো, 'উহু, কথা হবে ঠোঁটের ভেতরে ঘুমের আদরে।'
মিশু লাজুক স্বরে বললো, 'আপনি তীব্র রোমান্টিক একটা মানুষ সেটা কি জানেন?'
- 'হ্যা জানি। আর আমি প্রচন্ড জেদিও।'
- 'জানি, আমার চেয়ে ভালো কে জানে?'
- 'বাব্বাহ! দুদিনেই আমাকে অনেক জেনে গেছো দেখছি।'
- 'হুম, এই মুহুর্তে আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি জানি।'
- 'তাই! মিশু দেখো চাঁদটাকে সমুদ্রের জলে কত সুন্দর দেখাচ্ছে?'
মিশু জলের দিকে তাকালো। বালির উপরে মৃদু পানির মাঝে চাঁদটাকে দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। সমুদ্র গর্জন করে তীরে ভেসে আসছে। মেঘালয় মিশুকে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। বিশাল ঢেউ এসে আরেকবার ভিজিয়ে দিলো দুজনকে! হিমশীতল জলের স্পর্শে গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। তবুও ভালো লাগছে, একই সাথে জোৎস্না স্নান ও সমুদ্র স্নান। সমুদ্রের জলে জোৎস্নার আলোয় ভিজে যাওয়া, এক অন্যরকম অনুভূতি।
YOU ARE READING
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Adventureমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...