79

1K 36 0
                                    

৭৯
কয়েকদিন পর
স্কলারশিপের চিঠি এসে গেছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ। দু'মাস আগে মিশু যেমনটা চেয়েছিলো ঠিক তেমনটাই হয়েছে। কিন্তু এই দু'মাসের মাঝে যে মেঘালয় জীবনে এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেবে সেটা অজানা ছিলো। এলোমেলো বলাটা অন্যায় হয়ে যাবে, সে তো জীবনে আলো হয়ে এসেছে। সেই আলো নিভিয়ে দিয়ে দূর পরবাসে চলে যাওয়াটা কতটা ন্যায়সঙ্গত হবে?

ভাবতে ভাবতে মনটা উদাস লাগছে। চারিদিক থেকে শূন্যতা গ্রাস করে ফেলছে মিশুকে। বসে থাকতে না পেরে ছুটে বসার ঘরে এলো। এ ঘরে পুরো দেয়ালের একদিকে বিশাল কাঁচ লাগানো। বাইরে মেঘের ঘনঘটা জমতে আরম্ভ করেছে। এমন ধূসর কালো মেঘের সাথে দমকা হাওয়া দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। বুকের ভেতর কেমন কেমন করতে শুরু করে। মাঝেমাঝে মনেহয় মেঘ - বৃষ্টির সাথে মনের একটা বিশেষ যোগসূত্র আছে। সবকিছু তোলপাড় হওয়ার মত একটা ধাক্কা লাগে, আবার নতুন নতুন প্রেমে পড়ার স্বাদ অনুভূত হয়।

মিশু জানালার কাঁচ ঘেষে বসে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। কলিংবেলের শব্দ ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না। ভীষণরকম উদাসীনতা ভর করলে যা হয়। পুরনো স্মৃতি মনে করতে ইচ্ছে করছে, আবার নতুন স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। আকাশের কালো মেঘের ভেলা আরো কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে।

মেঘালয় এসে পাশে দাঁড়ালো। গা থেকে কোট খুলতে খুলতে বললো, অনেক্ষণ থেকে বেল বাজাচ্ছি শুনতে পাওনি?

মিশু চমকে বললো, 'না তো। কখন এলেন?'
- 'এইমাত্র। তোমার মন খারাপ?'
- 'কারণ জানতে চাইবেন না। মন খারাপের কারণ বলাটা বিরক্তিকর।'
- 'বেশ। জানতে চাইলাম না। কিন্তু মন খারাপের স্থায়িত্ব কমানোর চেষ্টা করলে কি আমার পাপ হবে?'
- 'না। তবে সবসময় মন ভালো করার চেষ্টা না করাই ভালো। মাঝেমাঝে মন খারাপের দরকার আছে।'
- 'বেশ। এখন বিদ্যুৎ চমকাবে। ঘরে এসো।'
- 'মাঝেমাঝে বিদ্যুৎ চমকানো দেখতে ভালো লাগে।'
- 'মাঝেমাঝে কি আমাকে অসহ্য লাগে?'

মিশু এবার চোখ তুলে মেঘালয়ের দিকে তাকালো। একটা হাফ সিল্ক নীল রংয়ের শার্টের সাথে বেগুনি টাই পড়েছে মেঘালয়। সুদর্শন যুবকের মত লাগছে। দেখার পর নিমেষে মন ভালো হতে চাইলেও মিশু মুখ ভার করে বললো, 'এই মুহুর্তে অসহ্য লাগছে। আমার সামনে থেকে যান।'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now