৭৫
খাওয়াদাওয়ার পর কিছুক্ষণ আড্ডা ও বিয়ে বিদায় পর্ব চললো। মিশু কেঁদেকেটেই অস্থির। আজ থেকে পুরোপুরিভাবে ওকে অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে। আর আব্বু আম্মুর সাথে আগের মত খাওয়াদাওয়া, গল্প করা কোনোটাই হবে না। মিতুর গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমানো হবে না। বাসায় ঢোকার সময় আম্মু আম্মু বলে চেঁচানো হবে না। কি যে কষ্ট হচ্ছে!মেঘালয় পুরোটা সময় ওকে আগলে রাখার চেষ্টা করলো। আকাশ আহমেদ মিশু'র বাবার হাত ধরে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করলেন। গাড়িতে ওঠার পরও মন খারাপ করে বসে রইলো মিশু। মেঘালয় মিশু'র মাথাটা নিজের কাঁধের উপর নিয়ে বললো, 'ঘুমাও। সারারাত তো গল্প করেই কাটালে।'
- 'মিথ্যে কথা বলো কেন? শুধু গল্প করেছি? তুমি তো খালি দুষ্টুমি.. 'মেঘালয় ওর মুখ চেপে ধরে বললো, 'চুপ। এসব কেউ বলে? গাড়িতে ফ্রেন্ডরা আছে আমার। চুপ করে ঘুমাও। কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না।'
মিশু আর কথা বললো না। এমনিতেই খানিকক্ষণ আগে কেঁদেছে। এখন আবার মন খারাপ হচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে রইলো ও। মেঘালয়ের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণপর ঘুমিয়ে পড়লে নিজেই ঢলে পড়লো মেঘালয়ের বুকে। এসিটা বাড়িয়ে দিতে বলে মেঘ নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুম ভাঙার পর বাকি পথটা কয়েক বন্ধু মিলে হাসাহাসি করে কাটলো। ঢাকায় পৌঁছে রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলো সবাই। এরপর ক্লান্ত শরীরে বাসায় পৌঁছাতে এগারোটা বেজে গেলো। বাসায় পৌঁছেই প্রত্যেকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে গেলো। এদিকে মেঘালয়ের ঘরে ঢুকেই মিশু'র চোখ চড়কগাছ! এত সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে যে কিছুক্ষণ চোখের পলক আটকে যায়। আজকে আবার বাসর! ঘুম বলে কি আদৌ কিছু হবে না?
মেঘালয় দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো, 'চলো গোসল করে ঘুমাবো, অনেক টায়ার্ড লাগছে।'
- 'শিওর আপনি ঘুমাবেন?'মেঘালয় হেসে বললো, 'আগামী দুমাসের জন্য রাতের ঘুমটা বাদ দাও। সমস্ত ফ্যান্টাসিগুলোকে বাস্তবে পরিণত করার সময় এখনই।'
মিশু একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বাথরুমে চলে গেলো। গোসল শেষ করে এসে দেখলো মেঘালয় রুমে নেই। ও চুল মুছতে মুছতে বিছানার কাছে এগিয়ে আসতেই দেখলো বিছানার উপর চাঁদর থেকে সিলিং পর্যন্ত একটা সাদা কাপড় পড়া মানুষ। হাত দুটো ইয়া বড় বড়, আর মুখটা কি বিশ্রী দেখতে। ভয়েই একটা বিকট চিৎকার দিয়ে মেঝের উপর ঢলে পড়লো মিশু।
বাড়ির সবাই ছুটে এলো মেঘালয়ের রুমে। এসে দেখে মিশু মেঝেতে পড়ে আছে আর মেঘালয় পাশে বসে পানি ছিটাচ্ছে ওর মুখে। খানিকক্ষণ পর চোখ মেললো মিশু। চোখে মেলে মুখের উপর মেঘালয়কে দেখে চিৎকার করে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'ভূত! ভূত!'
- 'কোথায় ভূত?'মিশু বিছানার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। সবাই হা হয়ে দেখলো সেখানে ফুল ছাড়া কিছুই নেই। মেঘালয়কে সবাইকে চলে যেতে বললে চলে গেলো সবাই। মেঘালয় মিশুকে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে খাটের নিচ থেকে একটা বিশাল সাদা কাপড় বের করলো। মিশু আঁৎকে উঠে বললো, 'ও মাগো! এটা কি?'
হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। মিশু এতক্ষণে বুঝতে পারলো এটা মেঘালয়ের কান্ড। ও ক্ষেপে গিয়ে মেঘালয়ের চুল টেনে ধরে বললো, 'কি খারাপ লোক একটা।'
মেঘালয় হাসতে হাসতে মিশুকে বুকে টেনে চেপে ধরে বললো, 'একটু শয়তানি করলাম। বিশ্বাস করো, এখন তোমার ঘুম একেবারে পালিয়ে গেছে। নয়তো গোসল শেষ করে এসেই ঘুমিয়ে পড়তে।'
মিশু মেঘালয়কে মারতে মারতে বললো, 'এত দুষ্টু ক্যান আপনি? যান তো এখান থেকে।'
মেঘালয় মিশুকে সরিয়ে দিয়ে বললো, 'কোথায় যাবো? আমি বাইরে গেলে ভালো লাগবে?'
- 'না। আপনি কাছে থাকলেও জ্বালা, দূরে গেলেও জ্বালা।'
- 'মরণ..'বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। মিশু হাসবে নাকি রাগ করবে বুঝতে পারলো না। মেঘালয়ের হাসি দেখে ওর সব রাগ, ক্ষোভ হাওয়াই মিঠাইয়ের মত উড়ে উড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
ŞİMDİ OKUDUĞUN
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Maceraমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...